রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

অনিয়ম : ম্যাক্সকে দশ লাখ, সিএসসিআরকে চার লাখ টাকা জরিমানা

| প্রকাশিতঃ ৮ জুলাই ২০১৮ | ৬:৫৬ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : চিকিৎসকদের অবহেলায় সাংবাদিক কন্যা রাইফা খানের মৃত্যুর পর বির্তকিত ম্যাক্স হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে নানা অনিয়মের দায়ে দশ লাখ টাকা জরিমানা করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশাপাশি নগরের আরেক অভিজাত বেসরকারি হাসপাতাল সিএসসিআরে অভিযান চালিয়ে অনিয়মের অভিযোগে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

র‌্যব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে তিনটা পর্যন্ত ম্যাক্সে আর তিনটা থেকে ৬টা পর্যন্ত সিএসসিআরে চলা এই অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে ডা. দেওয়ান মাহমুদ মেহেদি হাসান, ওষুধ প্রশাসনের প্রতিনিধি গুলশান জাহানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযানে ম্যাক্সের বায়োকেমিস্ট্রি ল্যাবে ব্যবহৃত উপকরণ, ওষুধ এবং হাসপাতালের নথিপত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগপত্র পরীক্ষা করে দেখা হয়। এসময় সাংবাদিকদের ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘ম্যাক্স হাসপাতালের প্যাথলজি ল্যাবে যথেষ্ট দক্ষ জনবল নেই। বায়োকেমিস্ট্রি ল্যাবে এইচএসসি পাস লোকজন চাকরি করছে। এখানে মিনিমাম স্নাতক ডিগ্রিধারী বা বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্নদের কাজ করার কথা। এখানে বায়োকেমিস্ট ও মাইক্রোবায়োলজিস্টও নেই। একটি হাসপাতাল চালাতে হলে নমুনা পরীক্ষার নিজস্ব ব্যবস্থা থাকার নিয়ম থাকলেও মাক্সে সে নিয়ম অনুসরণ করা হয় না। রোগ নির্ণয়ে বিভিন্ন স্যাম্পল কালেকশন করে তারা চট্টগ্রাম ও দেশের বাইরের বিভিন্ন ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিজেদের নামে রিপোর্ট দেয়। অনেকটা কমিশন এজেন্টের মত তারা কাজ করে। ’

এসব অনিয়মের কারণে ম্যাক্স হাসপাতালকে দশ লাখ টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি গাফিলতি সংশোধনের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, ‘ম্যাক্সের ল্যাবে এপিক হেলথ কেয়ার, ল্যাব এইড, পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টার, ডা. লাল প্যাথ ল্যাব, প্যাথ কেয়ার ল্যাব ও সিগমা ল্যাব লিমিটেডে করানো বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। মাক্সের বায়োকেমিস্ট্রি ল্যাবে কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট পওয়া গেছে; আর অপারেশন থিয়েটারে মিলেছে কিছু অনুমোদনহীন ওষুধ। কিছু সার্জিক্যাল আইটেমেরও মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। ম্যাক্সের ফার্মেসির ড্রাগ লাইসেন্সের মেয়াদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে গেলেও তারা নিয়ম ভেঙে ওষুধ বিক্রি করে।’

এদিকে সিএসসিআর হাসপাতালে এই অভিযানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ, এক লাইসেন্সে দুই ফার্মসি চালানো, অপারেশন থিয়েটারে মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যনল ও সেলাই সুতা রাখা এবং জরুরী বর্হিগমন সিড়িতে ময়লা রেখে প্রতিবন্ধকতা করে রাখার দায়ে এই প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এসব অনিয়ম দূর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।

আগেরবারের অভিযানের সময় ভ্রাম্যমান আদালতের নির্দেশনামতে আগের থেকে উন্নতি হওয়ায় সিএসএসসিআরকে ধন্যবাদও দেওয়া হয়। তবে স্বাস্থ্যখাতে এ ধরণের অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।

এদিকে ম্যাক্স হাসপাতালে এই অভিযানের পরপরই দুপুর একটা থেকে চট্টগ্রামে সব বেসরকারি হাসপাতালে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন মালিকরা। তবে হাসপাতালগুলোতে আগেই ভর্তি হওয়া রোগীরা চিকিৎসা পেলেও নতুন করে কোনও রোগী ভর্তি করানো হচ্ছেনা। অন্যদিকে প্রাইভেট চেম্বারেও রোগী দেখা ও ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

একুশে পত্রিকা/এডি

ছবি : আকমল হোসেন