ঢাকা : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক বক্তব্যে রাজনীতির অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তিনি বলেছেন, বিএনপি চায় আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। এই বক্তব্যে শুধু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকারীদের মধ্যেই নয়, বরং রাজনৈতিক অঙ্গনেও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বক্তব্যকে ভুল ও ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “বিএনপি কখনোই আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সুপারিশ করেনি। জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।” বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, তারা কোনো দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। তবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবে বলে দলটির আশা।
অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। ছাত্র নেতা সারজিস আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, “গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে দেব না। প্রয়োজনে দ্বিতীয় অভ্যুত্থান হবে।”
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা গেছে। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, নতুন আইনে আদালতের রায়ের ভিত্তিতে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার বিধান রাখা হচ্ছে।
ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এ বিষয়ে কড়া বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ছাত্রদের রক্তের ওপর পা রেখে যারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করতে চায়, তারা ইতিহাসের গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে।” তার মতে, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টাকে জনগণের মুক্তির আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হবে।
তবে বিএনপি অভ্যন্তরে এ বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিএনপির একাধিক নেতার মতে, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে একতরফা নির্বাচন করলে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণেই বিএনপি চায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিক, যাতে জনগণের রায়ে তাদের পরাজিত করা যায়। বিএনপি নেতারা বলছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।
এদিকে, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার পেছনে ভারতীয় প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন ছাত্র-জনতা। তারা অভিযোগ করেছেন, বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের জন্য ভারতের সঙ্গে আপস করছে। ছাত্রনেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “দিল্লিকে কিবলা বানিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”
এদিকে, আজ বুধবার ‘কফিন মিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা। তাদের দাবিতে স্পষ্ট, আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি না করে রাজনৈতিক অঙ্গনে কোনো স্থান দেওয়া যাবে না।
সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। তবে বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, দলটি কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দিতে চায় না। মির্জা ফখরুল স্পষ্ট করেছেন, “আমরা চাই না আওয়ামী দুঃশাসন আবার ফিরে আসুক। জনগণই তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।”
অন্যদিকে, ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ছাড়া আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের কোনো প্রশ্নই আসে না।
রাজনীতির এই অস্থিরতা এবং বিভিন্ন পক্ষের বিতর্কের মধ্যেই দেশ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা এবং বিএনপির নির্বাচনী কৌশল নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা তুঙ্গে। এখন দেখার বিষয়, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়।