রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

নাজিরহাট হানাদারমুক্ত দিবস পালিত

| প্রকাশিতঃ ৯ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১০:৪৮ অপরাহ্ন

হাটহাজারী প্রতিনিধি : উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে হানাদারমুক্ত এবং গণহত্যা দিবস উপলক্ষে খতমে কোরআন, দোয়া মাহফিল, পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। খতমে কোরআন, দোয়া মাহফিলে মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা আবদুল কুদ্দুস। মোনাজাতশেষে শহীদ সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণের পরই শুরু হয় আলোচনা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান।

উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নস্থ নাজিরহাট পুরাতন বাস স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় সকাল দশটার দিকে অনুষ্ঠিত স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা সহকারী (ভুমি) কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সম্রাট খীসা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল মুহুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোঃ মাঈন উদ্দীন, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোঃ নুরুল আলম ও ডেপুটি কমান্ডার মোঃ হোসেন মাস্টার, নাজিরহাট কলেজের উপাধ্যক্ষ মোঃ সাইফুল ইসলাম, কৃষকলীগ নেতা অ্যাডভোকেট মোঃ ফয়েজুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন খান, অধ্যাপক আবু ছৈয়দ, মুক্তিযোদ্ধা ইয়াছিন আলী চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা জহুর আহমদ, নাজিরহাট কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইমরান মাস্টার। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন চবির ইসলামী ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোর্শেদুল আলম, চবির সহকারী প্রক্টর এসএম মুর্শিদ উল আলম, ফটিকছড়ির মাহমুদ হাসান ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র ও সাংবাদিক আহমদ এরশাদ খোকন ও মুক্তিযোদ্ধা-সন্তান মোঃ মহিন উদ্দীন, সাংবাদিক মোঃ আলাউদ্দীন প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর এই দিনে নাজিরহাট হানাদারমুক্ত হয়েছিল। সেই দিন থেকে এই দিবসটি পালন করে আসছেন মুক্তিযোদ্ধারা। উত্তর চট্টগ্রামের রণাঙ্গন নাজিরহাটে পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। এদিন ভোরে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে টিকতে না পেরে পাকহানাদারবাহিনী পিছু হটে। পাকহানাদার বাহিনী চলে যাওয়ার পর শুরু হয় মুক্তিকামী ছাত্রজনতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দ উল্লাস। দিনভর ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জোয়ানেরা চাঁদের গাড়িতে করে কামান এবং অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দেশের মানচিত্র খচিত পতাকা নিয়ে আনন্দ-উল্লাস করে নাজিরহাটে সমবেত হয়। সেই দিন ওখানে চলছিল বিজয়ের উৎসব। গোপন সংবাদ পেয়ে পলাতক পাকহানাদারবাহিনী সন্ধ্যায় হাটহাজারীর অদুদিয়া মাদ্রাসার সামনে থেকে ৩/৪টি বাসে করে নাজিরহাটে আসে। তারা উল্লাসরত মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ জনতার উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ।

এই যুদ্ধে নায়েক তফাজ্জল হোসেন (বরিশাল), সিপাহী নুরুল হুদা (কুমিল্লা), সিপাহী অলি আহম্মদ (খুলনা), সিপাহী নুরুল ইসলাম (সন্দ্বীপ), সিপাহী মানিক মিয়া (চট্টগ্রাম), ফোরক আহম্মদ (নাজিরহাট), হাসিনা খাতুন (নাজিরহাট), আবদুল মিয়াা (নাজিরহাট), নুরুল আবছার (কুমিল্লা), মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক (ফরহাদাবাদ) ও অজ্ঞাতনামা একজনসহ ১১ জন শহীদ হন।

জানা যায়, পাকহানাদারবাহিনী ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত নাজিরহাট, ফটিকছড়ি এবং হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, নাজিরহাট হালদা নদীর সেতু ধ্বংস, হত্যাযজ্ঞসহ নারকীয় কর্মকাণ্ড চালায়। পাকবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে শহীদ ১১ জনকে নাজিরহাট বাসস্টেশনে কবর দেওয়া হয়। প্রত্যেক বছর নাজিরহাট মুক্ত দিবসে হাটহাজারী, ফটিকছড়ির মুক্তিযোদ্ধারা শহীদের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

একুশে/এএ/এটি