চট্টগ্রাম: নিয়ম-শৃঙ্খলা অমান্যকারী দলের নেতাকর্মীদের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শনিবার নগরীর লালদিঘি ময়দানে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে স্থান পাওয়া নেতাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ঠিক হয়ে যান, অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। কাউকে ছাড়া হবে না। শেখ হাসিনার অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দল করলে দলের নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। যারা মানবে না তাদের দলে থাকার কোন অধিকার নেই। গুটিকয়েকের জন্য গোটা দলের বদনাম হতে পারে না।
এর আগে অনুষ্ঠানের মাঝ পথে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে হঠাৎ চেয়ার ছোঁড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বক্তব্য রাখার এক পর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে উপস্থিত নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাকে খুশি করতে হবে না। আমাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুশি করেছেন । এখন আমি জনগনকে খুশি করবো। চট্টগ্রামে ব্যানারে-বিলবোর্ডে আমার ছবি দেখতে আসিনি। আমি এই চট্টগ্রামে আমার নামে তোরণের শোভা দেখতে আসিনি। কারণ আমি জানি ফুলের মালা শুকিয়ে যাবে, আমি জানি এই ফুল শুকিয়ে যাবে। আমি জানি কাগজের ফুল ছিঁড়ে যাবে। আমি জানি পোস্টারের ছবি ছিঁড়ে যাবে। আমি জানি তোরণের ছবি ভেঙে যাবে। আমি জানি পাথরের ছবি ক্ষয়ে যাবে। কিন্তু হৃদয়ের কথা রয়ে যাবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার রাজনৈতিক পিতা বঙ্গবন্ধু জনগণের হৃদয়ে নাম লিখেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জনগণের হৃদয়ে নাম লিখেছেন। এই নাম কোনদিন মুছে যাবে না। আমি বাংলার অজগাঁ, তৃণমূল থেকে বেড়ে উঠা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। আমি শেখ হাসিনার হাতে গড়া দলের কর্মী। আমি আপনাদের কাছে আজ নেতাগিরি করতে আসিনি। আমার নামে স্লোগান বন্ধ করুন।
অনুপ্রবেশকারীদের দল ছেড়ে যাবার আহ্বান জানিয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বসন্তের কোকিল কারা কারা দলে অনুপ্রবেশ করেছেন, আপনাদের বলছি- আওয়ামী লীগে বসন্তের কোকিল আর মৌসুমি পাখির কোন স্থান নেই। চলে যান, আমার মৌসুমি পাখির দরকার নেই। শেখ হাসিনার বসন্তের কোকিলের দরকার নেই।
আওয়ামীলীগকে দেওলিয়া বলায় বিএনপির সমলোচনা করে আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক বলেন, বিএনপি নিজেই দেওলিয়া বলে একবার ভারত আর একবার যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে থাকে। জনগনের উপর তাদের কোন ভরসা নেই।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মঞ্চে থাকা চট্টগ্রামের নেতাদের দাঁড়িয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার শপথও করিয়েছেন আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, মঞ্চের দিকে তাকিয়ে দেখুন। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ, অভিন্ন। আপনারা ওখান থেকে টুকটাক এটা সেটা করবেন, ওইদিন চলে গেছে। এটা আর করতে দেয়া হবেনা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, নেতাদের খুশি করে লাভ নেই। জনগণকে খুশি করুন। জনগণের কাছে যান। যদি অপকর্ম কিছু করে থাকেন, ক্ষমা চান। জনগণের কাছে গিয়ে ক্ষমা চান। জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে কোন লজ্জা নেই। ঈদের সময় রাস্তাঘাটে দুর্ভোগের জন্য জনগণের কাছে আমি ক্ষমা চাই। এতে কি আমি ছোট হয়। জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে কি লজ্জা আছে?’
তিনি বলেন, চট্টগ্রামবাসীকে একটি সুখবর দিতে চাই; ২০১৯ সালের মধ্যে চট্টগ্রামের ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পারে। কর্ণফুলীর টানেল এখন স্বপ্ন নয়, কাজ শুরু হয়েছে। ওয়ান সিটি টু টাউনের শহর হবে চট্টগ্রাম। সীতাকুন্ড-কক্সবাজারে মেরিন ঘাট হচ্ছে। চট্টগ্রামে বিমান বন্দর থেকে বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত আরেকটি উড়াল সেতু হবে। আগামী বছর ঢাকা-চট্টগ্রাম ২২৫ কিলোমিটারের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু করা হবে।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সর্ব শ্রেষ্ট দল। বাংলাদেশের সব অর্জন এই দলের মাধ্যমে হয়েছে। আর বিএনপি হচ্ছে একটি অভিশপ্ত দল।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম থেকে উপদেষ্টামন্ডলীতে স্থান পাওয়া সাবেক সাংসদ ইছহাক মিয়া। উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা কমিটির সদস্য শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন ও প্রণব কুমার বড়–য়া এবং সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাঙামাটির সাবেক সাংসদ দীপংকর তালুকদার বক্তব্য রাখেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও ডা. দীপু মণি, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল আলম চৌধুরী ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এবং সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন।
সমাবেশ পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম এবং দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
এর আগে শনিবার বিকেল থেকে নগরীর লালদীঘি মাঠে জড়ো হতে থাকে মহানগরীসহ চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার নেতাকর্মীরা। সভা শুরুর আগেই বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের উপস্থিতিতে লালদীঘির মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হতে দেখা গেছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়ায় চট্টগ্রামের নেতাদের নামে স্লোগান দিয়ে সমাবেশস্থল মুখরিত করে তোলে তাদের অনুসারীরা।