রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

‘খুনিদের সঙ্গে’ সংলাপ নয়: প্রধানমন্ত্রী

| প্রকাশিতঃ ৮ নভেম্বর ২০১৫ | ১:১৮ অপরাহ্ন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট 

PM Hasina Briefingsপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যিনি (খালেদা জিয়া) মানুষ খুন করেন, পুড়িয়ে মারেন তার সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়। যখন সংলাপ প্রয়োজন ছিলো তখন তিনি (খালেদা জিয়া) সাড়া দেননি। এখন কেন?

নেদারল্যান্ডস সফর শেষে রোববার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনি যদি কারো বাসায় যান এবং সে যদি দরজা বন্ধ করে দেয়, তাহলে পরবর্তীতে আপনি কী তার বাসায় যাবেন? আমি ফোন দিয়েছিলাম, তার বাসায় গিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি (খালেদা জিয়া) সাড়া দেননি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সংলাপে বসলে পোড়া মানুষের গন্ধ পাওয়া যাবে। যারা গাড়িতে বোমা মেরে, মানুষ পুড়িয়েছে তারাই আজ গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ মোটেও অনিরাপদ নয়। বাংলাদেশে আইএস আছে, জঙ্গি আছে এটা কোনভাবে স্বীকার করানো, যদি এটা স্বীকার করানো যায় তাহলে হামলে পড়তে পারে, সে ধরনের পরিকল্পনা কিন্তু অনেকেরই আছে।

লন্ডনে রাজনৈতিক ঐক্য গড়তে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যার হাতে মানুষ পুড়েছে তার সাথে বসার ইচ্ছে আমার নেই। এতো রাজনৈতিক সংকট বা দৈন্যতায় পড়িনি যে কোন খুনির সাথে বসতে হবে।

প্রশ্নকর্তা সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘দয়া করে ওই খুনির সাথে বসতে বলতে বলবেন না। তার সাথে বসলেই আমি পোড়া গন্ধ পাবো।’

তবে বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ছাড়লে সংলাপের বিষয়টি ভেবে দেখা হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যারা আমার মা বোনকে ধর্ষণ করেছে তাদের সঙ্গ ছাড়লে বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়টি ভেবে দেখা যাবে।

বাংলাদেশ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ দেশ, মোটেই অনিরাপদ নয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে আইএস আছে জঙ্গি আছে, এটা স্বীকার করানো গেলে বাংলাদেশের ওপর হামলা করানো যায়। এই পরিকল্পনা কিন্তু অনেকের আছে। আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে কিছু করতে পারছে না যারা, তারা এখন গুপ্ত হত্যায় নেমেছে। দেশের জনগণকে বলবো, আইএস আছে এটা যদি প্রমাণ করা যায় তাহলে কী হবে বুঝতেই তো পারছেন। বাংলাদেশকে সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়ার মতো করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে। দেশের কিছু মানুষও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশকে কেউ ব্যবহার করুক এটা আমরা করতে দেবো না। এটা তো বুঝা যায় কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ধরা পড়লে দেখা যায়- তারা ছাত্রজীবনে হয় শিবির করেছে, না হয় বিএনপি করেছে। যখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ আছে বলে আওয়াজ তোলা হচ্ছে। আমি দেশবাসীকে বলবো, বাংলাদেশ অনিরাপদ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস যেটা বলা হচ্ছে, যা করা হচ্ছে, এটা আর্টিফিসিয়ালি করা হচ্ছে। জনগণকে সচেতন হয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

সাম্প্রতিক বিদেশি হত্যা ও কিছু দেশের সতর্কতা জারির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ফ্লোরিডায় মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। কেন এই প্রবাসীকে সেখানে হত্যা করা হলো, সে প্রশ্ন কি আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে কেউ করতে পারবেন?

তিনি বলেন, এখন সাম্প্রতিক বিদেশি হত্যায় কেউ বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে যদি প্রশ্ন তোলে, তবে এ দেশে আইএস আছে বলে প্রমাণ করতে যারা চক্রান্ত করছে তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলা হবে। বাংলাদেশের কেউ কি এটি প্রমাণ করতে চান? আমেরিকায় প্রতিদিন কতো হত্যাকাণ্ড ঘটে, সে তুলনায় বাংলাদেশ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ দেশ, কোনোভাবেই অনিরাপদ নয়।

শেখ হাসিনা বলেন, চক্রান্তকারীরা বাংলাদেশকে অনিরাপদ প্রমাণ করতে ব্যস্ত, যেন কোনোভাবে বাংলাদেশে ঢুকে হামলা করতে পারে। কিন্তু আমরা কি তাদের সে সুযোগ করে  দেবো?

অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জ্বালাও-পোড়াও করে মানুষ মেরে যখন  উদ্দেশ্য সফল করতে পারেনি, তখন এবার গুপ্তহত্যা চালানো হচ্ছে। এদেশে আইএস আছে বলে প্রমাণের চেষ্টা চলছে। যদি তা প্রমাণ করা যায়, তাহলে কী হবে সেটা আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক, সিরিয়ার কথা ভাবলেই হবে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে দেশের একটি গোষ্ঠীও এ চক্রান্তে লিপ্ত। দেশবাসী যদি সচেতন না হোন তাহলে সর্বনাশ।

নিরাপত্তা নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কথায় আছে- ‘বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়’। সবাইকে সাহস রাখতে হবে। খুনের কতো তালিকা হয়। ১৯৮১ সালে যেদিন দেশের মাটিতে পা রেখেছিলাম, সেদিন থেকেই সব তালিকার শীর্ষে রয়েছি আমি। আমি তো ভীত নই। এমনিতেই গভীর চক্রান্ত চলছে এ দেশকে অনিরাপদ প্রমাণ করতে। নিজেরা সতর্ক-সাহসী না হলে চক্রান্তকারীদের উদ্দেশ্য সফলের সুযোগ বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু নিরাপত্তা দেওয়া দরকার, সেটা দেওয়া হচ্ছে। যখনই যেখানে যা হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে তার সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এখন কোথাও যদি সন্ত্রাসীদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তবে তাদের ধরতে সাংবাদিকসহ সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।

এসময় ধর্ম নিয়ে বিকৃত রুচির লেখালেখি না করারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এ ধরনের লেখা যেন না হয়। আমরা ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু সেক্যুলারিজম মানে ধর্মহীনতা নয়। তাই কেউ ধর্ম মানবে কি মানবে না, সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু অন্যের ধর্মে আঘাত দিতে পারবে না। বিকৃত লেখা মানবিক গুণ নয়। কারও অনুভূতি যেন আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখাই মানবিকতা।

তিনি দেশবাসীকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রত্যেকের মনে সাহস থাকতে হবে। রাষ্ট্র নিরাপত্তা দেবে, নিজেকেও সচেতন হতে হবে।

জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়টি আদালতে প্রক্রিয়াধীন। আদালতের বিষয়। আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।

লেখক-প্রকাশক-ব্লগার হত্যার বিচার প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, লেখক-ব্লগার হত্যাকারীরা ধরা পড়ছে। তদন্ত হচ্ছে। খুনিদের কোনো তথ্য দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অবশ্যই সব খুনের বিচার হবে।

যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ে আমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক বিবৃতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের স্মরণ করা উচিত সাকা এবং মুজাহিদ কী অপরাধ করেছে। তারা নিশ্চয়ই মোটা অংকের কিছু পেয়ে গেছে, এজন্য এসব মন্তব্য করেছে।

সফরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রশংসা করেছেন এবং এ খাতে সহযোগিতার কথা বলেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আন্তরিক ও উষ্ণ এবং এ সম্পর্ক আরও গভীর, জোরদার ও বিস্তৃত হবে। ইতোমধ্যে চর উন্নয়ন ও সমুদ্র ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস নিবিড়ভাবে কাজ করছে।

ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন, সমুদ্র ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতা পাবে বলেও জানান শেখ হাসিনা।