সৈয়েদা ফাতেমা পিংকী : সাপের বিষে ছটফট করতে করতে বাঁচামরার লড়াইয়ে শেষমেশ হেরে গেলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী (২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষ) শিমু ইসলাম। বুধবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।
এর আগে রাত ৮টার দিকে টাংগাইলের বাসাইল পৈত্রিক বাড়ির আঙিনায় হাঁটাহাঁটি করার সময় বিষাক্ত একটি সাপ শিমুকে কামড় দিয়ে চলে যায়। নিত্যদিন আত্মীয়স্বজনে সরগরম থাকা বাড়িটিতে এসময় কেউ ছিলেন না। শিমু বুঝতে পারেন ক্রমশ তার শরীরে বিষ ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টার পাশাপাশি রাত ৮টা ৪৩ মিনিটে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন শিমু। বাঁচার তীব্র আকুতি গোপন রেখে কেবল লিখেন টাঙ্গাইলে সাপের ভ্যাকসিন কোথায় পাওয়া যায়। ফেসবুক বন্ধু ও স্বজনদের সাড়া পেতে পেতে সময় অনেক চলে যায়।
ফলে কোনোধরনের চিকিৎসা ছাড়াই কাটিয়ে দিতে হয় প্রায় দুইঘণ্টা। ফেসবুকে ভেকসিনের সাড়া মিললেও স্বজনদের কাউকে না পাওয়ায় ভ্যাকসিন অধরাই থেকে যায়। একসময় রাত ১০ টার দিকে স্বজনরা পৌঁছে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজে শিমুকে ভর্তি করান। সেখানে নীল হয়ে যাওয়া শিমুর শরীরে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কোনো কাজে এলো না ভ্যাকসিন। বিলম্বিত চেষ্টা ব্যর্থ করে রাত ১২টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শিমু।
জীবনকে সার্থক করবার, কিছু করে দেখাবার প্রত্যয়ে দৃঢ়চেতা ছিলেন শিমু ইসলাম। প্রতিষ্ঠিত হয়ে পরিবারের গর্ব হবার আগে বিয়ের পিড়িতেও বসেননি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় ব্যাচের এই মেধাবী শিক্ষার্থী বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে বিসিএস ক্যাডারশীপের স্বপ্ন দেখেছিলেন ; ৩৬ তম বিসিএসে ভাইভাবোর্ড পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন। ৩৭ তম বিসিএসে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু তার আগেই বিষাক্ত সাপের কামড়ে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যেতে হলো শিমুকে।
এই অত্যাধুনিক যুগে এসেও প্রাথমিক চিকিৎসা ও উপযুক্ত সময়ে ভ্যাকসিনের অভাবে বিষের যন্ত্রণায় শিমুর মৃত্যুকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তার সহপাঠীরা। শিমুর মৃত্যুর খবরে ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে আসে।