সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ায় দশ বছরের চাকরি এক নোটিসেই শেষ!

প্রকাশিতঃ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৭:০৭ অপরাহ্ন


চট্টগ্রাম : বকেয়া বেতন, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে পাটকল শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ায় এক শ্রমিককে আমিন জুট মিল কর্তৃপক্ষ চাকরিচ্যুত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগী কামাল উদ্দীন আমিন জুট মিলের তাঁত বিভাগে হেলপার পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি জুট মিলের শ্রমিক হাজিরা কর্মচারী সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক।

গত ১৭ আগস্ট আমিন জুট মিলের শ্রম দপ্তর থেকে ইস্যুকৃত এক আদেশে ২০০৯ সালের ১ আগস্ট নিয়োগ পাওয়া কামালের বদলি কার্ড স্থগিত করা হয়। উক্ত আদেশে উল্লেখ করা হয়, মিল মালিকানাধীন জায়গায় ঘর সংস্কার করার অপরাধে কামালের বদলি কার্ড স্থগিত করা হয়েছে।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে কামাল উদ্দীন একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমার নামে বরাদ্দকৃত ঘরের টিন বদল করেছি শুধু। অন্য কোনো অবকাঠামোগত সংস্কার করিনি। ঘরের নিচে মাটি, উপরে টিন, পাশে বেড়া।

তিনি বলেন, অহরহ শ্রমিক তাদের নামে বরাদ্দকৃত ঘর সংস্কার করেছেন, জায়গার দখল করেছেন। কেউ কেউ ভবনও তৈরি করেছেন। আমার আশপাশে ভবন পর্যন্ত করা হয়েছে। আর আমি নতুন করে জায়গাও দখল করিনি। টিনশেডের একটা ঘর শুধু সংস্কার করেছি। সাধারণ একটা বিষয় তুলেই আমাকে এত বড় শাস্তি দেওয়া হল।

কামাল বলেন, প্রকৃত সত্য হচ্ছে মজুরি নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় আন্দোলন-সংগ্রাম করার সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছিলাম। এ কারণে ঘর সংস্কারের ধোঁয়া তুলে আক্রোশের বশে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

অভিযোগের ব্যাপারে কাউকে দিয়ে তদন্ত করানো হয়নি, আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করেছেন কামাল উদ্দিন।

এদিকে কামালের বদলি কার্ড বাতিলাদেশ স্থগিত করতে গত ১৮ আগস্ট শ্রমিক হাজিরা কর্মচারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আমিন জুট মিলের উপ মহা-ব্যবস্থাপক বরাবর একটি চিঠি দেওয়া হয়। উক্ত চিঠি পেয়ে আমিন জুট মিলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শ্রমিক হাজিরা কর্মচারী সংগঠনের একজন কর্মকর্তা একুশে পত্রিকাকে বলেন, অতীতে অনেক আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু কোনো সময় এবারের মত প্রচার হয়নি। এটা কে করেছে, কার হাত রয়েছে- এটা নিয়ে মিলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান চালিয়ে কামালকে সন্দেহ করে। এরপর তাকে চাকরি থেকে বের করে দেয়। তার চাকরি আর দেবে না বলে মিলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে আমিন জুট মিলের উপ-প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন একুশে পত্রিকাকে বলেন, কামালের অভিযোগ সঠিক নয়। আন্দোলন করা শ্রমিকদের অধিকার। শ্রম আইন অনুযায়ী তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতেই পারে। তাদের আন্দোলনে আমাদের নৈতিক সমর্থন ছিল। তাদের যৌক্তিক দাবির সাথে আমরা সবসময় একমত থাকি। আন্দোলনের সময় আমরাও তো সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছি।

অনেকে জমি দখল, ভবন তৈরি, সংস্কার করলেও শুধু কামালের ব্যাপারে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, মোবাইলে এত কথা বলা যাবে না। অফিসে এসে সামনাসামনি কথা বলতে পারেন। মিল কর্তৃপক্ষ এত অমানবিক না, একজন লোককে বিনা অপরাধে শাস্তি দেবে না। তার সাথে কি আমাদের ব্যক্তিগত শক্রুতা আছে? কারো সাথেই তো আমাদের শত্রুতা নেই।

একুশে/এসআর/এটি