সোলাইমান আকাশ : আমার আজাদ ভাই, রাঙ্গুনিয়ার নিবৃত্ত পল্লীর সোনার ছেলে, চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে জ্বলে উঠেছিলেন! সাপ্তাহিক থেকে দৈনিক, টিভি চ্যানেল- সবখানেই তাঁর পদচিহ্ন!
ভুজপুরের সেই ভয়াবহ তাণ্ডবের পর, তিনি ছুটে গিয়েছিলেন ফটিকছড়িতে, সত্য উন্মোচনের তাগিদে। কিন্তু হায়, সেদিন কেউ মুখ খুলল না, আওয়ামী লীগের কেউ এগিয়ে এলো না! অবশেষে দুই অনুজ সাংবাদিকের কাঁধে ভর করে তিনি তুলে ধরলেন সাধারণ মানুষের আর্তনাদ।
২০১২, আরব আমিরাতের প্রচণ্ড গরমে যখন শিরচ্ছেদের আদেশে কেঁপে উঠছিল বাংলার বুক, তখন আজাদ ভাই, আমাদের সাহসী সাংবাদিক, ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন প্রাণ বাঁচানোর মিশনে। ফটিকছড়ির দুই সন্তানের প্রাণের আলো নিভতে দেবেন না তিনি, এমনই ছিল তাঁর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
আহা, সেই প্রথম দেখা! আজাদ ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় ঘটে সাংবাদিক নেতা মহসীন কাজী ভাইয়ের মাধ্যমে। আজাদ ভাইয়ের চেরাগী মোড়ের সেই ছোট্ট অফিসে যখন পা রেখেছিলাম, তখন কী যে এক অনুভূতি! একদিন চেরাগী মোড়ে নিজের ছোট্ট অফিসে ডেকে নিয়ে আজাদ ভাই বললেন, ফটিকছড়ির পরিবেশ নিয়ে একটি লেখা দিতে হবে। এটি একুশে পত্রিকায় ছাপানো হবে।
আমি লেখাটি দিই। সেই লেখাটি প্রকাশের পর আজাদ ভাই আমাকে ৫০০ টাকা সম্মানি দিয়েছিলেন। তারপর আরও অনেক বিষয়ে অনেক লেখা দিয়েছি।
২০১৯, সেই কালো দিন যখন সন্ত্রাসের কালো ছায়া আমার ওপর নেমে এসেছিল, তখন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আমার আজাদ ভাই। তাঁর কণ্ঠে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠেছিল, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি গর্জে উঠেছিলেন। সেই মানববন্ধনে, সেই প্রতিবাদ সভায়, তাঁর উপস্থিতি আমাকে দিয়েছিল লড়াই করার অসীম শক্তি।
২০২১, সেই অপূর্ব দিন! হাজারীখীলের বুনো সৌন্দর্য উপভোগ করতে আজাদ ভাই এসেছিলেন, সাথে ছিলেন রানু ভাবী, মোস্তফা ভাই আর ইমা আপু। আমি তাদের নিয়ে গিয়েছিলাম রাঙ্গাপানির চা বাগানের সবুজ অরণ্যে। মিলন ভাইয়ের আতিথেয়তায় সেদিন যেন মন ভরে গিয়েছিল। আর আজাদ ভাই? তাঁর গাড়ির পেছনে সযত্নে রাখা জালটা নিয়ে তিনি যেন ফিরে গিয়েছিলেন শৈশবে। সুযোগ পেলেই হাতের জাল দিয়ে মাছ ধরার সেই উচ্ছ্বাস! আহা, কী অপূর্ব সেই স্মৃতি!
আহ, সেই কঠিন সত্য! নিষ্ঠুর ক্যান্সারের কাছে হার মেনে আমার আজাদ ভাই গত বছরের আজকের দিনেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
হে মহান আল্লাহ, আমার আজাদ ভাইকে আপনি আপনার বেহেশতের সর্বোচ্চ স্থান দিন। তাঁর আত্মাকে শান্তি দিন। আমিন, সুম্মা আমিন।
লেখক : সাধারণ সম্পাক, ফটিকছড়ি প্রেস ক্লাব।