চট্টগ্রাম: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের চাওয়া সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ রচনা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বাংলাদেশ-ভারত নজরুল সম্মেলন ২০১৯-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রামস্থ সহকারী ভারতীয় হাই কমিশনের সহযোগিতায় নজরুল একাডেমি চট্টগ্রাম- এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি ছিলেন, দ্রোহের কবি ছিলেন। সেনাবাহিনীতে কাজী নজরুলের যোগ দেওয়ার অন্যতম একটা কারণ ছিল, তিনি মনে করেছিলেন সেনাবাহিনীতে গিয়ে যদি প্রশিক্ষণ নেয়া যায় তাহলে সে প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে দেশকে ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে। সে কারণে তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন।
‘আমি সাহিত্যের মানুষ নই। আমি বিজ্ঞানের ছাত্র, পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র। তারপরও সাহিত্য নিয়ে আমার অনুরাগ আছে। কাজী নজরুলের কবিতার বিরাট অংশজুড়ে বিদ্রোহ, দেশের জন্য। তার এই কবিতায় ভারতবর্ষের মানুষ উদ্দীপ্ত হয়েছিল, অনুপ্রাণিত হয়েছিল ভারতবর্ষকে ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতা অর্জন করে তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাজী নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। কবি নজরুল লিখেছিলেন, মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও..। তিনি যখন মৃত্যুবরণ করেন, তার ইচ্ছা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশেই তাকে কবর দেওয়া হয়।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মৃত্যুবরণ করার সময় কাজী নজরুলের বাকশক্তি ছিল না, বোধশক্তি কতটুকু ছিল আমি জানি না। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে মৃত্যুবরণ করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাম্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য, একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রচনা করার জন্য কাজ করেছেন।
‘আমরা যখন স্বাধীনতা অর্জন করি তখন দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। আজকে দারিদ্রসীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে কম। আমাদের দেশ সাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বহুদুর এগিয়ে গেছে। গত ১০ বছরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান পৃথিবীতে এক নাম্বারে। মানব উন্নয়ন সূচক, সামাজিক উন্নয়ন সূচক সমস্ত সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বহুদুর এগিয়ে গেছি আমরা। অনেক সূচকে ভারতসহ অন্যান্য দেশকেও পেছনে ফেলে এসেছি। যেমন আমাদের দেশে গড়আয়ু ৭৩ বছর, ভারতে ৬৯ বছর, পাকিস্তানে ৬৭ বছর। আমি এ কথাগুলো বলছি, এ কারণে কাজী নজরুল সাম্য প্রতিষ্ঠা করার কথা বলে গেছেন। আর বঙ্গবন্ধু সাম্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলাদেশ রচনা করে গেছেন। আমরা এখন তাদের স্বপ্নের পথে হাঁটছি।’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের তরুণ সমাজকে আবিষ্ট করে রেখেছে। এটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই আসক্তি শুধু আমাদের দেশের যুবসমাজ নয়, অনেক দেশের যুবসমাজের মধ্যে আছে। ৬০, ৭০ ও ৮০’র দশকে দেশে অনেক সাংস্কৃতিক চর্চা হতো। সেটি কিন্তু অনেক কমে গেছে। যেখানে সাংস্কৃতিক চর্চা হয় সেখানে মননশীলতার ভালো বিকাশ হয়। সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্য দিয়ে তরুণ সমাজকে পরিশীলিত নাগরিক হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে পারি। একই সাথে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, মাদকাসক্তি থেকেও রক্ষা করতে পারি। এজন্য সাংস্কৃতিক চর্চার কোন বিকল্প নেই। ভাষা ও সংস্কৃতির দিক থেকে আমরা বাঙালিরা অনেক উপরে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. মুহিতুল আলম, নজরুল ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক কবি রেজা উদ্দিন স্ট্যালিন, বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক নিতাই কুমার ভট্টাচার্য।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করছেন বাংলাদেশ ও ভারতের নজরুল সংগীতের বরেণ্য শিল্পীগণ, যার মধ্যে আছেন বাংলাদেশের ফেরদৌস আরা এবং ভারতের শিল্পী মঞ্জুষা চক্রবর্তী ও তুহিন পাল।
নজরুল একাডেমি চট্টগ্রামের শিল্পীরাও অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করছেন।