নজরুল কবির দীপু : ভোজ্যতেলের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি নিয়ে দেশে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছে। রোজা যখন ঘনিয়ে আসছে, তখন এই ধরনের কারসাজি তীব্র হয়ে উঠছে। বিশেষ করে, রোজা শুরুর আগের কয়েক মাস থেকেই ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে, যার ফলে দাম বাড়ানোর একটি পাকা সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
একদিকে যেমন রমজান মাসে পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়, তেমনি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগে নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য বাজারে মজুত করে রাখছে পণ্য এবং পরে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। এর ফলে ভোক্তাদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যা তাদের জীবনযাত্রার মান আরও খারাপ করছে। এটি একটি গভীর সমস্যা, যা দেশের অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকার ক্ষুণ্ন করছে।
আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বাজারে ভোজ্যতেলের দাম গত কয়েক মাসে অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে গেছে। সয়াবিন তেলের দাম এক মাসের মধ্যে ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং খুচরা বাজারে এখন এটি ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এই উচ্চমূল্যে তেল বিক্রি করছে।
এর ফলে সাধারণ মানুষ, যারা কম আয়ের, তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ধরনের কারসাজি প্রতিবছরই দেখা যায়, কিন্তু কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না, যার কারণে ব্যবসায়ীরা বারবার একই কাজ করে যাচ্ছে। একদিকে বাজারে তেলের দাম বাড়ানোর ঘটনা দেখা যাচ্ছে, অন্যদিকে বিক্রেতাদের কাছে তেলের অভাবও দেখা যাচ্ছে। এটি একটি সুস্পষ্ট সংকেত যে, সিন্ডিকেট বাজারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য সচেতনভাবে এসব কারসাজি করছে।
বাজারে তেলের দাম বাড়ানোর এই ঘটনাটি কোনো নতুন ঘটনা নয়। এর আগে চিনি এবং অন্যান্য নিত্যপণ্য সম্পর্কেও এমনই অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তদারকি সংস্থার অসৎ কর্মকর্তারা এবং ব্যবসায়ীরা একসাথে কাজ করে এসব সংকট তৈরি করে। অস্থির বাজারের কারণে সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়ছে, কিন্তু এর বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। মাঝে মাঝে সরকার এসব পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়, তবে তা বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা যায়। ফলে ব্যবসায়ীরা আবারও সুযোগ পেয়ে যায়।
এবারও প্রশ্ন উঠছে, বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধ করা সম্ভব হবে কি না। রোজার আগে থেকেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়ার এই প্রবণতা আমাদের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থিত হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী একদিকে যেখানে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে, সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সঠিক তদারকি না থাকায় তারা এই কাজটি বারবার করছে। এই পরিস্থিতি যদি পরিবর্তন না হয়, তবে কেবল ভোজ্যতেলের দামই নয়, অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বাড়বে এবং এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, কয়েক বছর ধরে এ ধরনের কারসাজির ফলে বাজারে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে ভোক্তারা সঠিক মূল্য পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন। গত কয়েক বছর ধরে বাজারে কারসাজির কারণে দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ ভোক্তারা অবর্ণনীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সরকারের উচিত ছিল বাজারের এই অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই দেখা গেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। একদিকে যখন বাজারে তেলের সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে, তখন সরকারের পক্ষ থেকে খুবই সীমিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাজারে তেলের সংকট এবং মূল্যবৃদ্ধি রোধে তদারকি ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা উচিত, যাতে ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে।
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর এই প্রবণতা এবং সরকারের দিক থেকে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপের অভাব দেশের জন্য এক বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু দেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই একে স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাজারে কোন অসাধু ব্যবসায়ী বা সিন্ডিকেট যাতে মূল্যবৃদ্ধি ঘটাতে না পারে, সে জন্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এছাড়াও, অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান আরও কঠোর করতে হবে, যেন তারা এ ধরনের কারসাজি করতে সাহস না পায়।
এমনকি যখন তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে, তখন ভোক্তারা বাজার থেকে পণ্য সংগ্রহ করতে সমস্যায় পড়ছে। এর কারণ হলো, কিছু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্য মজুত করছেন, যার ফলে বাজারে পণ্য পাওয়ার জন্য ভোক্তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই ধরনের পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। সরকার যদি বাজারের উপর আরও কঠোর নজরদারি এবং মনিটরিং চালায়, তবে এই ধরনের কারসাজি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
সোজা ভাষায় বলতে গেলে, বাজারে দাম বৃদ্ধির এই প্রবণতা একটি বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে রোজা আসন্ন হওয়ায়, কিছু ব্যবসায়ী এই সুযোগে বাজারে দাম বাড়াচ্ছে এবং সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। সরকারের উচিত এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
এছাড়াও, যারা এই ধরনের অসাধু কার্যকলাপে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে তারা এই ধরনের কাজ করার সাহস না পায়। সকলের জন্য একটি সুষ্ঠু এবং সুবিচারপূর্ণ বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরি।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, একুশে পত্রিকা।