রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজার মন্দা

| প্রকাশিতঃ ১৬ নভেম্বর ২০১৬ | ১২:০৪ অপরাহ্ন

goldমূল্যবান ধাতুর আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রতি নিম্নমুখী হয়ে উঠেছে স্বর্ণের দাম। সাপ্তাহিক বাজার শুরুর দিনেই পণ্যটির দাম নেমে এসেছে পাঁচ মাসে সর্বনিম্নে। পণ্যটির বাজারে এ দুরবস্থার জন্য এত দিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়কে দায়ী করে আসছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বিনিয়োগ বাণিজ্য-সংশ্লিষ্ট মাধ্যম দি অরোরা রিপোর্টের বিশেষজ্ঞ নিগম অরোরা বলছেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্য অনুযায়ী, স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজারে সাম্প্রতিক ধসের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৫০০ ও ১ হাজার রুপির নোট বাতিলের আকস্মিক ঘোষণা।

দি অরোরা রিপোর্ট পরিচালিত গবেষণার একটি বড় অংশজুড়ে থাকে স্বর্ণ ও রুপার বাজারগতি। অ্যালগরিদমের ভিত্তিতে মূল্যবান ধাতুর বাজারগতির বিশ্লেষণের পাশাপাশি উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর বাজারগুলোও এ গবেষণার বিবেচ্য বিষয়।

এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনায় স্বর্ণের মূল্য প্রতি আউন্স ১ হাজার ৩৩৯ ডলার ছাড়ানোর পূর্বাভাস দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। জুলাইয়ের শেষ দিকে ডাচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এবিএন অ্যামরোর মূল্যবান ধাতুর বাজার বিশেষজ্ঞ জর্জেট বোয়েলের এক পূর্বাভাসে বলা হয়, অদূর ভবিষ্যতে স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়াতে পারে প্রতি আউন্স ১ হাজার ৮৫০ ডলারে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছেও বিষয়টি বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন ঘনিয়ে আসতে থাকলে সংশ্লিষ্টরাও বেশ নিশ্চিত হয়ে পড়েন— ট্রাম্পের জয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বর্ণের দাম বাড়তে যাচ্ছে নাটকীয়ভাবে। কিন্তু তাদের সে ভবিষ্যদ্বাণীতে জল ঢেলে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদির ঘোষণা।

নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি আকস্মিকভাবেই ভারতে ৫০০ ও ১ হাজার রুপির নোটগুলোকে বাতিল ঘোষণা করেন। প্রচলিত থাকা অবস্থায় দেশটির মোট মুদ্রাপ্রবাহে নোট দুটির অবদান ছিল ২০ শতাংশ। এছাড়া মোট মুদ্রামানের ৮০ শতাংশই বহন করত অচল হয়ে পড়া ৫০০ ও ১ হাজার রুপির নোট।

মোদির এ ঘোষণায় স্বর্ণের বাজারে বিক্রয়চাপ বৃদ্ধি তথা মূল্যহ্রাস শুরুর বিষয়টিকে বুঝতে হলে ভারতের কালোবাজারি অর্থনীতিকে বোঝা অত্যন্ত জরুরি। দেশটির মোট অর্থনীতিতে আন্ডারগ্রাউন্ড অর্থনীতির (কালোবাজারি ও চোরাচালানসহ অবৈধ আর্থিক কার্যকলাপ) অবদান ২০-২৫ শতাংশ, যাকে মাত্রাতিরিক্তই বলা চলে।

৫০ বছর ধরে কালো টাকা সাদা করার একটি প্রচলিত পন্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বর্ণের ক্রয় বৃদ্ধি। এসব স্বর্ণ ক্রয়ের জন্য সাধারণত বড় নোটই ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে অচল হয়ে পড়েছে স্বর্ণ কেনায় ব্যবহূত এসব বড় বড় নোট। বাজার থেকে ক্রয়ের আসল মাধ্যমই উচ্ছেদ হয়ে পড়ায় স্বর্ণের চাহিদায় ধস নেমেছে। এ কারণে ট্রাম্পের জয়ে স্বর্ণবাজারে ক্রয়চাপ বৃদ্ধি তথা দামের ঊর্ধ্বগতির সম্ভাবনা থাকলেও তা উবে গেছে মোদির পদক্ষেপে। ঊর্ধ্বগতির বদলে ধসের মুখে নেমে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক স্বর্ণবাজার। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মূল্যবান ধাতুর বাজারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ ও ১ হাজার রুপির বিষয়ে মোদির পরবর্তী পদক্ষেপ।

গত সপ্তাহে স্বর্ণের মোট দরপতনের হার দাঁড়ায় ৬ দশমিক ২ শতাংশ, সাপ্তাহিক দরপতনের হার হিসেবে যা তিন বছরে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৩ সালের ২১ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহে পণ্যটির মোট দরপতনের হার নেমে এসেছিল ৬ দশমিক ৯ শতাংশে।

ভারতের মুদ্রা ব্যবস্থায় প্রচলিত বৃহত্তম দুটি নোট অচল হয়ে পড়ার পাশাপাশি মূল্যবান ধাতুর বাজারদরে আরো চাপ সৃষ্টি করে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রে পুঁজিবাজারের চাঙ্গাভাব ও ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি।