রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

গ্রাহকের সাথে মোবাইল অপারেটর রবির প্রতারণা!

প্রকাশিতঃ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ১২:৩৬ অপরাহ্ন

robilogoচট্টগ্রাম : বেসরকারী মোবাইল অপারেটর রবির বিরুদ্ধে গ্রাহক প্রতারণা অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি রবির কারিগরি সমস্যার কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন গ্রাহকরাও। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

বিল নিয়ে রবির প্রতারণার অভিযোগ তুলে ধরে নিজের ফেসবুক পাতায় চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস বলেছেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা।

‘দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আমি একটেল, পরবর্তীতে রবি’র সাথে সম্পৃক্ত। আমার ০১৮১৯-৩৭৭৯০৭ নম্বরটি একটি পোস্ট পেইড নম্বর। বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ করছি, রবি কর্তৃপক্ষ আমার কাছ থেকে বাড়তি বিল আদায় করছে। বিষয়টি আমি ভালভাবে খেয়াল না করলেও সম্প্রতি বাড়তি বিল আদায়ের বিষয়টি আমার নজরে আসে।’

২০ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টার দিকে ফেসবুক পাতায় দেওয়া স্ট‌্যাটাসে হাসান ফেরদৌস লিখেন- ‘রবি প্রদত্ত ৬টি ম্যাসেজ: ম্যাসেজ-(১) ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ জানানো হয় আমার বকেয়া বিল ৬০০.৩৬টাকা। ম্যাসেজ-(২) ১৫ সেপ্টেম্বর’১৬ জানানো হয়, বকেয়া বিল ৬১৩.৪৭টাকা। এই দুইটি ম্যাসেজের প্রেক্ষিতে ১৮ সেপ্টেম্বর ’১৬ আমি বকেয়া বিলের বিপরীতে ৬০০/-টাকা পরিশোধ করি।(ম্যাসেজ-(৩)। ফলে আমার বকেয়া বিল থাকার কথা ১৩.৪৭টাকা। ১৯ সেপ্টেম্বর জানানো হয়, (ম্যাসেজ-(৪ ও ৫), আমার বকেয়া বিল ৬০০.৬ টাকা (?)’

একুশে টিভির বিশেষ প্রতিনিধি হাসান ফেরদৌস ফেসবুকে আরো লিখেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি রবির ১২৩ নাম্বারে গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে যোগাযোগ করি। গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা মোস্তাফিজুর রহমান আমাকে জানান আমার বকেয়া বিল হচ্ছে-৭৫৭.২৮/-টাকা (ম্যাসেজ-(৬)। বাড়তি বিল আদায়ে বিষয়ে আমি গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে অবিহত করলে আমাকে জানানো হয়, তাদের কিছুই করার নেই। সিস্টেমে যা আছে তাই জানানো হয়েছে। মাত্র একদিনের মাথায় কীভাবে এত বিপুল পরিমাণ বিল হলো তা জানানোর অনুরোধ জানাতে অনুরোধ জানালে গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে থাকা মোস্তাফিজুর রহমান আমাকে জানান, তাদের সিস্টেমে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু নেই, এ জন্যে অপেক্ষা করতে হবে অক্টোবরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত।

‘কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বিলের খাতওয়ারি যদি সিস্টেমে না থাকে তা হলে কীভাবে বিলের টাকা নির্ধারণ করা হল? এছাড়া ১৯ সেপ্টেম্বর (ম্যাসেজ-৪ ও ৫) আমাকে যে ম্যাসেজ পাঠানো হলে তাতে বকেয়া বিলের পরিমাণ ৬০০.৬ কীভাবে হয়। দশমিকের পরে দুই ঘর ব্যবহৃত হয়। এখানে কীভাবে এক ঘর ব্যবহার করে বিল নির্ধারণ করা হল? আবার সেবা কেন্দ্র থেকে ৭৫৭.২৮টাকা বকেয়া বিল বলে ম্যাসেজ পাঠানো হলো। গ্রাহক হিসাবে আমি কোন বিলটি সঠিক বলে ধরে নিবো। ৬০০.৬ টাকা নাকি ৭৫৭.২৮ টাকা?’

রবির প্রতি চরম অসন্তুষ্টি নিজের লেখায় ফুটিয়ে তোলেন এই সাংবাদিক নেতা।
screenshot_4বিল নিয়ে প্রতারণা অভিযোগ রবির বিরুদ্ধে এই প্রথম নয়; চ্যানেল ২৪ এর চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান কামাল পারভেজ গত ৫ সেপ্টেম্বর তার ফেইসবুক পাতায় একটি স্ট‌্যাটাস দেন।

বিল নিয়ে রবির প্রতারণা তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, ‘নম্বর পাল্টালেও একটেলের (এখন রবি) জন্মলগ্ন থেকেই আমি তাদের সংযোগ ব্যবহার করি। অপারেটরটির বিরুদ্ধে কত রকমের অভিযোগ কতজন করে। আমিও যে তাদের জোচ্চুরির শিকার হইনি তা নয়। কিন্তু এবারেরটা মাত্রাছাড়া। ’

screenshot_5‘যেমন, আমি তাদের নেট ব্যবহার করি। সেটার মেয়াদ শেষ হলে কখনোই জানতে চায়নি আমি রিনিউ করবো কিনা। ওরা নিজ দায়িত্বে আমার মান্থলি বিলের সাথে এডজাস্ট করে নেয়। গতরাত ১২টা ৮ মিনিটে তারা মেসেজ দিল আমার বিল ৬৩৪ টাকা। তার ৮ মিনিট পর বললো ৮০৯ টাকা। তার ২ মিনিট পর জানালো ৯১০ টাকা। মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে আমার বিল বেড়ে হয়ে গেল ২৭৯ টাকা! অথচ এই ১০ মিনিটে আমি অনলাইনে কেবল দুটি নিউজ পড়েছি। তাতেই ২৭৯ টাকা!! এই জোচ্চুরির বিচার কাকে দিব? তাদের দিতে গেলোতো একশ একটা কাহিনী শোনাবে। কোনো প্রতিকারের আশা দেখি না। এটা ডাকাতির চেয়েওতো বেশি। মোবাইল অপারেটরগুলোর এই ডাকাতি দেখার কি কেউ নেই?’

screenshot_3

‘এভাবে রবি কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি টেলিফোন অপারেটর রবির এ ধরনের কার্যক্রম গ্রাহকদের সাথে প্রতারণার সামিল।’

screenshot_6এদিকে রবির কারিগরি সমস্যায় পড়ে বিব্রত হওয়ার কথা তুলে ধরেছেন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের সাংবাদিক মাসুদ ফরহান অভি।

১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা ৭ মিনিটে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন- ‘রাতে রবি নম্বরের মোবাইলটার সুইচ অফ করে ঘুমাই। গতকাল ভোর চারটার দিকে আম্মু এসে ঘুম ভেঙে দিল। বললো, ‘তুই কি কল করেছিস ‍আমার মোবাইলে?’ আমি বললাম, ‘আমার মোবাইলতো বন্ধ’। ‍আম্মু মোবাইল এনে দেখালো। সত্যি সত্যি আমার রবি নম্বর থেকে চারবার কল গেছে ‍আম্মুর রবি নম্বরে। কিছুক্ষণ আগে Shariful Islam Rukon ভাইয়ের কল। তিনি কল দিয়ে বললেন, ‘জ্বি ভাই বলেন’। আমি বললাম, ‘কী বলতাম’। উনি বললেন, ‘আপনি কল দিয়েছেন। কেটে গেছে। তাই ভদ্রলোকের মতো কল ব্যাক করলাম।’ আমি বললাম, ‘আমি কল করিনি।’ উনি বললো, ‘কল না করলে যায় কীভাবে?’ রবি ‍এভাবে আমাদের বিরক্ত ও বিব্রত করে চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। তাদের কি প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধানের লোকের অভাব? নাকি লোকগুলোর দক্ষতার অভাব? মানুষকে বিব্রত করার অধিকার রবিকে কে দিয়েছে?

স্ট‌্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ‌্যমে সাংবাদিক মাসুদ ফরহান অভির বন্ধুদের নজরে আসে। একই সমস্যায় পড়ার কথা জানিয়ে সেখানে কমেন্ট করেছেন তার বন্ধু তালিকায় থাকা আরো অনেকেই।