বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১

শেখ হাসিনা ও পরিবারের বিরুদ্ধে বড় দুর্নীতির অভিযোগ, দুদকের তদন্ত শুরু

প্রকাশিতঃ ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৯:২৮ পূর্বাহ্ন


ঢাকা : ভারত সরকারের আশ্রয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ একের পর এক সামনে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, রূপপুরসহ মোট ৯টি প্রকল্পে শেখ হাসিনা পরিবারের ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি এবং ৩০ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ৩,৬০০ কোটি টাকা) পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে বিশেষ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য স্থান। অভিযোগ অনুযায়ী, এই প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে প্রকল্প থেকে ১২.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দুর্নীতির অভিযোগে প্রধান নাম হিসেবে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। অভিযোগ অনুযায়ী, তারা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে এই দুর্নীতি সংঘটিত করেছেন। এই দল দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাচার করেছেন।

দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান দল প্রাথমিক অনুসন্ধানে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে। অভিযোগের সূত্র অনুযায়ী, টিউলিপ সিদ্দিকের চাচা তারিক আহমেদ সিদ্দিক ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তার স্ত্রী ও মেয়ে ‘প্রচ্ছায়া লিমিটেড’ নামে একটি ভুয়া কোম্পানির অংশীদার ছিলেন। এই কোম্পানি এবং আরেকটি বিতর্কিত কোম্পানি ডেসটিনি গ্রুপের মাধ্যমে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে। এই অর্থ দিয়ে যুক্তরাজ্যে জুমানা ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড প্রপার্টিজ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি খোলা হয়েছে।

রাশিয়ার কাছ থেকে ৪০০ কোটি পাউন্ড ঘুষ নেয়ার অভিযোগে, যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ করার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। রোববার রাতে লন্ডনে টিউলিপের কার্যালয়ে যান ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার ন্যায় ও নৈতিকতাবিষয়ক বিভাগের সদস্যরা। এই তদন্তের মাধ্যমে আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলছে।

২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বনাম রিজভি আহমেদ মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম প্রথমবার অর্থ পাচারে সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে আসে। পরে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে জয়ের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। তদন্তে জানা যায়, হংকং ও কেম্যান আইল্যান্ডসের বিভিন্ন অফশোর অ্যাকাউন্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে। মার্কিন বিচার বিভাগের সিনিয়র অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলস এবং স্পেশাল এজেন্ট লা প্রেভট ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরের প্রমাণ পেয়েছেন।

দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান দল নির্বাচন কমিশন এবং পাসপোর্ট বিভাগ থেকে হাসিনা পরিবারের সদস্যদের পরিচয়সংক্রান্ত নথি সংগ্রহ করেছে। এরপর এসব নথির তথ্য উল্লেখ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি ও বিবরণ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে করে দুর্নীতির পরিমাণ এবং পাচারের পথ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

১৮ ডিসেম্বর দুদক পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ অনুসন্ধান দল গঠন করেছে। দলের নেতৃত্বে রয়েছেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামান, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত, এসএম রাশেদুল হাসান ও একেএম মর্তুজা আলী। এই দল আটটি প্রকল্পে ২১ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ৫৯ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করবেন।

দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, “এটা এখনো অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে। অনেক ঘটনা সত্য এবং অনেক তথ্য-উপাত্ত আসছে। সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য-উপাত্ত আসার পর বিস্তারিত জানানো হবে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, দুর্নীতির অনেক ঘটনা সত্য, এবং তদন্ত চলমান রয়েছে।

মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের (ডিওজে) সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলস এবং স্পেশাল এজেন্ট লা প্রেভট শেখ হাসিনা ও জয়ের লন্ডনের প্রতিনিধির মাধ্যমে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন। এই তথ্য-প্রমাণ দুদককে সরবরাহ করা হবে। এফবিআইয়ের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, শেখ হাসিনা ও জয়ের নামের সঙ্গে সম্পর্কিত ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের ঘটনা রয়েছে। এই তথ্যগুলো দুদকের কাছে পৌঁছেছে এবং শীঘ্রই কমিশন তাদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম শুরু করবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে মালয়েশিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের ৫ বিলিয়ন ডলার লোপাটের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রুল জারি করেছিলেন। দুদিন পর অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকারের আট প্রকল্পে ২১ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে কমিশন। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ৫৯ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগও দুদক হাতে পেয়েছে।