চট্টগ্রাম : সাংবাদিক দেখলেই ক্ষেপে যাচ্ছেন কক্সবাজার সফররত বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। সোমবার ইনানীর মনখালীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় কিছু মিডিয়াকর্মী বিশ্রিভাবে সেলফিবাজি করার পর থেকে তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন বলে জানালেন।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রনজিত কুমার বড়ুয়া একুশে পত্রিকাকে জানান, জাতিসংঘের ইউনিসেফ-এর শুভেচ্ছাদূত হিসেবে সোমবার ৪ দিনের সফরে রোহিঙ্গাক্যাম্প পরিদর্শনে কক্সবাজার আসেন বলিউডের জনপ্রিয় নায়িকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।
এসেই নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আন্তরিক হয়ে মেশার চেষ্টা করেন গুণী এ অভিনেত্রী। তাই সোমবার সমুদ্র সৈকতের কূলঘেষে টেকনাফের বাহারছড়া মনখালী এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তাবলয় একপ্রকার তুলে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ সরলতা তার জন্য বিড়ম্বনা তৈরি করে। রোহিঙ্গা নারী-শিশু ও প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীরাও কাছাকাছি এসে রূপালী পর্দার স্বপ্নের মানুষটাকে দেখার সুযোগ পান। এ স্মরণীয় মুহূর্তকে ধারণ করে রাখতে সঙ্গে থাকা স্মার্টফোনে প্রিয় নায়িকাকে অনেকে সেলফিবন্দি করেছেন।
সিংহভাগই নির্দিষ্ট দূরত্বে নিজেদের সেলফিবন্ধি করলেও কেউ কেউ এ সুযোগকে অপব্যবহার করেছেন। প্রিয়াঙ্কার গা-ঘেঁষেই সেলফিবন্দি হওয়ার চেষ্টা করেন। প্রিয়াংকা যখন রোহিঙ্গা নারী-শিশু ও ইউনিসেফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন এ সময়টাকে বেছে নিয়ে গা ঘেঁষেই সেলিফবন্দি হয়েছেন কেউ কেউ।
জানা যায়, এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিকটু আচরণ করেছেন যমুনা টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধি ইমরুল কায়েস।
১ মিনিট ৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি সিঁড়ি বেয়ে উঠছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। একইসময় কমলা রঙয়ের টিশাট পরা ইমরুল কায়েস প্রিয়াঙ্কার পাশ ঘেঁষে একই তালে উপরে উঠার চেষ্টা করেন। এসময় প্রিয়াঙ্কা ইশারা করে তাকে সরিয়ে দেন। কয়েক সেকেন্ড পর ইমরুল ফের তার কাছে চলে আসেন। আবারও সরিয়ে দেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। সিঁড়ি বেয়ে উঠার পর রোহিঙ্গার নির্যাতিত নারী-শিশুদের সঙ্গে যখন কথা বলছিলেন তখন সেলফি তোলার নামে প্রিয়াঙ্কার গা ঘেঁষে দাড়ান ইমরুল। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেপে যান প্রিয়াঙ্কা; আঙুল উঁচিয়ে ইমরুল কায়েসকে শাসাতে দেখা যায়।
এ সংক্রান্ত একটি সেলফি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই সেলফিতে দেখা যায়, প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে ইমরুল কায়েস ঘনিষ্ঠ পোজ দিতে গিয়ে প্রিয়াঙ্কাকে কোণঠাসা ও অসহায় মনে হচ্ছে। অবশ্য আলোচিত এ সেলফিটি ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ৮ সেকেন্ডের ভিডিওতে নেই।
জানা যায়, এই পরিস্থিতিতে বেশ বিব্রতবোধ করেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। তাৎক্ষণিকভাবে বড়সড় প্রতিবাদ না করলেও এসব আচরণে বেজায় ক্ষেপেছেন ‘ফ্যাশন’খ্যাত নায়িকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। হোটেলে ফিরে এ নিয়ে তিনি রীতিমতো ক্ষোভ ঝারেন তিনি। পরিবর্তন আনেন ক্যাম্প ভিজিটের নির্ধারিত সিডিউলে। সিদ্ধান্ত নেন পরের তিনদিন ক্যাম্প পরিদর্শনকালে ইউনিসেফ কর্মকর্তা ও নিজস্ব নিরাপত্তাবাহিনী ছাড়া কেউ কাছে থাকবে না। কোনো মিডিয়াকর্মী, স্থানীয় জনগণ এমনকি বাংলাদেশি নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরাও না। হয়েছেও তাই।
সিডিউল মতে, মঙ্গলবার সকালে টেকনাফের সাবরাং হারিয়াখালি, নয়াপাড়া, উনচিপ্রাং ও লেদা ক্যাম্পে যাওয়ার কথা ছিল প্রিয়াঙ্কার। কিন্তু তিনি সকাল সাড়ে ৯টায় সাবরাংহ হারিয়াখালি ক্যাম্পে গেলেও ইউনিসেফের নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া কাউকে তার এক কিলোমিটারের ভেতর আসতে দেয়া হয়নি। নিজের মতো করেই ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শিশু ও নারীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বুধবারও রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন সবার কাছ থেকে কঠোর দূরত্ব বজায় রেখে। কেবল গণমাধ্যমকর্মী নয়, স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীকেও কাছে যাওয়ার অনুমতি দেননি তিনি।
টেকনাফ থানার ওসি রনজিত বড়ুয়া বলেন, সোমবার বাহারছরায় সবার সাথে প্রাণবন্ত আচরণ করায় সেলফির নামে তামাশা করেছেন গণমাধ্যমকর্মীসহ অনেকে। ফলে মঙ্গলবার কঠোরভাবে সবার কাছ থেকে দূরে থেকেছেন বিশ্ব সেলিব্রেটি প্রিয়াঙ্কা। বুধবার সেখানে অল্পক্ষণ ঘুরে ফিরে বিকেলেই হোটেলে ফিরে যান। প্রথম দিনের মতো প্রফুল্লতা ছিল না তার অবয়বে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, এটি দুঃখজনক। কোনো সেলিব্রেটি যখন পাবলিক প্লেসে আসেন তখন সবার উচিত তার সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু সেলফি তোলার নামে গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন মানুষ যে আচরণ করেছে তাতে এখানকার ভক্তকূল সম্পর্কে তার ধারণাটা অত্যন্ত নেতিবাচক ঠেকেছে।
সোমবারের ইনানীর মনখালীতে কিছু মিডিয়াকর্মী বিশ্রিভাবে সেলফিবাজিতে মেতে উঠায় ভীষণ মনোক্ষুণ্ন হয়েছেন শুভেচ্ছাদূত।
জানতে চাইলে যমুনা টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধি ইমরুল কায়েস একুশে পত্রিকাকে বলেন, সাংবাদিক হলেও আমরা মানুষ। প্রিয় একজন নায়িকাকে কাছে পাওয়ায় কিছুটা আবেগী হয়ে উঠেছিলাম। তাই সাংবাদিক হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে সেলফি তুলেছি।
তিনি অভিযোগ করেন, নায়িকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে মানবিক পরিচয় দিতে আসেননি, তিনি নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে ফিল্ম বানাতে এসেছেন।
একুশে/এটি