রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

নতুন সরকারের মূল লক্ষ্য হোক দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ

প্রকাশিতঃ ১৫ জানুয়ারী ২০২৪ | ১০:১৮ পূর্বাহ্ন


নজরুল কবির দীপু : দেশের ভেতরে বিরোধী শিবিরের নির্বাচনবিরোধী আন্দোলন এবং বিদেশি শক্তির অব্যাহত চাপ মোকাবিলা করেই শেষ পর্যন্ত দ্বাদশ সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্বিঘ্নে। বিদেশি পর্যবেক্ষকরা গণমাধ্যমকে বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর ঢাকায় নিযুক্ত ভারত, রাশিয়া ও চীনসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুষ্পস্তবক দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কেউ যাননি বরং নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, সে দেশের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র গত সোমবার ওয়াশিংটনে বলেছেন, বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। তিনি ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে অনিয়ম, সহিংসতা, বিরোধী দলের বিপুলসংখ্যক সদস্যকে গ্রেফতার এবং নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না করার কথা উল্লেখ করেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর পরে অবশ্য আরেক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিজয়কে স্বীকৃতি দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রতিক্রিয়ায় আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তবে বাংলাদেশের প্রতি ওয়াশিংটনের মনোভাব পরিবর্তিত হয়েছে কিনা তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। কথাটা সঠিক। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের এটাই বড় সাফল্য। ৭ জানুয়ারি সারা দেশে ২৯৯টি আসনে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অবাধে ভোটগ্রহণ চলেছে। কোনো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়নি। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের গোলযোগ কোথাও হয়নি। নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে, প্রায় ৪২ শতাংশ ভোটার তাদের ভোট দিয়েছেন। ভোটার উপস্থিতির এ হারকে কমিশন সন্তোষজনক বলেছে।

আমি মনে করি, পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রায় ৪২ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতিকে খারাপ বলা যাবে না। তবে এটি ঠিক, আগের সংসদ নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবারের ভোটার উপস্থিতির হার কম। এর অনেক কারণ রয়েছে। প্রথমত, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং এর সমমনা কিছু রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জন। এসব দলের সমর্থক-ভোটাররা ভোট দিতে আসেননি তা ধরে নেওয়াই যায়। দ্বিতীয়ত, বিএনপিসহ সমমনারা নির্বাচন বর্জনের জন্য যেভাবে আন্দোলন ও প্রচার চালিয়েছে, তাতে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিরাপদ মনে করেননি। বিশেষ করে ভোটের আগের দুদিন হরতাল ডাকা, ট্রেনে-বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। আতঙ্কিত মানুষ ভোটকেন্দ্র থেকে দূরে থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক।

তৃতীয়ত, গত একটি বছর, বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের পর দেশে যেরকম রাজনৈতিক হানাহানি, সহিংসতা ও নাশকতা হয়েছে, তা জনগণকে রাজনীতির প্রতি নিরুৎসাহিত করে তুলেছে। ভোটের প্রতিও তারা আকর্ষণ হারিয়েছেন কম-বেশি। সবশেষে আরেকটি বিষয় মানুষকে রাজনীতিবিমুখ করে তুলেছে। সেটা হচ্ছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য।

নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র মানুষকে বিপর্যস্ত করে রেখেছে। অর্থনৈতিক কারণে বিপর্যস্ত মানুষের কাছে ভোটের আকর্ষণ কতটা থাকবে? তাদের কাছে রাজনীতি ও নির্বাচন অর্থহীন বিলাসিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদরা বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন। জনগণ রাজনীতিবিমুখ হলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না।

সন্দেহ নেই, এবারের নির্বাচন ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের চেয়ে ভালো হয়েছে। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। কারণ, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছিল। সে ঘটনা মনে রেখে এবার আওয়ামী লীগ নিজ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহিত করেছিল। এ কারণে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এটি রেকর্ড।

বিদেশি চাপ ও অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সামনে এখন রয়েছে আরও বড় চ্যালেঞ্জ। সেটি হচ্ছে, নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া এবং জনজীবনের সংকট দূর করা।

অর্থনৈতিক সংকট, বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি এখন জনগণের জন্য প্রধান সমস্যা। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। বাজারে সিন্ডিকেটের দাপট ও আধিপত্যের কথা গত দু’বছর ধরে শুনে আসছি। এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। কোনো ফল হয়নি। নতুন সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে বাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে যদি আনতে পারে, সেটাই হবে বড় সাফল্য।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, একুশে পত্রিকা।