চট্টগ্রাম: দল ও দেশের ভাবমূর্তি একযোগে তুলে ধরার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের প্রচার সেল অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগ। এ ক্ষেত্রে যোগ্য লোককে দায়িত্ব না দিলে দল ও দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির সঠিক বার্তা দেশবাসী বা বর্হিবিশ্বের কাছে নাও পৌঁছতে পারে। এই বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের সদ্য কাউন্সিলে দলের এই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে চট্টগ্রামের দুই মেধাবী সন্তান ড. হাছান মাহমুদ ও আমিনুল ইসলাম আমিনকে, প্রচার ও উপ প্রচার সম্পাদক হিসেবে।
রাজনীতি সচেতনদের মতে, আসছে নির্বাচনে দেশের জনগণকে সঠিক তথ্য সময়মতো পৌঁছানোর গুরুদায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন কার্যত আওয়ামী লীগের প্রচার বিভাগকেই করতে হবে। যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে করা হচ্ছে। আর সেই চ্যালেঞ্জটি মোকাবেলার দায়িত্ব আবারও হাছান মাহমুদের কাঁধেই চাপলো।
বোদ্ধাজনদের মতে, চ্যালেঞ্জ যিনি নিতে জানেন, চ্যালেঞ্জ নেওয়াই যার নিত্য কাজ, তিনিই তো চ্যালেঞ্জ নেবেন, চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব পাবেন। বলাবাহুল্য, ২০১৪ সালের নির্বাচন ও তৎপরবর্তী সহিংস পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি দেশের জনগণকে অবহিতকরণে ড. হাছান মাহমুদ দলের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ সময় প্রচারমাধ্যমকে সময়মতো সব অনুষ্ঠান জানানো ও কর্মসূচি জনগণকে অবহিতকরণে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এমনকি ওয়ান-ইলেভেনের সময় যখন অনেকেই রাজনীতির মাঠে ছিলেন না তখন তিনি সাহসিকতার সঙ্গে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার পাশে দৃঢ় অবস্থান নেন।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল মহলের মতে, এর আগে আর কোনো প্রচার সম্পাদক এভাবে দলের প্রচার করতে পারেননি। আর এ কারণেই দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে ড. হাছান মাহমুদকে প্রাথমিকভাবে চিন্তা-ভাবনা করলেও শেষ পর্যন্ত পছন্দনীয় বিকল্প না পাওয়ায় সেই চিন্তা বাদ দিতে হয়েছে। তাই দল ও সরকারের সাফল্যগাথা তাৎক্ষণিকভাবে বুদ্ধিদীপ্ততার সঙ্গে দেশে এবং দেশের বাইরে তুলে ধরতে শেখ হাসিনা চূড়ান্ত আস্থা রাখলেন চট্টগ্রামের সন্তান ড. হাছান মাহমুদের উপর। আর তার সহযোগী করে দিলেন চট্টগ্রামের আরেক সন্তান আমিনুল ইসলাম আমিনকে।
দলগতভাবে আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলছে সেখানে দেশের অভ্যন্তরে, আন্তর্জাতিকভাবে দল ও দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চট্টগ্রামের এই দুই সন্তানের উপর দলীয় প্রধানের আস্থা ও নির্ভরতা চারটিখানি ব্যাপার নয়। এর মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামের মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকদের মতে, চার চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামী লীগের প্রচার কাজে চাইলেই যে কাউকে নিযুক্ত করা যায় না। সময়ের প্রেক্ষাপটে অন্তত এই পদটি নিয়ে দয়া-দাক্ষিণ্যের কোনো সুযোগ নেই। এখানে যোগ্যতম ব্যক্তিদেরই বসাতে হবে। তাই হাছান-আমিনের এই পদায়ন নিঃসন্দেহে তাদের যোগ্যতম কীর্তিরই ফল। আর এই র্কীতির গর্বিত অংশীদার পুরো চট্টগ্রামবাসী।
চট্টগ্রামবাসীর মতে, যুগে যুগে, সময়ের প্রয়োজনে, সঙ্কটে বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রামের সন্তানেরাই গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবে মহানায়কের ভূমিকা পালন করে চট্টগ্রামের ‘দাসবালক’ জামরের ঠাঁই হয়েছিল প্যারিসের লুভর মিউজিয়ামে ‘চাইল্ড ফর্ম চিটাগাং’ শিরোনামে। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ব্রিটিশ অস্ত্রাগার লুণ্ঠনসহ চট্টগ্রামকে চারদিনের জন্য ব্রিটিশমুক্ত করেছিলেন যেই সাহসী তরুণ, সেই মাস্টারদা সূর্যসেনও চট্টগ্রামের সন্তান।
এভাবে ছয়দফা থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলনের তীর্থভূমি হয়েছে চট্টগ্রাম, চট্টগ্রামের সন্তান। এমন গৌরবগাথায় অভিভূত মহাত্মা গান্ধী একসময় বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, ‘চিটাগাং টু দ্যা ফোর- চট্টগ্রাম সর্বাগ্রে। আরেক জায়গায় বলেছেন, হোয়াট চিটাগাং থিঙ্কস টু ডে, দ্যা রেস্ট অব হোল বাংলাদেশ থিঙ্কস টুমরো।
তাই শেখ হাসিনার রূপকল্প-২১ আর ৪১ বাস্তবায়নের যে দায়িত্ব চট্টগ্রামের দুই সন্তানের প্রতি বর্তিয়েছে, সে দায়িত্ব ইতিহাসের পাতায় তারা অম্লান, অক্ষয় করে রাখবেন তাদের সর্বোচ্চ ঢেলে এই প্রত্যাশা চট্টগ্রামবাসীর।