চট্টগ্রাম: গুরুতর আহত ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাসকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায়; কিন্তু তার চিকিৎসা শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টায়। এর আধাঘন্টা পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুদীপ্ত।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে একুশে পত্রিকাকে।
নগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে সুদীপ্তের ওপর হামলা হয়। এরপর বাসায় নিয়ে গিয়ে তার কাপড়-চোপড় বদলিয়েছে স্বজনরা। তারপর চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে গেছে। মেডিকেলের জরুরী বিভাগে তারা পৌঁছে সকাল সাড়ে ৮টায়। এরপর সাড়ে ১০টার সময় চিকিৎসা শুরু হয়েছে। হাসপাতালে পৌঁছার পরও দুই ঘণ্টা তো দেরী হয়ে গেল। রক্তক্ষরণের ফলে এই সময়টাতে যা ক্ষতি হওয়ার সেটা তো হয়ে গেল।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় নালা পাড়া এলাকায় বাসায় ছিলেন সুদীপ্তের মামা রাজীব কুমার বিশ্বাস; তিনি কক্সবাজারের চকরিয়া চৌকির সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে কর্মরত আছেন। ঘটনার পর সুদীপ্তকে নিয়ে ওই বিচারকও হাসপাতালে ছুটে যান। তিনি ব্যস্ত থাকলে অন্য কাউকে বলতে পারতেন, পুলিশকে বলতে। কিন্তু পুলিশকে খবরটি দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি কেউ।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এত বড় একটা ঘটনা। পরিবারের কেউ সদরঘাট থানায়, পুলিশকে জানালেন না। মনে হচ্ছে, মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থাকলে কেউ আর জানাতেন না। কিন্তু মেডিকেলে চিকিৎসা পেল তো দেরীতে। ঘটনার পরপর জানতে পারলে আমরা হয়তো দ্রুত রহস্য উন্মোচন করতে পারতাম। যারা খুন করেছে তারা ততক্ষণ এলাকায় থাকবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত মেডিকেলে নিয়ে যেতে পারতো। পুলিশই চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো। জোর করে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু পুলিশ তার সাথে না যাওয়ায় অন্য সাধারণ রোগীদের মতো কিছুটা দেরীতে চিকিৎসা পেয়েছে সে।’
জানতে চাইলে সদরঘাট থানার ওসি মর্জিনা আক্তার বলেন, ‘সুদীপ্তের মৃত্যুর খবর পেয়েছি আমরা শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে। মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ খরবটি দিয়েছিলেন আমাকে। ঘটনার পর পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে তাৎক্ষণিক জানানো হলে দ্রুত সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারতাম।’
চট্টগ্রামের নগর ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক সুদীপ্ত’র বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মেঘনাথ বিশ্বাস ওরফে বাবুল বিশ্বাস। মা আন্না বিশ্বাস গৃহিণী। কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছেন সুদীপ্ত। এইচএসসিতে পড়েন ইসলামিয়া কলেজে। সিটি কলেজে তিনি অনার্সে ভর্তি হন। তবে অনার্সের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।
দুই মাস আগে নগরের দেওয়ানবাজার এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি নিয়েছিলেন সুদীপ্ত। তার ছোট ভাই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।
সদরঘাট থানার ওসি মর্জিনা আক্তার বলেন, ‘যে জায়গায় সুদীপ্তকে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। তবে ঘটনাস্থলের অদূরে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ আমরা সংগ্রহ করেছি। সেখানে দেখা গেছে, খুনিরা মোটর সাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা ব্যবহার করেছে। খুনিদের আসা-যাওয়ার পথের আরও কিছু ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করছি আমরা। এসব ফুটেজে হয়তো আর কিছু তথ্য-প্রমাণ আসবে।’
‘অনেক তথ্যই আমরা পাচ্ছি। প্রত্যেকটা বিষয় নিয়েই আমরা হাঁটছি। সব তথ্য যাচাই করছি। সত্য উদঘাটন করতে হলে সব শুনতে, জানতে হয়। তদন্তের স্বার্থে এসব তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’ যোগ করেন ওসি মর্জিনা।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে খুন হয়েছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি আছে। পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ নিয়ে খুনিদের গ্রেফতার করা হবে।’