জনরোষের মুখে পিছু হটে মোবাইল কল, ইন্টারনেট ব্যবহার, রেস্টুরেন্ট এবং ওষুধের ওপর থেকে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বুধবার এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, দু-একদিনের মধ্যে নতুন ভ্যাট হারের আদেশ জারি হতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে বাংলাদেশকে কর-জিডিপি অনুপাত দশমিক ২ শতাংশ বাড়ানোর শর্ত দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে এনবিআর ৯ জানুয়ারি শতাধিক পণ্যের ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, বিস্কুট, আচার, টমেটো কেচাপ/সস, সিগারেট, জুস, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন, ফলমূল, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, মিষ্টি, চপ্পল (স্যান্ডেল), বিমান টিকিটসহ অনেক পণ্য ছিল।
মোবাইল কল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে ২৩ শতাংশ এবং হোটেল-রেস্টুরেন্টের ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। এ নিয়ে জনমনে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকরা ভ্যাট বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে ভোক্তাদের সাথে প্রায়শই বচসা, এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। ভ্যাট না কমালে আন্দোলনে নামা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় থাকবে না।
দেশি ব্র্যান্ড টুয়েলভের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল রাকিব পোশাকের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধিকে “আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত শিল্প, ভোক্তা ও সরকার সবার জন্যই ক্ষতিকর।
তবে, পটেটো ফ্ল্যাকস, কর্ন স্টার্চ, বিস্কুট, কেক, আচার, চাটনি, টমেটো সস, টমেটো কেচাপ, আম, আনারস, পেয়ারা, তেঁতুলের পেস্ট, লুবব্লেন্ডিং অয়েল, আমদানিকৃত বিটুমিন, রড তৈরি কাঁচামাল, এইচ আর কয়েল, সিআর কয়েল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন, সানগ্লাস, চশমার ফ্রেমের ভ্যাট হার অপরিবর্তিত থাকছে। বাদাম, তাজা-শুকনা সুপারি, তাজা-শুকনা আম, কমলা লেবু, লেবুজাতীয় ফল, আঙুর, তরমুজ, তাজা ফল, ফলের রস, সাবান-ডিটারজেন্ট, রং তৈরির কাঁচামালের সম্পূরক শুল্কও অপরিবর্তিত থাকছে।
বিমান টিকিটের আবগারি শুল্ক হারও অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “আইএমএফের শর্তে ভ্যাট হার বৃদ্ধির পর সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে সরকারের ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এ অবস্থায় ওষুধ, মোবাইলের মতো জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট খাতের ভ্যাটহার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”