রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

৬৫ বছর বয়সী দুই বলির লড়াইয়ে হারেনি কেউ

| প্রকাশিতঃ ২৫ এপ্রিল ২০১৮ | ৮:২৯ অপরাহ্ন

আলম দিদার:
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক আব্দুল জব্বারে বলি খেলার ১০৯ তম আসরে অংশগ্রহণকারী ৮৬ প্রতিযোগির মধ্যে ৬০ উর্ধ্বো দুই বলিও অংশ নিয়েছেন। তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য নয় বরং মনের তৃপ্তি মেটাতেই তারা প্রতিবার এ মঞ্চে উঠেন। আর সেজন্য তারা এক বছর অপেক্ষায় থাকেন জব্বারের বলি খেলার জন্য।

হাটহাজারীর চারিয়ার মফিজ (৬০) ও নগরীর পতেঙ্গার খাজা আহমেদ মিনিট কয়েক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে শারিরীক কসরত আর শক্তি প্রদর্শন করলেও কয়েক মিনিটের লড়াইয়ে কেউ কাউকে পরাস্ত করতে না পারায় বিচারকরা দুজনকেই যৌথভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন। তাদের প্রত্যেককে নগদ এক হাজার টাকা ও একটি করে ক্রেস্ট দেওয়া হয়।

হাটহাজারীর চারিয়ার মফিজ জানান, মূলত মনের আনন্দ থেকেই তিনি প্রতিবছর জব্বারের বলি খেলায় অংশ নেন। তিনি পেশায় কৃষি কাজ করেন। গত দশ বছর ধরে জব্বারের বলি খেলায় অংশ নিচ্ছেন। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এক বছর দীর্ঘ প্রতীক্ষায় থাকেন তিনি।

একই কথা জানালেন, পতেঙ্গার খাজা আহমেদও। ৬৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধও পেশায় কৃষক। মনের আনন্দ থেকেই তিনিও এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন পাকিস্তান আমাল থেকে। এবার তার সাথে অংশ নিয়েছেন তার ছেলে বাদশাও। তবে তার সঙ্গী মফিজকে হারাতে না পারলেও যৌথভাবে বিজয়ী হয়ে পেয়েছেন ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ পুরস্কার।

অন্যদিকে বুধবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে চট্টগ্রামের লালদিঘি মাঠে ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারে বলি খেলার ১০৯ তম আসর শুরু হয়। প্রতিযোগীতার ফাইনাল শুরু হয় ৫টা ৩২ মিনিটে। ফাইনালে মুখোমুখি হন জীবন বলি এবং শাহজালাল বলি। শাহজালাল বলি নিয়ম না মানায় বিচারকররা ৫ টা ৪৬ মিনিটে চকরিয়ার তারিকুল ইসলাম জীবনকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেন। লালদীঘির ময়দানে বালি দিয়ে তৈরি চার ফুট উঁচু বলীখেলার গ্রাউন্ডে চলে এ লড়াই।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তরিকুল ইসলাম জীবন বলেন, `আমি দোকানে চাকরি করি। জব্বারের বলি খেলায় পাঁচবার অংশ নিয়ে আমি চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমি খুব খুশি।’

প্রতিবারের মতো এবারও সাধারণ, চ্যালেঞ্জিং ও চ্যাম্পিয়ন- এই তিনটি বাউটে সারাদেশ থেকে আসা ১৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১০২ জন বলী অংশ নেন। এর আগে বুধবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল চারটা বলীখেলার উদ্বোধন করেন সিএমপির ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদুল হাসান।

সাধারণ ধাপের বলিখেলা শুরু হয় ৪টা ২৫ মিনিটে। এবছরও খেলা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর আবদুল মালেক। তাকে সহায়তা করেন ইকবাল বালি, জাহাঙ্গীর ও লেদু।

বলি খেলার প্রধান বিচারক আব্দুল মালেক বলেন, ‘অনৈতিক ভাবে মাথা দিয়ে অাঘাত করায় এবং তিনবার পায়ে আঘাত করায় শাহজালালকে ডিসকোয়ালিফাই করা হয়েছে।’

এর আগে সেমিফাইনালে মহেশখালীর মোহাম্মদ হোসেনকে হারিয়ে কুমিল্লার শাহজালাল বলি আর উখিয়ার জয়নাল বলিকে হারিয়ে চকরিয়ার তারিকুল ইসলাম জীবন বলি ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন।

এবার ১০৯ তম আসরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, কুমিল্লাসহ নানা জায়গা থেকে থেকে ৮৬ জন বলি অংশ নেন বলে জানান ‘আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সহ সভাপতি জামাল হোসেন।

খেলাশেষে বিজয়ী ও অংশ গ্রহণকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। চ্যম্পিয়নকে ক্রেস্টের পাশাপাশি নগর ২০ হাজার টাকা আর রার্নাস অাপকে ক্রেস্টের পাশাপাশি ১৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

উদ্বোধক ছিলেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) মাসুদুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্পন্সর বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের রিজিওনাল ডিরেক্টর সৌমেন মিত্র। আরো উপস্থিত ছিলেন জব্বারের বলি খেলা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী ও সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদলসহ আয়োজক কমিটির অন্যান্য সদস্যরা।

একুশে/এডি/