শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

মামলার চেষ্টা, পুলিশের উপর ক্ষেপলেন রেখা আলম!

প্রকাশিতঃ ১২ অক্টোবর ২০১৮ | ১২:৩০ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম : রাস্তার মাঝখানে রাখা গাড়ি সরাতে বলায় পুলিশের উপর বেজায় ক্ষেপলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন প্যানেল মেয়র রেখা আলম চৌধুরী। এসময় তিনি নিজেকে প্যানেল মেয়র দাবি করে মানুষকে সম্মান দিতে না জানার অভিযোগ তুলেন পুলিশের বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়াতে গিয়ে মুহূর্তের মধ্যে আশপাশের এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে রিয়াজউদ্দিন বাজার মধুবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, নগরের অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক রিয়াজউদ্দিন বাজারের মধুবনের সামনে রাস্তার উপর নিজের গাড়ি পার্কিং করে রাখেন রেখা আলম চৌধুরী। ফলে নিউমার্কেট পর্যন্ত পুরো এলাকা জ্যাম হয়ে যায়।

এ অবস্থায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট চালককে গাড়ি সরিয়ে রাস্তা ক্লিয়ার করতে বললেই ক্ষেপে যান রেখা আলম।

এ সংক্রান্ত ১ মিনিট ৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পার্কিং করা নিয়ে ধুসর রঙের গাড়ির পাশে দাঁড়ানো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন প্যানেল মেয়র রেখা আলম চৌধুরীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি চলছে এক সার্জেন্টের।

ভিডিও’র শুরুতে রেখা আলম চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা গরীবের জন্য কাজ করি। টাকা দিয়ে কাজ করি না আমরা। …বাহির করেইতো রাখছি আমরা। মানুষের কষ্টটা বুঝেই কাজ করি আমরা। মানুষকে নূন্যতম সম্মান দিতে জানেন না আপনারা। আপনাকে সম্মান করতে হবে, আপনাকে সবাইকে সম্মান করতে হবে।

এসময় ওই পুলিশ সার্জেন্টকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি খুব সম্মান দিচ্ছেন। আপনার পরিচয়টা দিয়েন, আপনার পরিচয়টা জানি না আমি।’

জবাবে সাবেক এই প্যানেল মেয়র বলেন, ‘আমার নাম বলুন… রেখা আলম। প্যানেল মেয়র রেখা আলম চৌধুরী বলেন গিয়ে যান।

উত্তরে পুলিশ সার্জেট বলেন, আপনি উত্তেজিত হওয়ার দরকার নেই। আমি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না।

এসময় রেখা আলম চৌধুরীর পাশ থেকে এক লোক (লাল জামা) বলে উঠেন, ‘আ জ ম নাছিরের চাচি শাশুড়ি ওনি…

ওই ব্যক্তির কথার জবাবে রাস্তার সাধারণ পথচারীরা বলে উঠেন, তাতে কী? তাতে কী আসে যায়?

অন্যজন বলেন, আ জ ম নাছির আমরা কী করতাম? আমরা কী করতাম আ জ ম নাছির? রাস্তার মাঝখানে গাড়ি রাখবেন, আমরা কী করবো? মানুষকে কষ্ট দিতে পারবেন নাকি?

এ সময় ওই ব্যক্তিকে রেখা আলম চৌধুরীর প্রশ্ন, আপনি কে? উত্তরে ওই ব্যক্তি বলেন, আমি মানুষ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেখা আলম চৌধুরী একুশে পত্রিকাকে বলেন, এটা এমন কী ঘটনা যে নিউজ করতে হবে! যারা অসম্পূর্ণ ভিডিও ফেসবুকে ছেড়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করবো। পরক্ষণে তিনি বলেন, ছেলের আইএলটিএস পরীক্ষা শেষ করে দুই মিনিটের জন্য আমাদের পার্টি অফিসে যাই, তখনই আমার ড্রাইভার জানায় তাকে সার্জেন্ট আটকিয়ে মামলা দিচ্ছে। আমি সাথে সাথে এসে সেই সার্জেন্টকে বলি, ভাই আমি তো মাত্রই গাড়ি থেকে নামলাম স্টার্টও বন্ধ করি নাই। তখন সার্জেন্ট আমাকে বলে, আপনি রাস্তার উপর গাড়ি রেখেছেন তাই ড্রাইভারকে বলেন কাগজপত্র আনতে মামলা হবে। সেই মুহূর্তে এলাকাবাসী এসে সেই সার্জেন্টকে আমার পরিচয় দিলে সার্জেন্ট বলেন, তিনি প্যানেল মেয়র হয়েছে তো কী হয়েছে?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে সার্জেন্টের সঙ্গে রেখা আলমের বাকবিতণ্ডা হয়েছে তার নাম জাহিদুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হয়। একপর্যায়ে তিনি ফোন ধরার পর এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি মোটর সাইকেল চালাচ্ছেন জানিয়ে ১০ মিনিট পর ফোন করতে বলেন। ১০ মিনিট পর ফোন করলে দেখা যায় তার মোবাইল ফোন বন্ধ।

এদিকে ফেসবুকে এ ঘটনা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। মাহমুদুল হাসান নামে একজন তার স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘নেন, আরেক দেমাগি মহিলা নেতা পাওয়া গেছে। তিনি চট্টগ্রামের প্যানেল মেয়র ‘রেখা আমিন চৌধুরী’। তাকেও ভাইরাল করে দিয়ে আরো বড় নেতা হতে সুযোগ করে দিন।’

মো. জাকির হোসাইন নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ। পুলিশ যখনই সরকারি দলের পক্ষে কাজ করবে তখন সরকারি দলের লোকের কাছে অপমানিত অপদস্থ হতে হবে। সব ক্ষমতার অপব্যবহার।’

একুশে/এএইচ/এটি