শরীফুল রুকন : ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করে। এর উদ্দেশ্য ছিল দেশে স্বর্ণ আমদানি, রপ্তানি, বাজারজাতকরণ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ করা। নীতিমালাটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বর্ণ শিল্পের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, নীতিমালার অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক এখনও অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে।
যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বর্ণ নীতিমালা অনেক জটিল ও ব্যয়বহুল, যা বাস্তবায়নকে জটিল করে তুলেছে। ব্যবসায়ীদের জন্য নীতিমালা পুরোপুরি বোধগম্য হয়নি। এছাড়া স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের মধ্যে নীতিমালা সম্পর্কে পর্যাপ্ত সচেতনতা নেই। নীতিমালা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না।
অবাস্তবায়িত নীতিমালার ফলে বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিচ্ছে। যেমন, স্বর্ণের চোরাচালান বৃদ্ধি পাচ্ছে, স্বর্ণের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে, স্বর্ণের দামে অস্থিরতা ও স্বর্ণ শিল্পের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের (বাজুস) নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০২১ সালে স্বর্ণ নীতিমালা সংশোধনের ৩ বছর পরও বাস্তবায়ন হয়নি। অসম শুল্ক-কর কাঠামো, প্রাথমিক কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানিতে কালক্ষেপণ ও অতিরিক্ত শুল্কব্যয়, সঠিক নীতিমালার অভাব এই খাতকে দেশীয় অর্থনীতি থেকে পিছিয়ে দিয়েছে।
যদিও স্বর্ণ নীতিমালায় দেশীয় বাজারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, রপ্তানিতে ইচ্ছুক ব্যবসায়ীদের বিনা শুল্কে স্বর্ণের ব্যবহার অথবা শুল্ক প্রত্যর্পণের আওতায় সুবিধাদি প্রদান করতে হবে। তাঁদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু এসব সুবিধা এখনও পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
স্বর্ণ নীতিমালার উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘স্বর্ণালংকার, স্বর্ণবার, স্বর্ণ কয়েন রপ্তানিতে উৎসাহ এবং নীতি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে রপ্তানি বৃদ্ধি করা হবে; স্বর্ণালংকার, স্বর্ণবার, স্বর্ণ কয়েন রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক/বন্ড সুবিধা যৌক্তিকীকরণ ও সহজীকরণ করা হবে।’ কিন্তু এসব বিষয়ে এখনো সরকারি ঘোষণা আসেনি বলে জানান স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে স্বর্ণের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে রয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ শুল্ক। এছাড়া আকরিক স্বর্ণ আমদানিতে আরোপ করা হয়েছে সম্পূরক শুল্ক (সিডি) ৫ শতাংশ। আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্কহার রয়েছে।
স্বর্ণ রপ্তানিতে কী কী প্রণোদনা ও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে সেগুলোও উল্লেখ করা হয়েছে, স্বর্ণ নীতিমালায়। নীতিমালার ৯.৩ ধারায় উল্লেখ করা হয়, ‘বৈধভাবে স্বর্ণালংকার, স্বর্ণবার, স্বর্ণ কয়েন রপ্তানি উৎসাহিত করতে রপ্তানিকারকদেরকে স্বর্ণালংকার, স্বর্ণবার, স্বর্ণ কয়েন তৈরির কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতসহ বিভিন্ন প্রকারের প্রণোদনামূলক বিশেষ সহায়তা প্রদান করা হবে।’
অথচ স্বর্ণ পরিশোধনাগারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির শুল্ক কর নেওয়া হচ্ছে ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এ কারণে প্রাথমিক উৎপাদন ব্যয়ও বাংলাদেশে বেশি হচ্ছে। এতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
নীতিমালার ৯.৩ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘স্বর্ণালংকার রপ্তানির উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত স্বর্ণের ক্ষেত্রে ডিউটি ড্র-ব্যাক সুবিধা প্রদান করা হবে।’ ৯.৫ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘রপ্তানির জন্য প্রস্তুতকৃত স্বর্ণালংকার, স্বর্ণবার, স্বর্ণ কয়েন এ আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদনযোগ্য ধাতু অবচয়ের পরিসীমা প্রতিপালন করতে হবে।’
৯.৭ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘স্বর্ণালংকার, স্বর্ণবার, স্বর্ণ কয়েন রপ্তানির ক্ষেত্রে বন্ডেড ওয়্যারহাউজিং সুবিধা দেওয়া হবে।’ ৯.৮ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘হস্তনির্মিত ও মেশিনে তৈরি অলংকার রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ প্রণোদনা সুবিধা প্রদান করা হবে।’ এসব সুপারিশ থাকলেও তা কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে, তার সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালায় বলা নেই।
স্বর্ণ নীতিমালার ৯.৯ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘স্বর্ণালংকার রপ্তানিকারকগণের অনুকূলে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে বিবেচনা করবে।’ কিন্তু বারবার আশ্বাস দিলেও এখনও জমি বরাদ্দ দেয়নি সরকার।
৯.১১ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘রপ্তানি নীতিতে বিশেষ উন্নয়নমূলক ও রপ্তানিমুখী শিল্পখাতের অনুকূলে প্রদত্ত সকল সুযোগসুবিধা স্বর্ণালংকার, স্বর্ণবার, স্বর্ণ কয়েন রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রদানের সুপারিশ প্রেরণ করা হবে।’ অথচ এ ধরনের কোনো সরকারি উদ্যোগ এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। স্বর্ণের কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ক কর অব্যাহতি প্রদানসহ ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে প্রদানের প্রস্তাব বিভিন্ন সময়ে বাজুস দিয়ে আসলেও তা এখন পর্যন্ত আমলে নেয়নি সরকার।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানান, তৈরি পোশাকসহ কয়েকটি খাতের পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। কিন্তু স্বর্ণালংকার রপ্তানিতে কোনো প্রণোদনা নেই। এছাড়া ডিলারশিপ লাইসেন্স দেওয়া হলেও শুল্ক-কর দিয়ে স্বর্ণ আমদানিতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অবৈধভাবে বেশি আমদানি হচ্ছে।
বাজুসের সাবেক সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার বলেন, ‘একজন স্বর্ণ আমদানিকারক হতে হলে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা থাকতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক যাদের লাইসেন্স দিয়েছে, বেশিরভাগেরই সেই সক্ষমতা নেই।’
স্বর্ণ নীতিমালায় নানা নীতি সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হলেও রপ্তানি নীতি আদেশে জুয়েলারি শিল্পকে সরকারের অগ্রাধিকার বিবেচনার ১৪ খাতের তালিকায় স্থান দেওয়া হয়নি। এটি স্থান পেয়েছে ১৮ শিল্প খাতের (বিশেষ উন্নয়নমূলক খাত) একটি হিসেবে। এভাবে সরকারের সদিচ্ছার অভাবে রপ্তানি সম্ভাবনার দরজা উন্মুক্ত হয় না স্বর্ণ শিল্পে।
বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শুল্ক-কর বেশি হওয়ার কারণে প্রাথমিক উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। তাই স্বর্ণ পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে প্রদান করতে সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।’
এছাড়া সোনার অলংকার প্রস্তুত করার জন্য আমদানিকৃত কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সকল প্রকার শুল্ক কর অব্যাহতি প্রদানসহ ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে বাজুস।
বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে আমাদের স্থানীয় বাজারে সবসময় সোনার মূল্য ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম বা ভরি প্রতি ৮-১০ হাজার টাকা বেশি হয়ে থাকে। যার অন্যতম কারণ কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানিতে অসহনীয় শুল্ক হার।’
স্বর্ণ নীতিমালার ৯.৮ উপধারায় বলা আছে ‘হস্তনির্মিত ও মেশিনে তৈরী অলংকার রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ প্রণোদনা সুবিধা প্রদান করা হবে।’ উক্ত ধারার আলোকে ভোক্তা সুবিধা প্রদান ও মূল্য সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বাজুস উল্লেখিত প্রস্তাবনার প্রণোদনার দাবি জানিয়েছে বাজুস।
আয়কর আইনের ১৪০ (৩) (ক) ধারা অনুযায়ী উৎসে কর কর্তনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তি’র আওতায় দেশের জুয়েলারি শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কর-অব্যাহতি প্রদানের দাবি জানিয়েছে বাজুস।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জুয়েলারি শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের উপর প্রবর্তিত উৎসে করের ভুক্তভোগী হবে শুধুমাত্র শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাই। কারণ স্বর্ণের মূল্যমান অনেক বেশি হওয়ায় বাৎসরিক লেনদেনের সর্বশেষ হিসাব মতে উৎসে করের সর্বোচ্চ করহারের আওতায় পড়বে জুয়েলারি ব্যবসায়ীগণ। এ অবস্থায় এই অপরিকল্পিত উৎসে কর প্রবর্তনের কারণে স্বর্ণ শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মুনাফার হার খুবই সংকোচিত হয়ে যাবে।’
‘অন্যদিকে ব্যবসায়িক মুনাফা ধরে রাখার লক্ষ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা স্বর্ণের মূল্যের সাথে উৎসে করের হার সমন্বয় করতে বাধ্য হবে। ফলশ্রুতিতে জুয়েলারি পণ্যের স্থানীয় বাজারমূল্য বর্তমান মূল্যের থেকে প্রায় ৮-১০ হাজার টাকা বেশি হবে। ফলস্বরূপ দেখা যাবে স্থানীয় জুয়েলারি শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে এবং ক্রেতারা দেশের বাইরে থেকে জুয়েলারি পণ্য কিনতে উৎসাহিত হবেন।’ বলেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।
বাজুসের দাবি, স্বর্ণ নীতিমালার ৮.২ উপধারার অনুসারে ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মাধ্যমে পর্যটক কর্তৃক স্বর্ণের বার আনা বন্ধ করা এবং ‘ট্যাক্স ফ্রি’ স্বর্ণের অলংকারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম করা হোক।
বাজুস নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এক্ষেত্রে একটি আইটেমের জুয়েলারি পণ্য দুইটির বেশি আনা যাবে না এবং পাশের দেশগুলোর সাথে ব্যাগেজ রুলের সমন্বয় করার দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে একজন যাত্রী বছরে শুধুমাত্র একবার ব্যাগেজ রুলের সুবিধা নিতে পারবেন, এই প্রস্তাব বিবেচনা করা হোক।’
বাজুসের প্রাথমিক ধারণা, প্রতিদিন দেশের জল, স্থল ও আকাশপথে কমপক্ষে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার অবৈধ স্বর্ণ ও হীরার অলংকার ও স্বর্ণের বার চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে। যা ৩৬৫ দিন বা একবছর শেষে দাঁড়ায় প্রায় ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।
বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশে চলমান ডলার সংকটে এই ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার অর্থপাচার ও চোরাচালান বন্ধে প্রস্তাবিত বাজেটে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে স্বর্ণের বাজারে অস্থিরতা ছড়িয়ে দিয়েছে চোরাকারবারিদের দেশি-বিদেশি সিন্ডিকেট। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রতিনিয়ত স্থানীয় বুলিয়ন বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বুলিয়নদের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে স্বর্ণের পাইকারি বাজার। তাদের সঙ্গে চোরাকারবারিদের সিন্ডিকেটের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যার কারণে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে স্থানীয় বুলিয়ন বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হচ্ছে।’
এ অবস্থায় ‘স্বর্ণ নীতিমালার ৮.০ ধারায় স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কারের অনানুষ্ঠানিক আমদানি নিরুৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে এবং ৮.২ উপধারায় প্রয়োজনে ব্যাগেজ রুল সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। স্বর্ণের অনানুষ্ঠানিক আমদানি নিরুৎসাহিত করার ক্ষেত্রে ব্যাগেজ রুলের সংশোধন এখন সময়ের দাবি বলে জানান বাজুসের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বাজুস অবিলম্বে ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মাধ্যমে পর্যটক কর্তৃক স্বর্ণের বার আনা বন্ধ করা এবং ট্যাক্স ফ্রী স্বর্ণের অলংকারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম করার দাবি জানিয়েছে।
এদিকে বৈধভাবে স্বর্ণের বার, স্বর্ণের অলংকার, স্বর্ণের কয়েন রপ্তানিতে উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করার শর্তে রপ্তানিকারকদের মোট মূল্য সংযোজনের ৫০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাজুস। বাজুস নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের শিল্পীদের হাতে তৈরি স্বর্ণের অলংকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকে। কিন্তু নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বর্ণ শিল্প দেশের রপ্তানি খাতে যতটুকু অবদান রাখার কথা ছিল তার সামান্যও রাখতে পারেনি। দেশের রপ্তানি খাতে স্বর্ণ শিল্পের অবদান বাড়াতে এই প্রণোদনা বড় ভূমিকা পালন করবে।’
বাজুস নেতারা বলছেন, এইচএস কোড ভিত্তিক অস্বাভাবিক শুল্ক হার কমিয়ে পাশের দেশগুলোর সাথে শুল্ক হার সমন্বয়সহ এসআরও সুবিধা প্রদান করা উচিত। বাজুস নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের এইচএস কোড ভিত্তিক শুল্ক হার ও পাশের দেশ ভারতের শুল্ক হারের সাথে অনেক বড় ধরণের ব্যবধান রয়েছে। যার কারণে এসব মেশিনারিজ ও কাঁচামাল আমদানির প্রাথমিক পর্যায়েই ব্যয় বেশি হয়ে যায়। তাই এইচএস কোড ভিত্তিক শুল্ক হার সমন্বয় করা গেলে প্রাথমিক পর্যায়েই ব্যয় অনেক কমানো সম্ভব।’
বাজুসের সাবেক সভাপতি ও ডিস্ট্রিক্ট মনিটরিং স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, ‘সরকার স্বর্ণ নীতিমালা ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই নীতিমালা পরিপূর্ণ নয়। স্বর্ণ নীতিমালায় শুধু আমদানির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু রপ্তানি করা, শিল্প গঠন করাসহ আরও বেশ কিছু বিষয় আমরা নীতিমালায় পাইনি। ফলে যারা স্বর্ণের ডিলার রয়েছেন, তাঁরা সহজে আনতে পারছেন না।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এ.এইচ.এম. আহসান বলেন, ‘জুয়েলারি খাতের জন্য সরকারের নীতি সহায়তা রয়েছে। ২০১৮ সালে স্বর্ণ নীতিমালা হয়েছে এবং ২০২১ সালে সেটা সংশোধন হওয়ার পর নীতিমালার দিক থেকে খুব বেশি চ্যালেঞ্জ এখন আর নেই৷ এখন যেটা আছে সেটা হচ্ছে নীতিমালা বাস্তবায়নের বিষয়। নীতিমালা বাস্তবায়ন করলে জুয়েলারি হবে নতুন সম্ভাবনাময় পণ্য।’
এই প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘স্বর্ণ আমদানিতে সরকার নীতিগত সহায়তা দিচ্ছে। কোন কোন খাতে সহায়তা দিলে স্থানীয় উৎপাদন বাড়বে এবং পরনির্ভরশীলতা কমে আসবে- সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’