চট্টগ্রাম : সরকারি জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে আটটি দোকানঘর। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য নেয়া হয় মিটারবিহীন অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই অপকর্ম করে আসছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনিরের পরিবারের সদস্যরা।
এসব অভিযোগ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার এটিএম শামসুদ্দীনের নজরে আসে গত ২৮ অক্টোবর; একইদিন তার নির্দেশে ওই এলাকায় গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পায় পল্লী বিদ্যুতের লোকজন। তাৎক্ষণিক বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবৈধ সংযোগ।
অভিযোগ উঠেছে, হাটহাজারী উপজেলার চারিয়া গ্রামের নয়াহাট এলাকায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমিতে আটটি দোকানঘর প্রতিষ্ঠা করেন মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির ও তার বড় ভাই আকতার সিকদার ও চাচাতো ভাই জসিম সিকদার।
ওই অবৈধ দোকানগুলোর অবস্থান থেকে ২০০ গজ দূরত্বে রয়েছে পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশন; অভিযোগ রয়েছে সেখান থেকে মিটার ছাড়া অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছিলেন হাটহাজারী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনিরের পরিবারের সদস্যরা। মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনীর হেফাজতে ইসলামী, হাটহাজারী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। হেফাজতের সমর্থন নিয়ে তিনি হেফাজত অধ্যুষিত এ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
পল্লী বিদ্যুৎ-৩ এর ডিজিএম মাহফুজুর রহমান একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘অবৈধভাবে পাশের একটি মিটার থেকে সংযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসায় গত ২৮ অক্টোবর নয়াহাট এলাকার চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- মেসার্স উলফাত ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, মেসার্স রাকিম এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স নজরুল ট্রেডিং ও মেসার্স সিকদার ট্রেডার্স। এ বিষয়ে আরও ব্যবস্থা নেয়ার বিষয় প্রক্রিয়াধীন আছে।’
সাব-স্টেশন থেকে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হতেও পারে। এটা আমরা তদন্ত করে দেখবো।’
স্থানীয় সূত্র বলছে, পল্লী বিদ্যুতের অসাধু লোকজনের সহায়তায় বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছিল তারা। এতে অন্তত ৫০ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল ফাঁকি দেয়া হয়েছে। এখন তারা তদবির করছেন পুণরায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে।
হাটহাজারী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে, তাদের একজন আমার বড় ভাই, আরেকজন চাচাতো ভাই। তাদের নাম্বার আপনাকে দিচ্ছি, আপনি বিস্তারিত কথা বলুন। আমি একটা পদে থাকায়, কেউ কেউ আমাকে এসব বিষয়ে জড়িয়ে দিচ্ছে।’
এদিকে চারিয়া এলাকার বাসিন্দা মাহবুব উল হক তার বসতঘরে বিদ্যুৎ নেয়ার জন্য আবেদন করে সফল হন; ওই বাড়িতে সংযোগ দেওয়ার প্রয়োজনে নয়াহাট এলাকার ওই সরকারি জমিতে খুঁটি বসানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কয়েক মাস আগে সেখানে খুঁটি বসাতে গেলে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের ভাইদের বাধার মুখে পড়েন পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ-৩ এর ডিজিএম মাহফুজুর রহমান একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘সেখানে ঝামেলা হয়েছে। খুঁটি না বসানোর জন্য চাপ আছে। তবে বিষয়টি আমরা মীমাংসা করার চেষ্টা করছি।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানার জন্য হাটহাজারী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুনিরের বড় ভাই আকতার সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়; তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘যে জায়গায় আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেসব জমি আমাদের। দোকানের পাশের জমিগুলোই হচ্ছে সরকারি। আমার ভাই একটা পদে আছে, তাই কোন কিছুই আমরা করতে পারি না। জমি দখলের যে বিষয়টি আসছে, সেটা একেবারে অবাস্তব, অসত্য।’
বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের সংযোগ পেতে দেরী হওয়ায় পাশের আরেকটি মিটার থেকে আমরা সংযোগ নিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন সংযোগ কেটে দিয়েছে। তবে মিটার পাওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত পেয়ে যাবো।’