বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১

ভারত-জাপান পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর

প্রকাশিতঃ ১৩ নভেম্বর ২০১৬ | ৯:২৬ পূর্বাহ্ন

image-34335চীনকে মোকাবেলা করতে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎশক্তি গড়তে ভারতের সাথে পরমাণু চুক্তি করেছে জাপান। শুক্রবার সন্ধ্যায় দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও তা নিয়ে সমালোচনাও দেখা গেছে বিশ্লেষকদের কণ্ঠে। পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রকরণ প্রকল্প বা এনপিটিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে জাপানই প্রথম পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে এমন দেশের সাথে চুক্তিতে গেল।

চুক্তি স্বাক্ষর শেষে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেন, পরমাণু চুক্তি হয়েছে কেবল মানব উন্নয়নে বা বেসামরিক কাজের জন্য। পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না তা এই চুক্তির আলোচ্য বিষয়। ভারত জাপানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রিন এনার্জি নিয়ন্ত্রন করবে। আন্তর্জাতিক মহলের যেকোন প্রশ্ন রুখতে ২০০৮ সালের পরমাণু চুক্তির আইন বলবৎ থাকবে।

জাপান এমন এক সময় পরমাণু চুক্তি করলো যখন দক্ষিণ সাগরে চীনের নৌ-হুমকি জোরালো হচ্ছিল। সরকারের শীর্ষমহল মনে করছে, চীনের অপ্রত্যাশিত মেরিটাইম হুমকি রুখতে ভারত বড় ধরনের শক্তি হিসেবে জাপানের পাশে থাকবে। চুক্তির ফলে জাপান ভারতে পরমাণু প্রযুক্তি রপ্তানি, পরমাণু কেন্দ্র তৈরির জন্য চুল্লি, জ্বালানিও রপ্তানি করতে পারবে।

ভারতের চুক্তিতে সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করে আসা বিকাশ স্বরূপ এক টুইটবার্তায় আশা প্রকাশ করে বলেন, পরিচ্ছন্ন এবং সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য এক অনন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হল ভারত ও জাপানের মধ্যে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রকরণ আইনের অধীনে পরমাণু শক্তি কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদন ও গবেষণা কাজে ব্যবহার করতে পারতো। ২০১১ সালে ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর বিভিন্নভাবে জাপান সরকারকে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়।

ভারত পরমাণু অস্ত্র অপসারণ চুক্তির মধ্যে না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্েযর মধ্েয চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল যে এই পাঁচটি দেশ পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে না। কিন্তু ভারত পরমাণু শক্তি ব্যবহার করলেও তা কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এনপিটি চুক্তিতে ভারত স্বাক্ষর না করলেও ভারত দুই দিক থেকেই সুবিধা পাবেন বলে অনেকেই মনে করছে। জাপানে সফরত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টোকিওতে পৃথক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক চুক্তি। আমরা পরমাণু শক্তি কেবল শান্তির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবো। কখনোই বিশ্ব আবার কোন হিরোশিমা দেখুক তা আমরা চাই না।

তিনি আরো বলেন, ভারতে প্রচুর সুযোগ রয়েছে। আমরা দেশকে মুক্ত অর্থনীতিতে পরিণত করতে চাই। আমরা চাই ভারতে জাপানের বিনিয়োগ বাড়ুক, তার জন্য যা যা সুবিধা দরকার, তা দিতে আমরা প্রস্তুত। মনে রাখবেন, ভারত ক্রমশ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের আর্থিক নীতির জন্য।

জাপানের এক পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক নাকাতা ইয়ানাশি বলেন, ভারত আগে থেকে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে আসছে। তারা যদি জাপান থেকে নেয়া পরমাণু সংক্রান্ত সুবিধা অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করে তাহলে তা বিশ্বের শান্তি রক্ষায় হুমকি স্বরুপ। চীনকে দমাতে কিংবা চীনের প্রতি এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করার জন্য এমন চুক্তি হতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।

কাসুৎসুকে মিয়াকাওয়া নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া জানান, আমরা শান্তি চাই। পরমাণু চুল্লি যে হুমকির কারণ হতে পারে তা জাপান ২০১১ সালে সুনামি বিপর্যয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছে। তবে ভারতের সাথে যে চুক্তি হলো, তা কতটা সফল হবে তা নির্ভর করবে ভারত অসামরিক উদ্দেশ্যে সেটা ব্যবহার করলে। কোন দেশের প্রতি আক্রোশ দেখানোর জন্য চুক্তি হওয়া ঠিক নয় বলেও তিনি মনে করেন। গেল বছর জাপান সরকার তাদের সৈন্যদের বিদেশে যুদ্ধে অংশগ্রহণের ‘নিরাপত্তা বিল পাশ’ করেছে। ভারত আর জাপানের মধ্যে বিনিয়োগ, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নির্মাণশিল্পে আরও ১২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।