রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

এবি ব্যাংক ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা!

| প্রকাশিতঃ ১৬ নভেম্বর ২০১৬ | ২:০৯ অপরাহ্ন

ab-bank-logoশরীফুল রুকন: গত আট মাসে চট্টগ্রামে কর্মরত তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে পদত্যাগে ‘বাধ্য’ করেছে এবি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গত এক বছরে ‘ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে’ পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে আরো চারজনকে। এদের মধ্যে রয়েছেন- সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, সহকারি ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপক পদবীর কর্মকর্তা; যারা নগরীর বিভিন্ন শাখায় কর্মরত ছিলেন। এ অবস্থায় ব্যাংকটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরাজ করছে ছাঁটাই আতঙ্ক।

এবি ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ শাখার একজন এভিপি, একজন এসভিপি, পাহাড়তলি শাখার ম্যানেজার, সিডিএ শাখা দুই কর্মকর্তাসহ সাতজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করানো হয়। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এসব জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা এম এ আব্দুল্লাহর যোগদানের পর থেকেই ‘ছাঁটাই’ চলছে। এর আগে ২০১৪ সালে ইউসিসিবিএল ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগে কর্মরত ছিলেন আব্দুল্লাহ; সে সময়ে প্রায় ১০০ জনকে পদত্যাগে বাধ্য করেন তিনি। এতে ইউসিবিএলের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ, অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে।

সেসময় বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা জারি করে যে, শুধুমাত্র অযোগ্যতার কারণ দেখিয়ে কোন ব্যাংক কর্মী ছাঁটাই করতে পারবে না। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তাদের কাজের মান বা দক্ষতা বাড়াতে হবে। ওই স্থানে নতুন কর্মী নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনার পরও ‘গোল্ডেন হ্যান্ড শেক’ নামের ঘোষণা দিয়ে আরো প্রায় ১০০ জনকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করে ইউসিবিএল। সেসময় ‘পদত্যাগকারী’ কর্মকর্তাদের জানানো হয়- তাদের পরিবারের সদস্যরা ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।

এদিকে ২০১৫ সালে এবি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন ইউসিবিএলের সেই মোঃ আবু আব্দুল্লাহ। অভিযোগ রয়েছে, যোগদানের পর থেকেই ব্যাংকের কর্মী ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নেন তিনি। একদিকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের অযোগ্য আখ্যা দিয়ে বাধ্যতামূলক পদত্যাগ করানো হচ্ছে। অন্যদিকে অন্য ব্যাংক থেকে নিজের পছন্দের কর্মকর্তাদের অধিকতর সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নিয়োগ দিচ্ছেন মোঃ আবু আব্দুল্লাহ।

যা বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা নির্দেশনার পরিপন্থী বলছেন- ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।

কোন কৌশলে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে- তার বিবরণ পাওয়া গেছে এবি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। এ বিষয়ে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন- যে কর্মকর্তাকে টার্গেট করা হবে; তাকে ফোন দিয়ে বলা হয়, পরের দিন প্রধান কার্যালয়ে দেখা করতে। পরদিন প্রধান কার্যালয়ে গেলে বলা হয়, ব্যাংকে আপনার পারফরমেন্স ভাল নয়। আপনাকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় আমরা আপনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করবো। তখন আপনি ইচ্ছে করলেও অন্য ব্যাংকে চাকরি করতে পারবেন না।

পদত্যাগে বাধ্য করার এ প্রক্রিয়ায় তিন কৌশল ব্যবহার কা হচ্ছে। প্রথমত- আগে থেকে নাম জানা যাবে না; যেদিন ফোন করা হবে, তার পরদিনই দেখা করবে হবে। দ্বিতীয়ত- কেন প্রধান কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে- তা বলা হয় না। তৃতীয়ত- ভয় দেখিয়ে খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই পদত্যাগ পর্ব শেষ করা হচ্ছে।

ব্যাংকটির কর্মকর্তারা বলছেন- পদত্যাগে বাধ্য করার এ কৌশলে পরাস্ত হয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে সাক্ষর করে দেন আগে থেকে তৈরী করে রাখা পদত্যাগ পত্রে। এভাবে প্রতিটি কাজ করা হচ্ছে অতি গোপনে; একজন করে ডেকে নিয়ে। যাতে সবাই সংগঠিত হতে না পারে।

জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সদ্য বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান জোয়ার্দ্দার একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আপনার কাছ থেকে এইমাত্র অবগত হলাম। কিন্তু আমাদের নিয়ম অনুযায়ী এ বিষয়ে আমি গণমাধ্যমের কাছে কোন মন্তব্য করতে পারছি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহার সাথে এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপন্থী কোন কর্মকান্ড কোন ব্যাংক করতে পারে না। এছাড়া কর্মকর্তাদের চাকরি প্রসঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কিছু নিয়মনীতিও আছে। যদি এবি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়, সেক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আমাদের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। এক্ষেত্রে অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমরা ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানার জন্য এবি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা এম এ আব্দুল্লাহর ব্যবহার করা বাংলালিংক নম্বরে বার বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এমনকি এ বিষয়টি উল্লেখ করে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করে এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।