রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

শিরোপা বাংলাদেশ না ভারতের

অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ

প্রকাশিতঃ ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

খেলাধুলা ডেস্ক : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। গত বছর প্রথমবারের মতো মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্ব জয়ের গৌরব অর্জন করে টাইগার যুবারা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবার টানা দ্বিতীয় ট্রফি জয়ের একধাপ দূরে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সেই লক্ষ্যে আজ রবিবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে ভারতের যুবাদের মুখোমুখি হবে আজিজুল হাকিম তামিমের দল। বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায় শুরু হবে ম্যাচটি। খেলাটি সরাসরি সম্প্রচার করবে টি-স্পোর্টস।

যুব এশিয়া কাপের ১০ আসরের মধ্যে ৭ বার এককভাবে ও একবার যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন ভারত। ২০১৯ আসরের ফাইনালে প্রথমবার খেলতে নেমে তাদের কাছেই ৫ রানে হেরেছিল বাংলাদেশের যুবারা। ২০২৩ সালে সর্বশেষ আসরেও দুই দলের দেখা হয় সেমিফাইনালে। প্রতিশোধ তুলে বাংলাদেশ সেই ম্যাচে ভারতকে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় করে দেয়। পরে ফাইনালে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ১৯৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবার যুব এশিয়া কাপের শিরোপা উৎসবে মাতে ইয়াং টাইগাররা।

ভারতের বিপক্ষে ফাইনালের সুখস্মৃতিও আছে বাংলাদেশের যুবাদের। দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবার যুব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল আকবর আলীর বাংলাদেশ। প্রতি মুহূর্তে উত্তেজনা ছুঁয়ে গিয়েছিল রুদ্ধশ্বাস সেই ম্যাচে। বিশ্বকাপের চেয়ে মঞ্চ ছোট হলেও ভারতের জন্য এবারের লড়াইটাকে প্রতিশোধের মঞ্চ বলা যায়। অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্য তা শিরোপা ধরে রাখার লড়াই। তাতে স্নায়ুর বড় পরীক্ষাই দিতে হবে দুই দলের ক্রিকেটারদের।

বাংলাদেশের যুবাদের সবচেয়ে বড় শক্তি, দলগত ভারসাম্য। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ছন্দে আছেন ক্রিকেটাররা। দাপুটে পারফরম্যান্সে গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তান ও নেপালের বিপক্ষে জিতে সেমিফাইনালের টিকিট পায় জুনিয়র টাইগাররা। গ্রুপ সেরার লড়াইয়ে অবশ্য শ্রীলঙ্কার কাছে মাত্র ৭ রানে হেরে যায় লাল-সবুজের দল। শেষ চারের ম্যাচে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালের টিকিট কাটে টাইগার যুবারা।

ব্যাটিংয়ে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ অবশ্য তাকিয়ে থাকবে অধিনায়ক আজিজুল হাকিমের দিকে। ৪ ম্যাচে এক সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে ২২৪ রান নিয়ে আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় তার অবস্থান তিনে। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ছোট লক্ষ্য তাড়ায় দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর তার অপরাজিত ৬১ রানের ইনিংসেই ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ। শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে শিরোপা ধরে রাখার লড়াইটা কঠিন হবে, সেটি বেশ ভালোভাবেই টের পাচ্ছেন তিনি। তবে দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলতে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন তামিম। সেই সঙ্গে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি। সেমিফাইনালের পর বিসিবির এক ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘ফাইনালে আমরা আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। আমাদের সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামব ইনশাল্লাহ। সবাই আমাদের দোয়া ও সমর্থন করবেন।’

সর্বশেষ এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে ভারতকে ধসিয়ে দিয়েছিলেন মারুফ মৃধা। ১০ ওভারে ৪১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। দলের ভরসা হয়ে এই বাঁহাতি পেসার এবারও আছেন। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তার শিকার দুই উইকেট। গতবারের মতো এবারও তার সঙ্গী ইকবাল হোসেন ইমন। এই ডানহাতি পেসার ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ছিলেন উইকেটশূন্য। তবে সেমিফাইনালে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলাই করেছেন ইকবাল। ৭ ওভারে ২৪ রান দিয়ে নিয়েছেন চার উইকেট। ম্যাচ সেরার পুরস্কারের জন্য তাই খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি বিচারকদের। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচশেষে ফাইনালের পরিকল্পনা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে রহস্য রেখে দিয়েছেন ইকবাল, ‘আমি আমার জায়গা থেকে ভালো বোলিংয়ের চেষ্টা করব। খুব বেশি কিছু ভাবনায় নেই।’

চলতি আসরে বাংলাদেশের মতো কাকতালীয়ভাবে ভারতও গ্রুপপর্বে রানার্সআপ হয়েছিল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে হার দিয়ে টুর্নামেন্টে শুরু করেছিল তারা। তবে পরের দুই ম্যাচে জাপানকে ২১১ রানে ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ১০ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট পায় ভারত। এরপর সেমিতে শ্রীলঙ্কান যুবাদের ১৭০ বল হাতে রেখেই উড়িয়ে শিরোপার মঞ্চে পা রাখে মোহাম্মদ আরমানের দল।

ভারতীয় দলের এক্স ফ্যাক্টর হতে পারেন ওপেনার বৈভব সূর্যবংশী। ১৩ বছরের এই বিস্ময়বালক আছেন অসাধারণ ছন্দে। আসন্ন আইপিএলে দল (রাজস্থান রয়্যালস) পাওয়া বাঁহাতি এই ব্যাটার সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাওয়া সাত উইকেটের জয়ে ৩৬ বলে ৬৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন। যা সাজানো ছিল ছয়টি চার ও পাঁচটি ছক্কার মারে। তার এই ব্যাটিং ভোগাতে পারে বাংলাদেশকে।

কিন্তু মঞ্চটা যখন ফাইনাল, সব চোখরাঙানি উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হয়। যেখানে পরিসংখ্যান নয়, মাঠের ফর্ম কাজে আসে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ সেটি খুব ভালোভাবে জানে। আর প্রতিপক্ষ যখন ভারত, তখন রুদ্ধশ্বাস আরেকটি লড়াইয়ের অপেক্ষায় তো থাকাই যায়!