সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

দিয়াজ হত্যা মামলা ফের তদন্ত করবে সিআইডি

প্রকাশিতঃ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ | ২:০০ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় হাটহাজারী থানায় তার মায়ের করা হত্যা মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার পুলিশ সদর দফতর থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ হাটহাজারী থানায় পৌছে বলে মঙ্গলবার দুপুরে একুশে পত্রিকাকে জানান ওসি বেলাল উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর।

এর আগে ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বরে দিয়াজের লাশ উদ্ধার হয়। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম ময়নাতদন্তের পর ২৩ নভেম্বর চিকিৎসকরা আত্মহত্যার কথা বলেন। ওই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা জাহেদা আমিন বাদী হয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। আদালত সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলে। কিন্তু এক বছরেও তদন্ত শেষ করতে পারেনি সিআইডি।

এরইমধ্যে দিয়াজ খুনের অভিযোগ এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করার জন্য চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে একাধিকবার আবেদন করা হয়; সে সময় আবেদন খারিজ করে দিয়ে এ নিয়ে জজ আদালতে রিভিশন করার পরামর্শ দেয় আদালত।

এদিকে আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য দিয়াজের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই ছাত্রলীগ নেতার দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার চিকিৎসকের বরাত দিয়ে গত ৩০ জুলাই সিআইডি সর্বপ্রথম জানায়, দিয়াজের মৃত্যু শ্বাসরোধজনিত হত্যাকান্ড।

এরপর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের আদেশের রিভিশন করা হলে দিয়াজকে খুনের অভিযোগ ‘এফআইআর’ হিসেবে নিতে গত ২৩ অক্টোবর হাটহাজারী থানাকে নির্দেশ দেয় চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা জজ মো. নূরে আলম; ওই আদেশে বিচারক লিখেছেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের দেওয়া ময়নতদন্ত প্রতিবেদন দেখে প্রতীয়মান হয় যে, ভিকটিম দিয়াজ ইরফান চৌধুরীকে আঘাতপূর্বক হত্যা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে অভ্যন্তরীন কোন্দল ও অন্যান্য কারণে এই হত্যাকান্ড সংগঠিত হয় মর্মে প্রাথমিকভাবে তদন্তে (সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন) প্রতীয়মান হয়। অভিযোগে বর্ণিত আসামিগণ কর্তৃক অত্র হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে কিনা ইহা চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষ বিষয়।’

এরপর থেকে মামলাটি তদন্ত করে আসছিলেন হাটহাজারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহির উদ্দিন।

এ মামলায় উচ্চ অদালত থেকে নেওয়া ছয় সপ্তাহের অন্তবর্তীকালীন জামিন শেষ হওয়ার পর গতকাল সোমবার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার। আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম মুন্সি মশিউর রহমান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর আনোয়ার হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর সোমবার দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করে ছাত্রলীগের একাংশ।এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে গিয়ে তালা দেয়ারপাশাপাশি শাটল ট্রেনের হোস পাইপ কেটে রেল চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা।

এ ছাড়া মঙ্গলবার সকালেও ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেওয়ায় ক্যাম্পাস থেকে কোনো বাস শহরে আসতে পারেনি। শাটল ট্রেনও যেতে পারেনি শহর থেকে ক্যাম্পাসে।

অবরোধকারীদের নেতৃত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও দিয়াজ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আলমগীর টিপু বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এতে আমাদের সমর্থন রয়েছে। শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত এ ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।

এদিকে গত রোববার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে আলমগীর টিপু অভিযোগ করেন, দিয়াজ হত্যা মামলার আসামিদের আইনী সহায়তা পেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবি সমিতির সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা জুবাঈদা ছরওয়ার নিপা হলেন দিয়াজের বড় বোন। এই আইনজীবির বিরুদ্ধে সেদিন ‘নানা অভিযোগ’ আনেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির একাংশের নেতারা।

রোববার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপু বলেন, ‘সিনিয়র আইনজীবিদের কাছে গিয়ে আমাদের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন নিপা। কোন আইনজীবি যাতে আমাদের পক্ষে মামলা পরিচালনা না করেন সে জন্য তিনি চাপ প্রয়োগ করছেন।’

জুনিয়র আইনজীবিদের অনেককে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে দিয়াজের বোন নিপা হুমকি দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর টিপু।

তিনি বলেন, ‘আইনজীবিদের জন্য নির্মিত ভবনে অতিরিক্ত কক্ষ বরাদ্দ পাওয়াসহ বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা আদায় করছেন নিপা। দিয়াজের মৃত্যুর আগে আইনপেশায় সক্রিয় না থাকা জোবাঈদা ছরওয়ার নিপা এখন বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের প্যানেল আইনজীবি। তিনি নিজেকে আইনজীবিদের নিয়ন্ত্রক হিসেবে জাহির করে বেড়াচ্ছেন। তিনি সবসময়ই বলে আসছেন, কোন আইনজীবিই তার কথার বাইরে গিয়ে এই মামলায় দাঁড়াবে না।’

লিখিত বক্তব্যে আলমগীর টিপু জানান, প্রেমঘটিত কারণ, পারিবারিক অশান্তি, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে দিয়াজের নিজের গ্রুপের কর্মীদের হাতে লাঞ্চিত হওয়া, অতিরিক্ত মাত্রায় ইয়াবা সেবনসহ গ্রুপের ভেতর বিরাজমান অসন্তোষ ও রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা হওয়া জনিত কারণসহ একাধিক কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়া থেকে দিয়াজ ইরফান চৌধুরী আত্মহত্যা করেছেন বলে তিনি পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি রক্ষায় কাজ করেন শিক্ষক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। এ কারণে শত্রুতাবশত তার বিরুদ্ধে ভূমি দখলকারীরা দায়ের করেছে ১৫ থেকে ২০টি মামলা। যেসব মামলার বেশিরভাগই তিনি খালাস পেয়েছেন। ভূমি দখলকারীদের ইন্ধনে দিয়াজের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেনকে জড়ানো হয়েছে।’

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দিয়াজের মৃত্যু শ্বাসরোধজনিত হত্যাকান্ড বলা হলেও ওই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

দিয়াজের মৃত্যু-রহস্য এখনো উন্মোচন হয়নি। এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণকাজের দরপত্র নিয়ে বিরোধ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়ুয়া এক মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে দিয়াজের জটিলতা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে।