চট্টগ্রাম: মেয়েসন্তান বদলে মৃত ছেলেসন্তান তুলে দেওয়া হয়েছিল এক মাকে। চট্টগ্রাম নগরের গোলপাহাড় মোড়ের চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠার পর তৎপর হয় পুলিশ। এরপর বুধবার ভোররাতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা রোকসানা তার নিজের কন্যাসন্তানকে দেখে আনন্দের কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর বুধবার সকালে নগরের বেসরকারি আরেকটি হাসপাতালে শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান।
পুলিশ সূত্র জানায়, এক সপ্তাহ আগে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বাসিন্দা ও এক দুবাই প্রবাসীর স্ত্রী রোকসানা আক্তার এক মেয়ে নবজাতকের জন্ম দেন। নিউমোনিয়া আক্রান্ত হওয়ায় আধাঘন্টার মধ্যেই বাচ্চাটিকে নোয়াখালী মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ছয় ঘন্টা পর সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ যে কোনো উন্নত হাসপাতালে নবজাতকটিকে রেফার করা হয়। এরপর ওই বাচ্চাকে আনা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে একদিন রাখার পর শুক্রবার তাকে ভর্তি করা হয় চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে।
এরপর গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে চাইল্ড কেয়ার কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই নবজাতক মারা গেছেন। এরপর বেগমগঞ্জে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দাফনের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে তারা দেখতে পান নবজাতক ছেলেসন্তান। এরপর ওই নবজাতককে নিয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে তারা পাঁচলাইশ থানায় এসে অভিযোগ করেন। পুলিশের তৎপরতার ফলে ভোররাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের ভুল হয়েছে। ওই ছেলে নবজাতকটি ছিল আরেকজনের। পরে মৃত ছেলেটিকে তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। রোকসানার কন্যাসন্তানটি বেঁচে আছে।
পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, মারাত্মক ধরনের নিউমোনিয়া আক্রান্ত নবজাতকটিকে প্রথমে নোয়াখালী মা ও শিশু হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল, তারা ওই নাবজাতকের লিঙ্গ পরিচয় লিখেনি। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তারাও লিঙ্গ পরিচয় উল্লেখ করেনি। তবে শেভরণে ওই বাচ্চার একটি পরীক্ষা করানো হলে সেখানে মেয়ে লেখা হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই বাচ্চা ও মায়ের ডিএনএ টেস্ট করার উদ্যোগও আমরা নিয়েছিলাম। এরইমধ্যে বুধবার ভোররাতে জানতে পারি, চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে ভুলে বাচ্চা বদল হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রকৃত মেয়েবাচ্চাকে তার মায়ের হাতে তুলে দিয়েছি আমরা।
রোকসানা আক্তার বলেন, চাইল্ড কেয়ার আমার সঙ্গে যা করেছে তা যেন আর কোনো মায়ের সঙ্গে করতে না পারে, সেজন্য হাসপাতালটি বন্ধ করে দেওয়া উচিত সরকারের। ওদের আইসিইউতে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। তারা হয়তো আমার বুকের ধনকে মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল। যদি আমাকে অন্য কোনো কন্যার মরদেহ দেওয়া হতো আমি বুঝতেই পারতাম না। এ ঘটনায় জড়িত চাইল্ড কেয়ারের সবার শাস্তি চাই।
চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফাহিম হাসান রেজা বলেন, নবজাতক ওই ছেলেশিশুকেও গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার ১০ মিনিট পর মেয়েশিশুটি ভর্তি হয়। দুই নবজাতককে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। নবজাতক ছেলেশিশুটিকেও আনা হয়েছিল নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থেকে। একই বয়সের নবজাতক এবং ঠিকানা একই হওয়ায় এই ভুল হয়ে গেছে। এ ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। তারাও আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারবেন না। তাই বলেছি, চাইলে তারা অন্য কোথাও নিয়ে যেতে পারেন নবজাতকটিকে।
রয়েল হাসপাতালের আইসিইউতে নবজাতককে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন ডা. বিধান রায় চৌধুরী; তিনি বলেন, শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক নানা জটিলতা রয়েছে শিশুটির মধ্যে। জন্মের পর ব্রেনে অক্সিজেন পৌঁছেনি। খিঁচুনি ও ইনফেকশন আছে। মেডিকেল বোর্ড গঠন করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
এসআর/একুশে