ওমর ফারুক হিমেল : বিদেশ বিভুঁইয়ে যারা থাকেন তাদের সংগ্রাম করতে হয় নিরন্তর, নিরলস। তাদের কথা আমরা ক’জনই জানি বা বুঝি। আসলে জানার ফুসরতই নেই!
প্রবাসের ব্যস্ত সময় বয়ে যায় শ্যামল সবুজ বাংলার বহতা নদীর মতো। নানা বৈচিত্র্য থাকে প্রবাসে সংগ্রামীদের পথচলায়। তবে মাতৃভূমি, স্বজনদের ফেলে দূর প্রবাসে কঠিন সংগ্রাম করা মানুষগুলোর চোখে দেশের উজ্জ্বল স্মৃতি সবসময় ভাসে।
প্রবাস জীবনে আমরা প্রত্যেকেই বেছে নিয়েছি কঠিন সংগ্রাম, অতিক্রম করছি কন্টকাকীর্ণ পথ। একেক জনের লড়াই একেক রকম, একেক ধরন। কেউ লড়ছে টিকে থাকতে, কেউ লড়ছে নিজে বাঁচতে, কেউবা লড়ছে পরিবারকে বাঁচাতে।
বেশিরভাগ আবার দেশে ফেলা আসা স্বজনদের মুখে হাসি ফোটাতে লড়ছেন প্রবাসে। বিদেশ যেন এক লড়াইয়ের ময়দান। প্রাণান্তকর লড়াইয়ের মধ্যে যেন বেঁচে থাকা। অন্তহীন এ লড়াইয়ের ইতি কোথায় -তা জানা নেই কারোরই।
প্রবাসীরা কেমন আছেন, কি করছেন, কিভাবে তাদের সকাল শুরু হয়, কিভাবে কাটে তাদের বিকেল, কী রকম তাদের জীবন কাব্য- এসব জানতে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিরন্তর ছুটে চলেছেন বাংলাদেশের একজন কূটনীতিক- আবিদা ইসলাম।
বিশ্বের ১১তম অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন এ রাষ্ট্রদূত। প্রবাসীদের ভিসা ও অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতা দিতে দিনমান ছুটছেন আবিদা ইসলাম। বাংলাদেশীদের নিরন্তর খোঁজ নিতে যাচ্ছেন এক নগর থেকে আরেক নগরে, এক ভবন থেকে আরেক ভবনে।
ছাত্রদের সমস্যা সমাধানে, কমিউনিটির সদস্যদের পরামর্শ দেয়াসহ ইপিএস কর্মীদের জীবন উপাখ্যান দেখা-শোনায় দিন কাটে আবিদা ইসলামের। তার চিন্তা ভাবনায় প্রতিমূহুর্ত থাকে লাল সবুজের বাংলাদেশ।
বিখ্যাত আফ্রিকান-আমেরিকান মানবাধিকার কর্মী মার্টিন লুথার কিং বলেছিলেন, ‘যদি উড়তে না পারো তবে দৌড়াও, যদি দৌড়াতে না পারো তবে হাঁটো, যদি হাঁটতে না পারো তবে হামাগুড়ি দাও, যাই করো না কেন সামনে এগিয়ে যেতে হবেই।’
উক্তিটি মনে প্রাণে ধারণ করেন দক্ষিণ কোরিয়ায় ষোল হাজার বাংলাদেশীর আস্থা, বিশ্বাসের ভ্যানগার্ড আবিদা ইসলাম। আপাদমস্তক পেশাদার এই কূটনীতিক সারা জীবন দৌড়েছেন, জোর কদমে হেঁটেছেন দেশের জন্য, দেশের মাটির জন্য, মানুষের জন্য। প্রিয় বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি তার আছে অহর্নিশ শ্রদ্ধা ও অকৃত্রিম ভালোবাসা।
তাই তো কর্মব্যস্ততার ফাঁকে বাংলাদেশী ইপিএস কর্মীদের দেখতে আবিদা ইসলাম ছুটে চলেন নানা কোম্পানিতে, খোঁজ নেন রেমিটেন্স সৈনিকদের। তাদের দেন সাহস, নিরন্তর উৎসাহ।
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আসা ইপিএস সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। এই সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বিশেষ করে কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে দিনমান উপায় খুঁজছেন রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। সময় উপযোগী অধিকতর কার্যকরী উপায় নির্ধারণে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
ইতিমধ্যে কেবিজের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে ইপিএস সদস্য বাড়ানোর নানামুখী উপায় খুঁজেছেন আবিদা ইসলাম। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমমন্ত্রী ইয়াংজু সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন। ইপিএস বাংলা কমিউনিটি, ইপিএস স্পোর্টস এন্ড ওয়েলফার এর সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেছেন তিনি। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করে সরাসরি ইপিএস সদস্যদের উৎসাহিতও করেছেন।
আবিদা ইসলামের মতে, বাংলাদেশের রেমিটেন্স সৈনিকরা দেশের চালিকা শক্তি, দেশ গড়ার খুঁটি। তাদের সেবা দেওয়ার এই পথচলা অব্যাহত থাকবে।
রাষ্ট্রদূতের সেবা প্রদানের এই প্রচেষ্টায় মুগ্ধ দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীরা। জানতে চাইলে ইপিএস কর্মী মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের আগের রাষ্ট্রদূতরা ইপিএস কর্মীদের জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তেমনিভাবে বর্তমান রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম ম্যাডাম দেশের কথা চিন্তা করে ইপিএস কর্মী কিভাবে বাড়ানো যায় সেই উপায় খুঁজছেন।
‘সবচেয়ে বড় বিষয় অফিসের কাজের ফাঁকে বর্তমান রাষ্ট্রদূত আমাদের মতো ইপিএস কর্মীদের দেখতে ছুটে যাচ্ছেন বিভিন্ন কোম্পানীতে। এটা সত্যিই আনন্দের বিষয়। ’
রাষ্ট্রের এই ভ্যানগার্ডের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয় ও প্রবাসী বান্ধব বলেও মন্তব্য করেন ইপিএস কর্মী মিজানুর রহমান।
একুশে/ওএফএইচ/এসআর