চট্টগ্রাম : বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের আপ্যায়ন-ব্যয় মেটানোর নামে একটি হোটেল-মালিক থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ খণ্ডাতে একটি ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ ভিডিও কথোপকথন করেছেন চুয়েট ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ ইমাম বাকের।
রোববার একুশে পত্রিকা কার্যালয়ে ভিডিও ক্লিপটির পাশাপাশি একটি প্রতিবাদলিপিও পাঠিয়েছেন তিনি। এর আগে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) একুশে পত্রিকায় ‘ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগের নামে চাঁদাবাজি চুয়েটে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তারই প্রেক্ষিতে চুয়েট ছাত্রলীগ নেতা বাকের চাঁদাবাজির অভিযোগ থেকে বাঁচতে এধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ছাত্রলীগের বিলুপ্ত হওয়া আহ্বায়ক কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য সৈয়দ ইমাম বাকের লিখিত প্রতিবাদে দাবি করেছেন প্রকাশিত সংবাদটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
প্রিয় নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীনের দেখানো পথে চলছেন জানিয়ে বাকের বলেন, ‘কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে তিনি জড়িত নন এবং যেই ব্যবসায়ীর (হোটেল গরীবে নেওয়াজ-এর স্বত্তাধিকারী মো. আনোয়ার) কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা হয়েছে বলে সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওই ব্যবসায়ী কোথাও এধরনের কোনো অভিযোগ করেননি কিংবা এ সংক্রান্তে হোটেল-মালিক আনোয়ারের সঙ্গে একুশে পত্রিকারও কোনো কথা হয়নি। কোনো ধরনের কথা না বলে আনোয়ারের বরাতে তার ঈর্ষন্বীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে।’
এই মর্মে আনোয়ারের সঙ্গে বাকেরের একটি ‘ভিডিও কথোপকথন’ তৈরি করে একুশে পত্রিকা কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এসময় সংবাদটি ‘আর্থিক বিনিময়’-এর মাধ্যমে করা হয়েছে বলেও দাবি করেন বাকের।
পাঠানো ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, গরীবে নেওয়াজ হোটেলের মালিক মো. আনোয়ারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছেন ছাত্রলীগ নেতা বাকের। তাকে দিয়ে বলানোর চেষ্টা করছেন তার (আনোয়ার) কাছ থেকে বাকের চাঁদা দাবি করেননি এবং কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেননি আনোয়ার। এটা যে নিজের অপরাধ ঢাকার জন্য একটা হালকা, খেলু ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ প্রকারান্তরে সেটিই স্পষ্ট হয়েছে দেড় মিনিটের ভিডিও ক্লিপে।
সেই ভিডিও কথোপকথনে উপস্থাপকের ভূমিকায় একজন বলছেন, এখানে উপস্থিত আছেন হোটেল গরীবে নেওয়াজের মালিক শ্রদ্ধেয় আনোয়ার ভাই এবং চুয়েট ছাত্রলীগের শ্রদ্ধেয় সৈয়দ ইমাম বাকের ভাই, যার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে। এরপর বিনয় ও চোখেমুখে অপরাধবোধ নিয়ে শুরু করেন বাকের; আনোয়ারকে সামনে রেখে বলেন, ‘আচ্ছা ভাই, গতকাল চাঁদাবাজির একটি নিউজ অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে, এখন এই জিনিসটা আপনি বলেন যে, এই ধরনের কোনো কথা আপনার সাথে হয়েছে?’
অনেকটা গম্ভীর গলায় আনোয়ার বলছেন, ‘না চাঁদাবাজির কোনো কথা নেই। আমার সাথে বাকেরের সম্পর্ক আছে এটাই বেস্ট। আমার একটা অনুরোধ যাতে ভবিষ্যতে চুয়েটের কোনো স্টুডেন্ট আমাকে ডিস্টার্ব না করে বাকেরের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে।’
‘এটা আমি দায়িত্ব নিয়েছি। আপনি বলেন, এ পর্যন্ত যখন কোনো সমস্যা, সুবিধা-অসুবিধা বলছেন আমি দেখিনাই এরকম কখনো হইছে’- বলেন বাকের। মাথা নেড়ে শরীর দুলিয়ে আনোয়ার উত্তর দেন ‘না’, ঠিক আছে।
‘ঠিক আছে? আমার ছেলেরা যাতে কখনো কোনো বাকি না খায়’-বাকেরের এ কথার উত্তরে আনোয়ার জবাব দেন, ‘কারো সাথে যদি মনে মিলে বাকি দিতে অসুবিধা কী আমার, যদি ওর সাথে আমার দ্বিমত হয় তাহলে বাকি দেব কেন?’ এরপর বাকের বলেন, ‘সেটাই সেটাই। এখন বলেন যে, আমার সাথে আপনার কখনোই এরকম কোনো…।’ আনোয়ার বলেন- ‘সম্পর্কই ছিল।’
‘ভাই নিউজগুলো যেটা, যে নিউজগুলো হইছে সে সম্পর্কে আপনি কিছু জানেন?’ বাকেরের জিজ্ঞাসায় আনোয়ার বলেন, ‘আমি কিছু জানি না ওটা, পরে আমারে জানাইছে ওরা আমি বলছি যে আমার তো নিউজ করার কোনো ইয়া নাই, আমার চেয়ারম্যান আছে, আমার চেয়ারম্যান যতটুকু জানে ততটুকু করবে এটা।’
এরপর ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে উপস্থাপকের ভঙ্গিতে বাকের বলেন, ‘তাহলে নিউজ সম্পর্কেও তিনি কিছু জানেন না। তাকে উদ্ধৃত করে যে নিউজ হয়েছে সে নিউজ সম্পর্কে ওনি কিছু জানেন না। ভাই অসংখ্য ধন্যবাদ, আর সবসময় সহযোগিতায় আপনাকে যেন পাশে পাই এটাই আপনার কাছে আশা করি। আর আমরা চুয়েট ছাত্রলীগ সবসময় আপনার পাশে থাকবো। ধন্যবাদ।’
সোমবার দুপুর ৩টার দিকে টেলিফোন করে গরীবে নেওয়াজ হোটেলের মালিক মো. আনোয়ারের কাছে ‘ভিডিও কথোপকথন’ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকারের বিষয়ে জানতে চাইলে একুশে পত্রিকাকে তিনি বলেন, তার (বাকের) অনুনয়, বিনয় ও আমার কিছু কাছের মানুষের অনুরোধে একটা পরিস্থিতিতে ভিডিওটি করেছিল। সেখানে তারা আমাকে বলতেই দেয়নি, বাকের তার স্বার্থসংরক্ষণ হয় এমন কিছু কথা বলে ভিডিওটা ধারণ করেছে। এসময় চুয়েট ছাত্রলীগ নেতা বাকেরকে হঁশিয়ার করেন তিনি। বলেন, ‘তাকে (বাকের) বাড়াবাড়ি করতে ‘না’ করেন। বেশি বাড়াবাড়ি করলে পুরো ফাইল ফুটেজ ছড়িয়ে দেওয়া হবে।’
প্রতিবেদকের বক্তব্য : চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তদন্ত এবং ভুক্তভোগী হোটেল-মালিক মো. আনোয়ারের বক্তব্যের ভিত্তিতে সংবাদটি পরিবেশন করা হয়েছে। আনোয়ারারে সঙ্গে একুশে পত্রিকার আলোচনার পুরো রেকর্ডটি পাঠকদের জন্য এই নিউজে উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো।
এছাড়া অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা বাকের একুশে পত্রিকায় পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে তার ভাবমূর্তি বিনষ্টের জন্য আর্থিক বিনিময়-এর মাধ্যমে সংবাদটি প্রচার করা হয়েছে বলে একটি হাস্যকর, গতানুগতিক অভিযোগ এনেছেন। তবে কার কাছ থেকে, কখন, কীভাবে, কোথায় ‘আর্থিক বিনিময়’-এর ঘটনা ঘটেছে কিংবা এর সপক্ষে কী তথ্য-প্রমাণ আছে সে ব্যাপারে কিছুই জানাতে পারেননি বাকের।
# ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগের নামে চাঁদাবাজি চুয়েটে