চট্টগ্রাম : অনেক আগে থেকেই জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বড়ভাই জাহাঙ্গীর সেলিম চৌধুরী। ছিলেন চন্দনাইশ উপজেলা জাতীয় পার্টির সহ সভাপতি, দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির সম্পাদকীয় পদে। তার হাত ধরে একসময় জাতীয় পার্টিতে যুক্ত হন ছোটভাই আলমগীরুল ইসলাম চৌধুরী।
ক্রমান্বয়ে দলে একটা অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হন। আজ থেকে ছয়-সাত বছর আগে চন্দনাইশে নিজের পেট্রোল পাম্পের পাশে আনুষ্ঠানিক সম্মেলনে চন্দনাইশ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হন আলমগীরুল ইসলাম চৌধুরী। সভাপতির পাশাপাশি দক্ষিণ জেলা জাতীয়পার্টির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
এর মাঝেই ২০১৬ সালের মে মাসে উপস্থিত হয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান (১৯৯৮-২০০৩) আলমগীরুল ইসলাম চৌধুরী। এবারও চেয়ারম্যান পদটা আমার চাই। কিন্তু সারাদেশের মতো এখানেও ‘প্রতীক’ একটা ফ্যাক্টর। ’নৌকা প্রতীক’ নিশ্চিত করা গেলে ‘চেয়ারম্যানশিপ’ মুঠোবন্দী হবে অনায়াসে।কিন্তু জাতীয়পার্টির নেতা, বড়জোড় লাঙ্গল প্রতীক পেতে পারেন। নৌকা কী করে সম্ভব!
বাস্তবে সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করলেন আলমগীরুল ইসলাম চৌধুরী। সবাইকে চমকে দিলেন, দেখিয়ে দিলেন তার পক্ষে সবই সম্ভব! আওয়ামী লীগের ১০ মনোনয়ন-প্রত্যাশীকে পেছনে ফেলে রাতারাতি ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে এলেন তিনি। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ঘোষণা দিলেন আলমগীরুল ইসলাম চৌধুরীই হাশিমপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী। এসময় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে জেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে প্রার্থী নির্বাচনে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছিল।
২০১৬ সালের ২৮ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যথারীতি চেয়ারম্যান হয়ে আসেন আলমগীরুল ইসলাম চৌধুরী। মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রায় দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও আলমগীরুল ইসলাম চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো জাতীয়পার্টির পদ ছাড়েননি। ফলে এখনো তাকে অনেকেই জাতীয়পার্টির নেতা মনে করে থাকেন। তার এ দ্বৈতপরিচয় দীর্ঘদিন পরও রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। তৈরি করেছে অস্বস্তিকর পরিবেশ।
রাজনৈতিক সচেতনরা বলছেন, এটা অনৈতিক, অন্যায়, অশোভন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডিগবাজি নতুন নয়। লাভ-অলাভের সমীকরণ কিংবা লোভের বশবর্তী হয়ে মানুষ দলবদল করে। নতুন দলে যুক্ত হয়ে পদ-পদবী পেলে আগের পদ ছেড়ে দেয়। কিন্তু আলমগীরুল ইসলাম তা করেননি। ছাড়েননি জাতীয়পার্টির পদ-পদবী। জাতীয়পর্টির পক্ষ থেকেও এখানে নতুন কমিটি গঠন দূরের কথা, আলমগীরুল ইসলাম চৌধুরীকে অব্যাহতি দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সামশুল আলম মাস্টার একুশে পত্রিকার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, আপনার (প্রতিবেদক) কথা ঠিক। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্বে (সভাপতি) থাকাবস্থায় আলমগীরুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান হলেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেননি। তার উচিৎ ছিল নিজ থেকে পদত্যাগ করা অথবা আওয়ামী লীগের যারা তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তারাও আলমগীরুলকে এ ব্যাপারে সতর্ক বা পদ আগলে রাখায় ভর্ৎসনা করতে পারতেন।
আপনারাই বা কেন অব্যাহতি দেননি বা কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করেননি- এমন প্রশ্নে সামশুল আলম মাস্টার বলেন, আমরা মৌখিকভাবে সোনামিয়াকে চন্দনাইশ উপজেলা জাতীয়পার্টির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করতে বলেছিলাম। ব্যাপারটা দায়সারা বা খেলু হয়ে গেলো না কিংবা রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা নয় কি? একুশে পত্রিকার এমন প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে যান সামশুল আলম মাস্টার।
জানতে চাইলে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত চন্দনাইশের হাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলমগীরুল ইসলাম চৌধুরী একুশে পত্রিকাকে বলেন, অন্য দলে যোগ দিলে আগের দলের পদ-পদবী আপনাআপনি চলে যায়। তাছাড়া দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদকে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করে মনোনয়ন নিয়ে আসার পর জাতীয়পার্টি আমাকে বহিস্কার করেছিল। কাজেই আমি আর জাতীয়পার্টির নেতা নই এবং দলটির কোনো পদে বহাল থাকার অভিযোগ সঠিক নয়।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কোনো পদে আছেন কিনা জানতে চাইলে আলমগীরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, না, এখনো কোনো পদে নেই। তবে আমাদের এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী সাহেব আশ্বস্ত করেছেন সামনে উপজেলা বা ইউনিয়ন-পর্যায়ে কমিটি হলে সেখানে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাখবেন।
কোনো একটা পদে চলে আসতে পারলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে এখনো যে অপপ্রচার চলছে তখন সেই অপপ্রচারের আর সুযোগ থাকবে না। বলেন আলগীরুল ইসলাম চৌধুরী।
এ প্রতিবেদন তৈরি করার সময় চন্দনাইশের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী রাষ্ট্রীয় সফরে আজারবাইজান অবস্থান করায় তাঁর বক্তব্য জানার সুযোগ হয়নি।
এটি/একুশে