মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

কেবল পতাকা নয়, বাংলাদেশি সংস্কৃতির পাহারাও দিচ্ছেন আবিদা

প্রকাশিতঃ ২৬ মে ২০১৮ | ৯:২৮ অপরাহ্ন

.ওমর ফারুক হিমেল, দক্ষিণ কোরিয়া : ষাট বছর বয়সেও সুরের মূর্ছনায় ভাসিয়ে দেন, সুর লহরিতে মাতিয়ে রাখেন কোরিয়ার মানুষকে যে শিল্পী, সেই লি ইয়াং সুক-এর কণ্ঠে বাংলাদেশের গান, রাবীন্দ্রিক চর্চা- ব্যাপারটা কেমন ঠেকে বলুন তো!

নিশ্চয় আবেঘগন, হৃদয়-নিংড়ানো অনুভূতি দোলা দেবে যে কোনো বাংলা ভাষাভাষিদের। বিদেশের মাটিতে বাঙালি সংস্কৃতির এমন বর্ণময় উচ্চারণ কিংবা হৃদয়স্পর্শী অনুভূতি তৈরির কারিগর একজনই; তিনি কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কোরিয়ায় বাংলাদেশি পতাকার পাহারায় নিয়োজিত হবার পর বাংলাদেশি সংস্কৃতিকেও ভিনদেশি, ভিন ভাষাভাষির কাছে ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্বটাও আপন কাঁধে তুলে নিয়েছেন আবিদা ইসলাম।

সুরের মানুষ, গানের বোদ্ধা বলে কাজটি অনেকটা সহজ হয়েছে তাঁর জন্য। শিল্পমনষ্ক পরিবারে জন্ম, তারপর শিল্পসত্তা নিয়ে বেড়ে উঠা আবিদা-পড়াশোনা, ক্যারিয়ারগঠনের তুমুল যুদ্ধময় দিনগুলোতেও এক মুহূর্তের জন্য সুর-বিমুখ ছিলেন না। হাজার ব্যস্ততার মাঝেও পরম মমতায় স্বেচ্ছাবন্দি ছিলেন সুরের মায়ায়, গানের বিনিসুঁতোয়।

পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগ দেয়া মানে বিদেশ বিভূঁইয়ে ঘুরে বেড়ানো, বাংলাদেশের কথা বলা। কর্মসূত্রে বিদেশে বাংলাদেশের কথা বলতে গিয়ে যখনই সুযোগ পেয়েছেন আবিদা বাংলাদেশের সুর নিয়ে কথা বলেছেন, সংস্কৃতিকে উড্ডীন রেখেছেন। কোরিয়ায় সে সুযোগটিই এখন বেশি করে কাজে লাগাচ্ছেন তিনি।

দূতাবাসের প্রায়-সব অনুষ্ঠানে থাকে রবীন্দ্র-নজরুলের আয়োজন। অনুষ্ঠানশেষে রবীন্দ্র আর নজরুলের গান নিয়ে রাষ্ট্রদূত নিজেই যন্ত্রীতে সুর তুলেন। সুরে সুরে মোহাবিষ্ট করেন বাংলা ভাষাভাষি ছাড়াও ভিনদেশিদের।

রাষ্ট্রদূতের এমন সুরসাধনা, সুরপ্রীতি ছড়িয়ে পড়ার পর ইতোমধ্যে কোরিয়ানদের কাছেও বাংলাদেশি সংস্কৃতিতে আরও বেশি আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এখন কোরিয়ান শিল্পীরাও আবিদার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সংস্কৃতির সখ্যতা কিংবা সেতুবন্ধন গড়েন। এমনই একজন কোরিয়ার বিখ্যাত শিল্পী লি ইয়াং সুক।

সম্প্রতি দূতাবাসের উদ্যোগে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর ১৫৭তম ও জাতীয় কবির ১১৯তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন গুণী এ শিল্পী। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে এ কোরিয়ান শিল্পী রবীন্দ্রনাথের ‘বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও’ গেয়ে সমবেতদের বিস্মিত করে তোলেন।

একেবারে বাঙালি ঢংয়ে, বাঙালি শিল্পীর মতো সুর তোলা, গান ধরার অদ্ভূত ‌দ্যোতনায়-শ্রোতাদর্শকরা সমস্বরে বললেন কোরিয়ায় বাংলাদেশের এ এক অসীম অর্জন। এখানকার বিখ্যাত শিল্পীর কণ্ঠে এখন শোভা পায় রবীন্দ্র-নজরুল। এ অর্জনের জন্য রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলামের কাছে আরেকবার কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ হলেন কোরিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা।

গানের পাশাপাশি ছবি আঁকতে, রান্না করতে পছন্দ করেন। ছোটবেলা থেকে তিনি নজরুলসংগীত চর্চা করতেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত হন ১৯৯৪ সালে। চাকরিতে যোগদানের পর আর তেমন টেলিভিশনে গাওয়া হয়ে উঠেনি। তবে এখন রবীন্দ্রসংগীত গাইতেই তিনি ঢের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বাণীপ্রধান রবীন্দ্রসংগীত এবং এর মাধুর্যতা তার ভালো লাগে। তবে নজরুলসংগীতের চর্চা তিনি ধরে রেখেছেন।

একুশে/ওএফএইচ/এটি