রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

কারাগারে খালেদার ১ বছর

প্রকাশিতঃ ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ | ১২:৫৮ অপরাহ্ন

ঢাকা : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ১৭ বছরের সাজা নিয়ে রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কারাগারে আছেন বেগম খালেদা জিয়া।

শুক্রবার ( ৮ ফেব্রুয়ারি ) তাঁর কারাগারে এক বছর পূর্ণ হলো।

১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পর খালেদা জিয়া মোট পাঁচবার গ্রেফতার হয়েছেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তিনি তিন দফায় গ্রেপ্তার হন। এ সময় তাকে বেশিদিন আটক থাকতে হয়নি। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির মামলায় ৩৭২ দিন জাতীয় সংসদ ভবন এলকায় স্থাপিত বিশেষ সাব জেলে ছিলেন তিনি। পঞ্চমবার গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সাধারণ কারাবন্দী হিসেবে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৪টি এবং আওয়ামী লীগ সরকারের গত দশ বছরে ৩২টি মামলা দায়ের হয়েছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ৫টি, নাশকতার ১৬টি, মানহানির ৪টি, ৩টি হত্যা, মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার ২টি, রাষ্ট্রদ্রোহের একটি, ভুয়া জন্মদিন পালনের একটি, সাবেক নৌমন্ত্রীর ওপর বোমা হামলার একটি, জাতীয় পতাকার অবমাননার একটি, ড্যান্ডি ডাইংয়ের অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন একটি এবং বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের মালিকানা নিয়ে একটি দেওয়ানী মামলা রয়েছে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।

দলীয় প্রধানের মুক্তির জন্য আইনি পথে হাঁটছে বিএনপি। কিন্তু খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। আর খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথের আন্দোলন জোরদার হচ্ছে না। আইনি ও আন্দোলন দু’টো পথ বেছে নেওয়া হলেও কোনোটি থেকে এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি বিএনপি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আইনের সাধারণ প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা কঠিন হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার একমাত্র উপায় রাজপথ উত্তপ্ত করা।

খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর প্রথম দিকে প্রতীকী অনশন, মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশের মত কিছু কর্মসূচি পালন করলেও একটা পর্যায়ে তাতেও সুফল আসেনি বিএনপির। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০ দলীয় জোটকে কিছুটা পাশ কাটিয়ে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকটি সমমনা দলকে সঙ্গে নিয়ে ১৩ অক্টোবর বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করলেও পুরানো জোটে তেমন স্বস্তি ফিরেনি বরং দূরত্ব বাড়ে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে।

গত ১২ নভেম্বর খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির পাঁচ সিনিয়র নেতা। নির্বাচন নিয়ে দলের চেয়ারপারনরে সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন তারা। খালেদা জিয়াও তাদের দিক নির্দেশনা দেন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় নির্বাচনের মাঠে নামে দলটি।

খালেদা জিয়াকে ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির ভরাডুবির পর দলের নেতাকর্মী, সমর্থক এমনকি সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন বিএনপি তাহলে কী করবে। কারাগারে থেকেই খালেদা জিয়া দলের নেতৃত্ব দেবেন না কি তার মুক্তির জন্য বিএনপি কঠোর আন্দোলনে যাবে। দলের মধ্যে এমন আলোচনাও আছে সরকার না চাইলে খালেদা জিয়ার মুক্তি কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।

খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী, জিয়াউর রহমানের জন্ম বা মৃত্যু বার্ষিকী, ইফতার কর্মসূচি, ঈদুল ফিতর এবং আজাহার শুভেচ্ছা বিনিময়, এমন কি খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরফাত রহমান কোকোর মৃত্যু বার্ষিকীতেও নেতাকর্মীদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি।

এদিকে খালেদা জিয়া কারাগারের সব নিয়ম মেনে চলেন বলে জানায় কারা সুত্র। তাকে কোনো বিষয় নিয়ে কারা কতৃর্পক্ষকে অনুরোধও করতে হয় না। শেষ রাতের দিকে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পর্যন্ত জেগে থাকেন তিনি। ফজরের নামাজ সেরে ঘুমান। এরপর নাশতা করে ঘণ্টাখানেক সময় নিয়ে গোসল করেন। পরে দুপুরের খাবার খান। জোহরের নামাজের পর নিয়মিত অজিফা পড়েন তিনি। বিকালে কিছু সময় ডে-কেয়ার সেন্টারের বারান্দায় পায়চারি করেন। সেখানে থাকা একটি চেয়ারে বসেও সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় কাটে তার। এরপর রাতের খাবার খেয়ে ৯টার দিকে ঘুমাতে যান।

খালেদা জিয়ার পরিবার, চিকিৎসক ও দলের নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন কারাবন্দি থেকেও তাঁর মনোবল কমেনি। অস্বাস্থ্যকর বদ্ধ স্যাঁতস্যাতে পরিবেশের কারণে শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পুরোনো রোগগুলো বেড়ে গেছে। চোখেও প্রচণ্ড ব্যথা, পা ফুলে গেছে। একা একা হাটতে পারেন না। কারাকর্তৃপক্ষ তাকে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে।

প্রথম শ্রেণির বন্দী হিসেবে মাসে দুই বার চিঠি লেখার সুযোগ থাকলেও গত এক বছরে খালেদা জিয়া কাউকে চিঠি লিখেছেন এমন খবর পাওয়া যায়নি।

একুশে/এসসি