ঢাকা : বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা দেশের ব্যাংকিং খাতে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে ধরা হচ্ছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপের প্রভাব থেকে মুক্ত হলো ব্যাংক দুটি।
মঙ্গলবার, বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি পৃথক আদেশের মাধ্যমে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে। এই নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংক দুটিতে পাঁচজন করে নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ধরণের পরিবর্তন সাধারণত তখনই গৃহীত হয় যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ব্যাংকের পরিচালনা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চায়, বিশেষ করে যদি ব্যাংকের মালিকানা ও পরিচালনায় কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর অতিরিক্ত প্রভাব থাকার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের নতুন পর্ষদ
আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা শাহরিয়ার। তার নেতৃত্বে চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. শাহীন উল ইসলাম, এনআরবি ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মোহাম্মদ আশরাফুল হাছান। নতুন এই পর্ষদ আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংককে নতুন করে গঠন করতে এবং ব্যাংকটির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের নতুন নেতৃত্ব
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন চার পরিচালক হচ্ছেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আতাউর রহমান, মেঘনা ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মহসিন মিয়া, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব কামরুল হক মারুফ এবং জনতা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম মরতুজা। এছাড়াও, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট শেখ আশ্বাফুজ্জামানকেও পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন এই পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকটির কার্যক্রমে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও গতিশীলতা নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এই দুটি ব্যাংকের মালিকানা এবং পরিচালনায় এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করছিলেন। এস আলম গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ব্যবসায়িক গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত, যারা বিভিন্ন খাতে তাদের বিপুল প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। তবে, এই পরিবর্তনের ফলে এস আলম গ্রুপের ব্যাংকিং খাতে প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই ধরনের পদক্ষেপ দেশের ব্যাংকিং খাতের সুস্থতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।