রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

ধর্মের নামে ব্যবসায় জামায়াতের লোকজন – তাজুল ইসলাম এমপি

প্রকাশিতঃ ২৯ অগাস্ট ২০১৬ | ৬:২৫ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম: ইসলাম ধর্মের প্রতি মুসলমানদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর লোকজন ব্যবসা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি। রোববার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদস্থ একটি রেঁস্তোরায় বঙ্গবন্ধুর ৪১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বৃহত্তর লাকসাম বঙ্গবন্ধু ফোরাম, চট্টগ্রাম এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, ইসলামের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে, দুর্বলতা আছে। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই অনেক ধরনের ব্যবসা করছে। আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন, সুদকে হারাম করেছেন। আইসিএল, এফসিএল, আরসিএল বানাইছে; শরীয়াহ বোর্ড, কো-অপারেটিভ বানাইছে। বলা হয়েছে- শরীয়াহ বোর্ড পরিচালিত কো-অপারেটিভে টাকা রাখুন। এখানে টাকা রাখলে ২ হাজার টাকা পাবেন আর ব্যাংকে রাখলে ১ হাজার টাকা পাবেন। কো-অপারেটিভে টাকা রাখলে গুনাহ হবে না, সওয়াব হবে। মানুষজন দলে দলে গিয়ে হাজার কোটি টাকা রাখা আরম্ভ করলো। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী থাকা অবস্থায় এগুলোর লাইসেন্স দিয়েছিল আলী আহসান মুজাহিদ।

তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম অংশে রাস্তার পাশে অনেকগুলো কো-অপারেটিভ দেখা যায়। আমার নির্বাচনী এলাকা লাকসামেও এরকম অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানায়, নেতৃত্বে আছে জামায়াতের লোকজন। তারাই শরীয়াহ বোর্ডের নাম দিয়ে এসব ব্যবসা শুরু করে। তারা এতোদিন সুদের কথা বলেছিল, এখন আসলও নেই। এখন শত শত কোটি টাকা নিয়ে তারা উধাও হয়ে গেছে। টাকা হারিয়ে শত শত মানুষ এখন আমার কাছে আসছে।

মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইসলামী হোটেল’। কিন্তু খাবারের মান ভাল না। ইসলামের আদর্শকে ব্যবহার করে তারা ব্যবসা করছে। নবী (সাঃ) বলেছেন, ঐ ব্যক্তি অবশ্যই জাহান্নামে যাবে, যে ধর্মকে দুনিয়াবি সুবিধা আদায়ের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে।

বাঙ্গালী জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছেন উল্লেখ করে মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন থেকে দেশকে রক্ষার জন্য বৃহত্তর জাতিকে এক করার স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু শহীদ হন। বঙ্গবন্ধু সকল আশা পূরণ করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর সকল বন্ধু প্রতীম রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটানো হয়েছে। শক্রুদের মাধ্যমে দেশের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালের পর স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে বঙ্গবন্ধু ও তার নাম রেডিও-টেলিভিশনে শুনিনি, দেখিনি।

বঙ্গবন্ধুর শহীদ হওয়ার পরবর্তী সময়ের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রিকশাওয়ালা বানানো হয়েছে। ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। যারা মুক্তিযোদ্ধা নয়, তারা গর্ব করে বাংলাদেশে দাপটের সাথে বসবাস করেছিল। শাহ আজিজ থেকে শুরু করে কুখ্যাত স্বাধীনতা বিরোধীদেরকে দেশের বিভিন্ন আসনে অধিষ্টিত করা হয়েছিল। সর্বশেষ মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদদের গাড়িতে পতাকা দিয়েছেন খালেদা জিয়া। দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে এ রকম একটি পরিস্থিতি থেকে পুরো জাতিকে আবারো মুক্ত করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গ্যাস রপ্তানিতে সম্মত না হওয়ায় তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সরকারের চক্রান্তে ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে যায় বলেও মন্তব্য করেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোঃ তাজুল ইসলাম।
দেশের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাপরিকল্পনা নিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্য আয়ের দেশে ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবো। এটা নিয়ে অনেকে ব্যঙ্গ করলেও বিশ্ব ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ এখন আর ভিক্ষুকের দেশ নয়; তারা নি¤œ আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। এখন আমাদের মাথাপিছু আয় ১৫শ’ ডলার। এখন সাড়ে ৪ হাজার ডলারে যেতে হবে; মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার জন্য। এরপর মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ডলারে নিয়ে যেতে হবে; উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য। সব সম্ভব, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। এ দেশ থেকে কিছু শেখার আছে বলে সবাই বলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কেনিয়া সফরে গিয়ে বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রশংসা করেছিলেন।

সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফ্রান্স, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। সেখানে এসব নিয়ন্ত্রণ করতে ৬০-৭০ ঘন্টা লেগেছিল। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী খুব কম সময়ে ও একেবারে কম ক্ষয়ক্ষতিতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালিয়ে সফল হয়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে অপরাধীরা এখন ভীত।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- বৃহত্তর লাকসাম বঙ্গবন্ধু ফোরামের উপদেষ্টা জি এম মফিজুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, আলী হোসাইন, আমিরুল ইসলাম, মতিউর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ, যুবলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম রতন, নজরুল ইসলাম খন্দকার, আবদুল আলীম, সৈয়দ আবদুল মতিন প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে দোয়া মাহফিলে মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা তাজুল ইসলাম।