টিমোথি এগান: যুক্তরাষ্ট্রে ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে হাইস্কুল একসঙ্গে পড়া আমার অনেক বন্ধু ও বহু ভাইবোনসহ প্রায় ৫ কোটি মার্কিন নাগরিক এমন একজন প্রার্থীকে ভোট দিতে যাচ্ছেন, যিনি তাদের নিয়ে খুব কম চিন্তা করেন।
যদি আপনি প্রতিটি ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘৃণা করেন, যিনি প্রত্যেক পদে মানুষকে অসম্মান করেছেন এবং মানবিকতা কম দেখেন, তবে তার জবাব তিনি নিজেই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জীবনের প্রতিটি পদে আপনি সম্মানিত হবেন না, কারণ অধিকাংশ মানুষই শ্রদ্ধার যোগ্য হয় না। বন্ধুত্বহীন বিশ্বে ভালোবাসাহীন মানুষের ধর্মবিশ্বাস এটি।
ট্রাম্প বারবারই বলেছেন, তিনি কোন নায়ক নন, লিংকন, ম্যান্ডেলা, জ্যাকি রবিনসন অথবা ক্যাপ্টেন চেসলি সুলেনবার্গারও নন। আপনি যদি ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টান হয়ে থাকেন, তবে আপনার সম্পর্কে সবকিছু বিরুদ্ধে গেলেও অনেকেই আপনাকে বিশ্বাস করবে।
আমার এ ধরনের অন্ধবিশ্বাসের একজন বোন রয়েছে। তার ধর্মগুরু তাকে বলেছেন, ‘ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ঈশ্বরের পরিকল্পনার অংশ’। আমি নিশ্চিত নই, এর রহস্য এখনও উদঘাটন হয়েছে কিনা। আমি আমার বোন ও সর্ববিশ্বাসী মানুষকে ট্রাম্প ‘টেন কমান্ডমেন্ট’ (বাইবেলের ১০ মূলনীতি) অনুসারে দিনাতিপাত করছে কিনা তা দেখতে বলেছি।
ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবে এসব মূলনীতির ৮টি ভঙ্গ করেছেন। মার্কিন নির্বাচনের ইতিহাসে মিথ্যার বড় স্কোর গড়েছেন তিনি। যৌনতা ও অন্য নারীদের প্রতি লালায়িত হওয়া এবং বিবাহিত নারীদের নিয়ে আক্রমণাত্মক কথা বলেছেন ট্রাম্প। সত্যই, তিনি কাউকে হত্যার প্রতিশ্রুতি দেননি, তবে তিনি ফিফ্থ এভিনিউয়ের সামনে কাউকে গুলি করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। ট্রাম্প বলেছিলেন, আমি আমার কোনো সমর্থককে হারাতে চাই না।
যদি আপনি শ্বেতাঙ্গ শ্রেণীর সদস্য হন, অথচ কম শিক্ষিত, তবে ট্রাম্প আপনাকে নামেমাত্র ভালোবাসবে। দেশের ধনিক শ্রেণী ও বাকি জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈসাদৃশ্য বিশাল। ফলে কলেজ শিক্ষিত শ্রমিক ও যে কখনও স্কুলের দরজায় যায়নি- তাদের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য।
গত বছরে ৬৫ বছরের কম বয়সী শ্রমিকদের মধ্যে ২০ শতাংশের অধিক পুরুষদের বেতনের ভিত্তিতে কোনো কাজ দেয়া হয়নি। ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধে তার কর ও অভিবাসী নীতি দেশের জন্য যন্ত্রণা বয়ে আনবে এবং তার দলের সমর্থকদের মধ্যে অর্থনৈতিক সমস্যায় থাকা নাগরিকরাও সুবিধা পাবে না। তার কর পরিকল্পনা ‘তেলা মাথায় তেল দেয়া’র মতো ধনীদের কল্যাণ বয়ে আনবে এবং দেশটিকে আরেকটি মন্দার দিকে ধাবিত করবে।
ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস দেয়া প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের পরিসংখ্যান অনুসারে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক নীতিতে আগামী ৫ বছরে ১ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে।
অভিবাসী নীতিতে আগে থেকেই সরব ছিলেন ট্রাম্প। তিনি বারবার বলে এসেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে অভিবাসীদের প্রবেশ আটকে দেবেন তিনি। কিন্তু গত ১০ বছরে বহু নাগরিক যুক্তরাষ্ট্র থেকে মেক্সিকোতে অভিবাসী হয়েছেন, তার বক্তব্যে এ কথার উল্লেখ করেননি ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রে ১ কোটি ১৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে- এ কথার উল্লেখ নেই ট্রাম্পের ভাষণে। তবে ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন অবকাঠামো খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছেন।
লেখক : নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক