রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

অপু বিশ্বাসের জন্য এলিজি…

| প্রকাশিতঃ ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ | ৭:১১ অপরাহ্ন

কাজী আরমান, ঢাকা : গত রাতে (মঙ্গলবার) জনপ্রিয় টকশো একাত্তর জার্নাল দেখে অনুভব করলাম চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের প্রথম অপরাধ, তিনি একজন নারী এবং সেই নারীত্ব থেকে মা হয়েছেন। তার অপরাধ- জাতধর্ম না মেনে ধর্মান্তরিত হয়ে একজন ভুল মানুষকে ভালোবাসা এবং তাকে বিশ্বাস করা।

দেশের মানুষ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন জানি না। তবে আমার মনে হয় চিত্রনায়ক শাকিব খান এক ধরনের বিকৃত রুচি বা যৌনবিলাসী মানুষের পরিচয় দিয়েছেন অপু বিশ্বাসকে ডিভোর্স দিয়ে। তিনি তার ডিভোর্সের কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন- তার ছেলে আব্রাহাম খান জয়কে গৃহপরিচারিকার কাছে রেখে অপু বিশ্বাস ভারতে চলে যাওয়া।

আমার মতো অনেকর বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে, যেই মা সন্তানের জন্য দশ মাস দশ দিন লুকিয়ে লুকিয়ে যুদ্ধ করেছিল আর সেই মা তার সন্তানকে রেখে অনিরাপদ অবস্থায় রেখে যেতে পারেন কিনা সেই প্রশ্ন রয়েই যায়। যদি করে থাকেন তবুও বিবাহবিচ্ছেদের মতো ধর্তব্য কোনো অপরাধ নয়।

স্বার্থপর পৃথিবীতে হয়ত অপু বিশ্বাসের মত মা কিংবা নারীদের কোনো মূল্যায়ন হবে না। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি আমরা নিজেদের পুরুষ হিসাবে দাবি করা মানুষগুলো কতটা নিজেদের পুরুষত্বের পরিচয় দিচ্ছি। ভাবা না ভাবা হয়ত একজন মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্ত কিছু কিছু জিনিস কি আসলেই ব্যক্তিগত হিসাবে দেখা যায় না। আসলেই কি ব্যক্তিগতভাবে দেখা খুব দরকার । শাকিব খান কিংবা একজন অপু বিশ্বাস- কারো পক্ষে আমি নই। আমি একজন নিগৃহীত নারীর পক্ষ নিচ্ছি, যিনি আব্রাহাম খান জয়ের মা। তিনি তো আমারই মা হতে পারতেন কিংবা হতে পারে আপনার মা। তখন কি আমি আপনি একজন চিত্রনায়িকা হিসাবে দেখবো।

অপু বিশ্বাস তার ছেলে এবং স্বামী শাকিব খানের দিকে তাকিয়ে বিগত দিনে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা অতুলনীয়। একজন মা হিসাবে অপু বিশ্বাসের পক্ষ আমার মত অনেকেই নেবেন। কারণ যে মা একজন সুপার স্টার নায়িকা হয়েও টানা আট বছর ত্যাগ করে গেছেন তার একান্ত প্রাপ্য সুখ যা তিনি ত্যাগ করেছেন শুধুমাত্র ভালোবাসার মানুষকে খুশি রাখার জন্য।

শাকিব খানের যৌনবিলাসী মন অপু বিশ্বাস থেকে অপু ইসলাম খান হওয়া সেই ফিল্ম সুপার স্টার অপুকে ডিভোর্সের দিকে নিয়ে গেছে খুব সহজভাবে। আবার অনেকেই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এমনটাই হওয়া স্বাভাবিক মনে করেন। কারণ বাংলা চলচিত্র অঙ্গনে ভাঙাগড়ার মত কাজ প্রতিনিয়ত ঘটছে। কিন্তু আপনারা কি ভেবে দেখেছেন একজন ভালোবাসার মানুষের মন নিতে গিয়ে আর কত জনের ভালোবাসা হারাতে হয়েছে। একজন মানুষের প্রথম পরিচয় সেই কোনো না কোনো ধর্মে জন্ম নেয়া একজন মানব কিংবা মানবী। অপু বিশ্বাস তো সেই প্রথম পরিচয়টাও হারিয়েছেন শুধু ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য ।

তাকে একজন নায়িকা হিসাবে নয়, একজন মা হিসাবে দেখুন। তাকে একজন অপু বিশ্বাস হিসাবে নয় তাকে একজন সর্বোচ্চ ত্যাগী নারী হিসাবে দেখুন। না হয় একজন নারী বা মায়ের প্রতি যে শ্রদ্ধা থাকা দরকার তার অবমূল্যায়ন করা হবে।

পরিশেষে একটা কথা না বললেই নয়, জীবন কখনো কখনো নিজের চেয়েও একটু বেশিই ভাবায় কষ্টের ওপর কষ্ট দিয়ে দুচোখ দিয়ে শুধু্ অশ্রু ঝরায়। যে সন্তানের জন্য আজ সর্বোচ্চ প্রাপ্তির বিসর্জন দিয়েছেন, যে সন্তানের পিতৃপরিচয়ের জন্য গণমাধ্যমের কাছে বাধ্য হয়ে সন্তানের মর্যাদা চেয়েছিলেন আজ সেই সন্তানের জন্যই একজন মাকে স্বামীর তালাকনামার নোটিশ পেয়ে কাঁদতে হয়েছে। আসলেই জীবন নাটকের গল্পে আমরা সাবাই অভিনেতা।