রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

নারী দিবসঃ নারীর সংগ্রাম এবং মুক্তির ইতিহাস

| প্রকাশিতঃ ৮ মার্চ ২০১৮ | ১০:৪১ পূর্বাহ্ন

একুশে ডেস্ক : ১৯০৮ সালের ৮ই মার্চ। ছিমছাম এক সকালে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় বের হয়ে এলো পনেরো হাজার নারীকর্মী, যাদের মধ্যে ছিল অনেক অভিবাসীরাও। নিউ ইয়র্কের পূর্ব পাশের রাস্তায় তারা মার্চ করতে লাগল। উচ্চকিত হতে লাগল তাদের গলার স্বর। এত দিনের ক্ষোভ যেন উগড়ে বের হতে লাগল। একই গার্মেন্টসে পুরুষের চাইতে বেশি ঘণ্টা কাজ করেও তাদের বেতন কম। যাচ্ছেতাই পরিবেশ, নেই কোন স্যানিটেশনের সুবিধা। শুধু জেন্ডারে নারী হবার কারণে তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে কম মজুরির কাজগুলো। দক্ষতার কাজগুলো করার অধিকার কেবল পুরুষদের। তাই পুরুষদের বেতন বেশি, কাজের সুযোগ বেশি। দিনের পর দিন এই শোষণ আর অবিচার মানতে পারছিল না তারা। অবশেষে তারা বেরিয়ে এলো মুক্তির আশায়।

এখন ২০১৮ সাল। প্রায় ১১০ বছর পরে প্রশ্ন থেকে যায়, সেদিনের সেই নারীমুক্তি মিলেছে কি না! বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রই অবশ্য মেনে নিয়েছে ‘কাজের কখনো জেন্ডার হয়না’। কিন্তু নারী হিসেবে এখনো কি নারীরা বঞ্চনার শিকার হয়না? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই আবার চলে এলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সারা বিশ্ব মহাসমারোহে এই দিনটিকে বরণ করে নেবার জন্য প্রস্তুত। এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “Press For Progress”।

বাংলাদেশের নারী এবং শিশু মন্ত্রানালয় থেকে এবারের নারী দিবসের জন্য প্রতিপাদ্য বিষয় রাখা হয়েছে,

“সময় এখন নারীর” উন্নয়নে তারা বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরে কর্ম জীবন ধারা”

গত কয়েকবছর ধরে আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষও পালন করছে এই দিনটিকে। গত দশকেও এই বিপুল আয়োজন কিন্তু দেখা যায়নি। এখন বাংলাদেশের মানুষের উৎসবমুখর জীবনে নারী দিবস আরেকটি নতুন সংযোজন।

নারী দিবসের ইতিহাস
১৯০৮ সালে নিউইয়র্কে নারীকর্মীদের ওই ধর্মঘটের পর ১৯০৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখে আমেরিকান সোশালিস্ট পার্টি নিউইয়র্কে প্রথম “ন্যাশনাল উইমেন ডে” পালন করে। বিভিন্ন সূত্রমতে জানা যায়, ১৯০৮ সালে নারীকর্মীদের স্ট্রাইকের আগেও ১৮৫৭ সালে ৮ই মার্চ, সুতা কারখানার নারীরা স্ট্রাইক করে। তবে বেশকিছু সূত্র ১৮৫৭ সালের ওই ঘটনাকে ‘মিথ’ হিসেবে অভিহিত করে। এমনকি ইন্টারন্যাশনাল উইমেন’স ডে’র অফিশিয়াল ওয়েবসাইটেও ১৮৫৭ সালের ওই স্ট্রাইকের কোন ঘটনা উল্লেখ নেই।

তাই বলা হয়ে থাকে নিউইয়র্কের রাস্তায় নারীদের প্রথম বিপ্লব ছিল ১৯০৮ সালেই। বরং প্রথম “ন্যাশনাল উইমেন’স ডে” পালন করার বছরেই আবার নারীকর্মীরা স্ট্রাইক করে। ব্লাউজ তৈরির কারখানায় ১৯০৯ সালের নভেম্বর থেকে ১৯১০ সালের জানুয়ারি অবধি টানা তিনমাসের স্ট্রাইক চালায় বিশ হাজার নারীকর্মী। যাদের নেতৃত্ব দেন ক্লারা লেমলিখ। এই স্ট্রাইকটি ইতিহাসের পাতায় “Uprising 20,000” হিসেবে পরিচিত।

১৯১০ সালের আগস্ট মাসেই, কোপেনহেগেনে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই নারী সম্মেলন আয়োজন করার পুরো কৃতিত্ব সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনালদের (যারা ১ মে কে বিশ্ব শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল)। এই সম্মেলনেই জার্মান সোশ্যালিস্ট লুইস জিজ “নারীদের জন্য একটি বিশেষ দিন” পালনের প্রস্তাব দেন। উপস্থিত বিভিন্ন সোশালিস্ট এবং কমিউনিস্ট নেতাকর্মীরা তার এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানায়। কিন্তু বছরের কোন দিনটি সেই বিশেষ দিন হবে তা সেদিন আলোচনা করা হয়নি।

১৭টি দেশের ১০০ জনেরও বেশি ডেলিগেট এই প্রস্তাবনা লুফে নেন। কারণ তখনো নারীরা ভোট দেবার অধিকারপ্রাপ্ত হয়নি। সেইজন্য তারা মনে করেছিল, ভোটাধিকার পাওয়ার আন্দোলনে এই বিশেষ একটি দিন অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। আর তাই পরের বছরেই ১১ মার্চ অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম নারী দিবসে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল।

একুশে/এএ