শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

ফটিকছড়ির এসিল্যান্ডের অশ্রুসিক্ত বিদায়, কাঁদলেন আর কাঁদালেন

প্রকাশিতঃ ১০ জানুয়ারী ২০২৫ | ৫:৪৮ অপরাহ্ন


এস এম আক্কাছ, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা থেকে বিদায় নিলেন এসিল্যান্ড-সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেজবাহ উদ্দিন। ৯ মাস ১৭ দিনের কর্মজীবনে সততা, নিষ্ঠা ও জনসেবার মাধ্যমে তিনি জয় করে নিয়েছিলেন ফটিকছড়িবাসীর হৃদয়। পদোন্নতিজনিত কারণে চলে যাওয়ায় তাঁর বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান রূপ নেয় অশ্রুসিক্ত এক বিদায় পর্বে।

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারী) রাতে উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক হলে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল হল।

বক্তারা যখন মো. মেজবাহ উদ্দিনের কর্মজীবনের প্রশংসা করছিলেন, তখন অশ্রুসিক্ত নয়নে তা শুনছিলেন অনেকে। বিশেষ করে ছাত্রনেতা ইউসুফ বিন সিরাজের আবেগঘন বক্তব্যে উপস্থিত সবাই অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি। তিনি বলেন, “আমরা এমন একজন কর্মকর্তাকে হারাচ্ছি যিনি ছিলেন উপজেলাবাসীর আশীর্বাদ। তাঁর চলে যাওয়া আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।”

উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আহমদ আলী চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান আকাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। সংবর্ধিত অতিথি ছিলেন বিদায়ী সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেজবাহ উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, “মো. মেজবাহ উদ্দিন যোগদানের পর ফটিকছড়ি উপজেলা ভূমি কার্যালয় দুর্নীতিমুক্ত হয়েছে। তাঁর সততা, নিষ্ঠা ও জনসেবার মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর চলে যাওয়ায় ফটিকছড়িতে যে শূন্যতা তৈরি হবে তা সহজে পূরণ হবার নয়।”

বিদায়ী বক্তব্যে মো. মেজবাহ উদ্দিন নিজেও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অশ্রুসিক্ত কন্ঠে তিনি বলেন, “মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। ভূমি সেবায় মানুষের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করেছি। কার্যালয়কে শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত রেখেছি। মানুষের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তাদের এই ভালোবাসার প্রতিদান আমি কখনো দিতে পারব না।”

অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “মেজবাহ একজন চৌকশ, নির্ভীক ও পরিবেশবাদী কর্মকর্তা। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি তাকে নত করতে চেয়েছেন, কিন্তু তিনি নীতির প্রশ্নে আপস করেননি। ভূমি কার্যালয় সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা তিনি দূর করতে পেরেছেন।”

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রকৌশলী তন্ময় নাথ, ফটিকছড়ি থানার ওসি (তদন্ত) মো. রফিকুল আলম, ইউআরসি ইনস্ট্রাকটর ইমরান হোসাইন, সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, রাজনীতিবিদ সরোয়ার মফিজ, বিবিরহাট বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি এস এম ইলিয়াছ, শিক্ষক নেতা রনজিৎ ভট্টাচার্য এবং সাংবাদিক নেতা এস এম আক্কাছ।

অন্যন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক শহীদুল আলম, মো. রফিকুল ইসলাম, এনামুল হক, জিপন উদ্দিন, সালাউদ্দিন জিকু, মো. সেলিম, সিরাত মঞ্জুর, কামরুল সবুজ, ওবায়দুল আকবর রুবেল, ইউছুফ আরাফাত, সাইফুল ইসলাম, মো. সাইফুদ্দিন, মীর আখতারুজ্জামান রুবেল, আবসার নুরী ও বরুণ আর্চায্য প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের শেষে প্রেসক্লাব কর্তৃক প্রকাশিত বর্ষপঞ্জি ‘নৈসর্গ ফটিকছড়ি’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়।