আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের তরফ থেকে দেওয়া লেবাননে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎসও। অন্যদিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ প্রস্তাবে সরাসরি সাড়া না দিলেও, ইসরাইলি বাহিনীকে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে কাৎসও বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, ‘উত্তরে (লেবানন সীমান্ত সংলগ্ন দখলকৃত উত্তর ফিলিস্তিন) কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না। আমরা আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব, যতক্ষণ না আমরা বিজয় অর্জন করি এবং উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের (ইহুদি) নিরাপদে তাদের বাড়িতে ফেরাতে পারি’।
গত সোমবার থেকে লেবাননে ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের দাবি, ইরানের মদতপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হচ্ছে। হামলায় এখন পর্যন্ত ৬২০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার এক দিনে নিহত হয়েছেন ৭২ জন। আহত হন প্রায় ৪০০ জন।
বুধবার রাতে লেবাননে হিজবুল্লাহর ৭৫টি অবস্থানে বিমান থেকে বোমা হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইসরায়েল। দিনের শেষ দিকে লেবাননের ইউনিনে শহরের একটি তিনতলা ভবনে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এ ঘটনায় আরও আটজন আহত হন। হতাহতদের সবাই সিরিয়ার নাগরিক। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা এটি।
ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার মুখে লেবাননে ৯০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ২২ হাজারের বেশি মানুষ সীমান্ত পার হয়ে সিরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন বলে দেশটির গোয়েন্দা সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলের বিমান হামলার জবাবে দেশটির উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলা চালিয়েছেন হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা। রাফালে সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে এ হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। বিষয়টি স্বীকার করে ইসরায়েলে সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, দেশটির উত্তরাঞ্চল লক্ষ্য করে ৪৫টি রকেট ছুড়েছে হিজবুল্লাহ। কিছু রকেট ভূপাতিত করা হয়েছে। আর বাকিগুলো খোলা জায়গায় পড়েছে।
কাৎসও-এর এই মন্তব্য লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির আশার বিপরীতে এসেছে। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতিও প্রত্যাশা করেছিলেন একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হবে। কিন্তু ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে লেবাননে উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং স্থল অভিযানের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিষয়ে নেতানিয়াহুর অফিস জানায়, ‘এটি একটি মার্কিন-ফরাসি প্রস্তাব, যার প্রতি প্রধানমন্ত্রী কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি’।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাসদস্যদের উদ্দেশে দেশটির সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হালেভি বলেছেন, হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে লেবাননে ব্যাপক বিমান হামলা তাদের ‘শত্রু অঞ্চলে প্রবেশের পথ’ তৈরি করে দিতে পারে। হালেভিই ইসরায়েলের প্রথম কোনো ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মকর্তা, যিনি লেবাননে স্থল অভিযান যে অনিবার্য, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এ সংঘাতের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় আকারে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে ইসরাইল প্রায় একই সঙ্গে লেবাননে হিজবুল্লাহ ও গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।
জাতিসংঘের অধিবেশনে জড়ো হওয়া বিশ্বনেতারা এ পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান চেয়েছেন, কারণ লেবাননে ইসরাইলি আক্রমণ চলতে থাকলে মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়তে পারে।