নজরুল কবির দীপু : এবারের বন্যা যখন দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেল, তখন মানুষের মন কাঁপল। কিন্তু এই দুর্যোগের মধ্যেই আমরা দেখলাম, দেশের মানুষ কতটা একাত্মতা প্রদর্শন করতে পারে। বিশেষ করে, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা এবং নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠন এগিয়ে এসেছে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে।
শুধুমাত্র ত্রাণ সামগ্রী বিতরণেই সীমাবদ্ধ থাকেনি তাঁদের কাজ। তাঁরা বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছে, পানি পরিশোধন করেছে, আশ্রয়শিবির পরিচালনা করেছে। তাঁদের এই উদ্যোগে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছে এবং নিজেদের মতো করে সাহায্য করার চেষ্টা করেছে।
এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, আমাদের দেশের মানুষ এখনও মানবতার মূল্যবোধকে ভুলে যায়নি। বিশেষ করে, তরণ প্রজন্মের এই উদ্যোগ আমাদের সকলকে আশাবাদী করে তুলেছে। তারা প্রমাণ করেছে যে, তাঁরা শুধুমাত্র পড়াশোনায় মনোযোগী নয়, সমাজের প্রতিও তাঁদের দায়িত্ব রয়েছে।
এই দুর্যোগের মধ্যে আমরা শিখেছি যে, একা কিছু করা সম্ভব নয়। সকলকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের এই উদ্যোগ আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করুক। আসুন আমরা সবাই মিলে এ ধরনের কাজে আরও বেশি করে অংশগ্রহণ করি।
এই ঘটনাগুলো আমাদের জন্য একটি শিক্ষাও বহন করে। তা হল, দুর্যোগের সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলের দায়িত্ব। আমরা যদি সবাই এক হয়ে কাজ করি, তাহলে কোনো দুর্যোগকেই জয় করা সম্ভব।
আসুন আমরা এই মনোভাবকে ধরে রাখি এবং সবসময় মানবতার সেবায় নিজেদেরকে নিবেদিত করে রাখি।
এছাড়াও আমাদের বিবেচনা করা উচিত যে:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা : ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এই ধরনের স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রমকে আরও ব্যাপক করতে সাহায্য করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে তরুণরা খুব সহজেই তাদের সহকর্মীদের এবং অন্যদের সাথে যোগাযোগ করে ত্রাণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে।
সরকারের ভূমিকা : সরকারকেও এ ধরনের উদ্যোগকে সমর্থন করতে হবে এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে। সরকারকে ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ, আশ্রয়শিবির নির্মাণ এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার মতো কাজগুলো করতে হবে।
ভবিষ্যতের প্রস্তুতি : এই ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের আরও ভালোভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরও উন্নতি করতে হবে। আমাদের দেশের নদীগুলোর পাড়ে বাঁধ নির্মাণ, বন সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে কাজ করা প্রয়োজন।
স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ : স্বেচ্ছাসেবকদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। যাতে তারা দুর্যোগের সময় কীভাবে কাজ করতে হবে তা জানতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা : বন্যার পরে পুনর্বাসন কাজও খুব গুরুত্বপূর্ণ। বন্যাকবলিত এলাকায় পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু করতে হবে, ক্ষতিগ্রস্তদের জীবনযাত্রা পুনরুদ্ধার করতে হবে।
শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের এই উদ্যোগ আমাদের দেশের জন্য একটি আশার আলো। আশা করি, এই ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে এবং আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারব।
এই ঘটনা থেকে আমরা আরও একটি শিক্ষা নিতে পারি। তা হল, মানবিকতার বন্ধন সব ধরনের সীমানা অতিক্রম করে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবাই এক হয়ে মানবতার সেবা করতে পারে।
আসুন আমরা সবাই মিলে এই মনোভাবকে আরও জোরদার করি এবং একটি মানবিক সমাজ গড়তে কাজ করি।
এই লেখাটির মাধ্যমে আমি সকলকে অনুরোধ করছি, দুর্যোগের সময় কেউ যাতে একা না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য। আসুন আমরা সবাই মিলে মানবতার সেবায় নিজেদেরকে নিবেদিত করে রাখি।
এছাড়াও আমরা স্কুল-কলেজগুলোতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি। নিয়মিত মকড্রিলের আয়োজন করা যেতে পারে। যাতে করে ছাত্রছাত্রীরা দুর্যোগের সময় কীভাবে নিজেদের এবং অন্যদের রক্ষা করতে হবে তা জানতে পারে।
আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। এবং পরিবারের একজন সদস্য যখন কষ্টে থাকে, তখন অন্য সদস্যদের সেই কষ্ট ভাগ করে নেওয়া উচিত।
আসুন আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে কাজ করি।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, একুশে পত্রিকা।