সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

পাকিস্তানে হামলা করতে চায় ভারতীয় সেনা

প্রকাশিতঃ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ১১:১৭ অপরাহ্ন

army-indiaকাশ্মীরের উরিতে ব্রিগেড সদর দফতরে জঙ্গি হামলা চালিয়ে ১৭ সেনাকে হত্যার ঘটনায় সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে কড়া জবাব দিতে চাইছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।

এরই মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে ৭৭৮ কিলোমিটার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ রেখায় আর্টিলারি ব্যারেজ ও স্নাইপার রাইফেলধারী সেনা মোতায়েনসহ অন্যান্য অভিযান পরিচালনায় প্রস্তুতি নিতে মনোযোগী হতে বলা হয়েছে। খবর ইনডিয়া টাইমস।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটা অংশ সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে সীমিত আকারে হলেও প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়ে উচিত শিক্ষা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে সরকারে প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

তবে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে হামলা করলে সর্বাত্মক যুদ্ধ বেধে যেতে পারে বলে আশংকা করছে ভারত সরকার। ফলে সেনাবাহিনীর ব্যাপক চাপ সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণ রেখার মধ্যে থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে জবাব দেয়ার কথা ভাবছে দেশটির নীতি নির্ধারকরা।

এ জন্য নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনাবাহিনী ও পশ্চিমাঞ্চলীয় ঘাঁটিগুলিতে বিমানবাহিনীকে সম্ভাব্য যেকোনো ঘটনার জন্য পূর্ণ সতর্ক থাকতে সরকার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছে কয়েকটি সরকারি সূত্র।

যদিও পাকিস্তানের অভ্যন্তরে যেকোনো সাঁড়াশি আক্রমণ, গোপন সামরিক অভিযান বা ধাওয়া করে হামলা চালানোর বিষয়টি এখনও বিবেচনা করেনি সরকার। তবে নিয়ন্ত্রণ রেখা পার না হয়েই পাকিস্তানি সেনাদের রক্ত ঝরানোর বিষয়ে ভারতীয় সেনাদের সামনে কোনো বাধা নেই।

এর আগে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ঘাঁটি ও বাংকার লক্ষ্য করে মর্টার শেলের ভারি গোলা বর্ষণ, স্নাইপার দিয়ে গুলি চালিয়ে জবাব দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। এখনও একইভাবে ভারত উরি ঘাঁটিতে হামলার প্রতিশোধ নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তারা বলেছেন, পাকিস্তান দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালাতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জরুরি।

একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বাইয় থেকে শুরু করে চলতি বছরে পাঠানকোটে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এসব সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো প্রতিশোধ না নিয়ে এভাবে আর কতদিন আমরা চুপ থাকবো?

এ কর্মকর্তা ক্ষোভ জানিয়ে বলেনে, ভাবভঙ্গি দেখে মনে হয় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও আইএসআই-এর হামলা সামলানো ছাড়া ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর আর কিছুই করার নেই।

এদিকে ভারতীয় প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, পাকিস্তানকে মোকাবেলায় একাধিক সামরিক উপায় বেছে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। সরকার ইচ্ছা করলে সংক্ষিপ্ত আকারে পূর্ণ যুদ্ধে জড়াতে পারে। এক্ষেত্রে দুই দেশের সীমান্তে পদাতিক বাহিনীর বা অপ্রচলিত যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষিত বিশেষ বাহিনীর অভিযানের বিষয়টি আমলে আনা যেতে পারে।

কর্মকর্তারা বলছেন, বড় দূরত্বের আক্রমণের ক্ষেত্রে ৯০ কিলোমিটার রেঞ্জের স্মার্ট রকেট বা ২৯০ কিলোমিটার রেঞ্জের ব্রাহ্মস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করা যেতে পারে। সাঁড়াশি বিমান হামলার ক্ষেত্রে মিরেজ-২০০০, জাগুয়ার এবং সুখই-৩০ কেআই বিমানযোগে লেজার নিয়ন্ত্রিত স্মার্ট বোমা অথবা ক্লাস্টার বোমা ব্যবহৃত হতে পারে।

তবে পাকিস্তানে হামলার বিষয়টি ভারতকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। কারণ পাকিস্তানের সম্পূর্ণ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই ভারতের লক্ষ্য করে মোতায়েন করা আছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের বিষয়টি ভারতে সাবধানতার সঙ্গে ভাবা হচ্ছে। ভারত ২০১৫ সালের জুনে সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারে জঙ্গি অভিযান চালানোর কথা সামনে রেখে একজন সামরিক কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তান আর মিয়ানমার এক নয়। ভারত সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে পাকিস্তানে কোনো আক্রমণ করা হলে সর্বাত্মক যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে।

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ভারত যদি পাকিস্তানে আক্রমণ করে তাহলে তারাই সর্বপ্রথম পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে বলে যে হুমকি দিয়ে রেখেছে তাও উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।