মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

সবার বাচ্চু, নানির ‘বাঁশি’

প্রকাশিতঃ ১৯ অক্টোবর ২০১৮ | ১০:৫৫ অপরাহ্ন

রাকীব হামিদ : সংগীত-জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। এবি নামেই খ্যাত ছিলেন এই কিংবদন্তি। চট্টগ্রামে জন্ম নেয়া এবির শৈশবের অর্ধেক কেটেছে মাদারবাড়ির নানা বাড়িতে। সেখানে সকলে তাকে বাচ্চু নামে ডাকলেও, আদরের নাতিকে ‘বাঁশি’ বলেই ডাকতেন আইয়ুব বাচ্চুর নানি। দুই বছর বয়সে নানি আম্বিয়া খাতুন তার এই নাম দিয়েছিলেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় আদরের ভাগিনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর ছোট মামা আবদুল আলীম একুশে পত্রিকাকে এসব কথা জানান। এসময় বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

নানাবাড়িতে আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন সকলের আদরের। তার এই আদরের স্মৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাচ্চু ছোটবেলায় দেখতে খুব আদুরে ছিল। সবাই তাকে দেখলেই আদর করে গালে চুমু খেত। আমার মায়ের (বাচ্চুর নানি) আদরের আটখানা ছিল আমাদের বাচ্চু। নানাবাড়িতে এলেই নানির কাছেই বেশি সময় থাকতো সে। আমরা তাকে বাচ্চু বলেই ডাকতাম। কেবল ‘বাঁশি’ নামে ডাকত তার নানি। বাঁশি যেমন সকলের মুখে মুখে থাকতো, তেমন করে বাচ্চুর মুখেও সবার আদর লেগে থাকত। এজন্যই ‘বাঁশি’ নাম দিয়েছিলেন।

সকলের আদরের, নানির প্রিয় ‘বাঁশি’র খ্যাতি ও সম্মান ছিল দেশজুড়ে। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে ছড়িয়েছে যার গিটারের সুর সেই এবি খ্যাত আইয়ুব বাচ্চু ব্যক্তিজীবনে ছিলেন নিরহংকারী।

শুক্রবার সন্ধ্যায় মাদারবাড়িতে তার ছোট মামা আবদুল আলীমের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, এত বড় স্টার হয়েও সে আমাকে পা ছুঁয়ে সালাম করত। তার এই শ্রদ্ধাশীলতা মুগ্ধ করত আমায়। বাচ্চুর ছিল না কোনো অহংকার। যখনই চট্টগ্রামে আসতো আত্মীয়স্বজনের সাথে মিশত। নিয়মিত খোঁজ খবরও রাখত সকলের। শুধু তাই নয়, কেউ যখন তার কাছে চাইত পকেট থেকে মুঠো করে টাকা দিত। দেখতও না কত দিচ্ছে।

আইয়ুব বাচ্চু দেশের সংগীতকে অনেক কিছুই দিয়ে গেছেন। তবে নিজের জন্যে কিছুই করেনি। এত বড় তারকা শিল্পী হয়েও ঢাকা ও চট্টগ্রামে কোনো বাড়ি বা জমি বাচ্চু কিনতে পারেনি বলে জানান তার মামা আবদুল আলীম।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, বাচ্চু ডান হাতে টাকা পেত, আর বাম হাতে খরচ করত। জীবনভর কষ্ট করে গেছে, তার প্রতিটা গানের কথা সেসব কষ্টের প্রতিধ্বনি। এভাবে খরচ করার বিষয়ে তাকে কিছু বললে, সে বলতো ‘মামা আপনি চিন্তা করবেনন না। কিছু হবে না।’ তার সেসব কথা আর স্মৃতিই আজ আমাকে ভীষণ কাঁদাচ্ছে। আমাদের বাচ্চু আর ফিরবে না আমাদের মাঝে।

ছয়’শ টাকা নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমানো বাচ্চুর সেসময়ের স্মৃতিচারণ করে আবদুল আলীম বলেন, গানের টানে ১৯৮৩ সালের শেষের দিকে ঢাকায় পাড়ি জমায় বাচ্চু। সেখানে এলিফ্যান্ট রোডের একটি হোটেলে উঠেছিল। কিন্তু টাকার অভাবে তাকে সেই হোটেলের লবিতেই ঘুমাতে হতো। আর সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় জনৈক মহিলার। যার মাধ্যমে অভিজাত হোটেল সোনারগাঁতে গান গাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। এভাবেই ঢাকায় তার পুনরুত্থান হয়।

একুশে/আরএইচ/এটি

ছবি : আকমাল হোসেন