আবু আজাদ : নারী-শিশুদের রোগনির্ণয় ও তার প্রতিকার জানাতে মোবাইল অ্যাপ’র উদ্ভাবন করেছেন চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী। ‘হেলথ.কো’ নামে এ অ্যাপের মাধ্যমে দ্রুত রোগনির্ণয় করা যাবে। প্রয়োজনে ঘরে বসে রোগী নিজেও রোগ নির্ণয় করতে পারবেন। গ্রামাঞ্চল ও পাহাড়ে এই অ্যাপ বিশেষভাবে সাহায্য করবে বলে আশা এই তরুণ গবেষকদের।

তরুণ উদ্ভাবক আকিব হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ভুল চিকিৎসাজনিত কারণে রোগীর মৃত্যু বা সঠিক চিকিৎসা পেতে নানান জটিলতা এখন নাগরিক-জীবনের নিত্য ঘটনা। দেশের এই প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতির বাইরে গিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের হয়রানি থেকে বাঁচানোর চিন্তা থেকে ‘হেলথ.কো’ অ্যাপসটি তৈরি করা হয়েছে। জরুরি মুহূর্তে চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনে স্মার্টফোনের এই অ্যাপস কাজে লাগতে পারে।’

আকিব হোসেন আরো বলেন, ‘আমাদের গ্রাম ও পাহাড়ের মানুষেরা সবসময় চিকিৎসাবঞ্চিত। এ অ্যাপ ব্যাবহারে কম খরচ ও কম সময়ে রোগনির্ণয় করতে পারবেন তারা। বাঁচবেন নানান হয়রানি থেকে।’

দলের আরেক সদস্য ডলি বলেন, ‘এ অ্যাপস ব্যবহার করে ঘরে বসেই রোগ নির্ণয় করে পাওয়া যাবে সম্ভাব্য সমাধান। আর রোগ-নিরাময়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে চাইলে অ্যাপেই পাওয়া যাবে যোগাযোগের ঠিকানা। শুধু তাই নয়, কোন রোগের সময় করণীয় কী তাও জানা যাবে ‘হেলথ.কো’ অ্যাপস ব্যবহার করে। প্রাথমিকভাবে নারী ও শিশুরা এই অ্যাপস সুবিধার আওতায় আসবেন।

বুধবার (২৮ মার্চ) চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটে অ্যাকটিভ সিটিজেনস রিজিওনাল এচিভারস সামিট ২০১৮ আসরের প্রদর্শনীতে এই অ্যাপস সম্পর্কে জানানো হয়।

ব্রিটিশ কাউন্সিল ও দি হাঙ্গার প্রজেক্টের যৌথ সহায়তায় চট্টগ্রামের ১৮ তরুণ-তরুণী এই অ্যাপস‘র উদ্ভাবক। তারা চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইস্ট ডেলটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অ্যাপসটি তৈরীতে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন ডা. রিংকি শর্মা। কারিগারি সহায়তা দিয়েছেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাবেদ ও এ্যানি। অ্যাপসটি এখনো পরিক্ষামূলক অবস্থায় রয়েছে। আরো কিছু ফিচার সংযোজনের পর সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হবে অ্যাপসটি।

তরুণ গবেষক প্রশান্ত ভৌমিক বলেন, ‘আমরা মূলত চিকিৎসক এবং রোগীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরীর কাজ করছি। শারীরিক ও মানসিক লক্ষণের ভিত্তিতে নিজের রোগ নিজেই নির্ণয় করার সুবিধা নিয়ে তৈরি রোগনির্ণয় সার্ভিস। এতে সম্ভাব্য রোগ সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা যাবে এবং কোন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, সে বিষয়ে পরামর্শও পাওয়া যাবে।

অ্যাপসের কারিগারি দিক নিয়ে মো. জাবেদ বলেন, ‘এতে যে তথ্যভাণ্ডার ও অ্যালগোরিদমের ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে সম্ভাব্য রোগ সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা যাবে।’

ডা. রিংকি শর্মা একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন রোগ ও লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত ডেটাবেইস নিয়ে তৈরি করা হয়েছে স্বাস্থ্যজ্ঞান মডিউল। প্রতিটি রোগের বর্ণনা, লক্ষণ, কারণ, সাধারণ জিজ্ঞাসা, হেলথ টিপসসহ আরও তথ্য রয়েছে এই বিভাগে। এখান থেকে আপনার চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত ডাক্তার খুঁজে নিতে পারেন খুব সহজে। চট্টগ্রামের বেশকিছু ডাক্তারের ছবি, ডিগ্রি এবং ঠিকানা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে আমাদের ডাক্তার ডিরেক্টরি বিভাগ। ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে হসপিটাল ডিরেক্টরি বিভাগে।’

প্রসংগত, ২০০৯ সাল থেকে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট এর সহযোগীতায় ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার বাংলাদেশ আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রত্যাশায় তরুণদের মেধা দক্ষতায়, সৃজনশীলতায় সর্বোচ্চ বিকাশে এ্যাকটিভ সিটিজেন ইয়ুথ লিডারশীপ ট্রেনিং করিয়ে আসছে।

একুশে/এএ/এটি