রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

‘কী আর হবে, এভাবে লিখে যেতে চাই’

প্রকাশিতঃ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১০:৫২ পূর্বাহ্ন


আজাদ মঈনুদ্দীন : ১. একটা সময় ছিল চট্টগ্রাম শহরে আমরা দুই ‘আজাদ’ সাংবাদিকতা করতাম; আজাদ তালুকদার ও আজাদ মঈনুদ্দীন। একবার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এক সিনিয়র সাংবাদিকের সাথে দেখা হলে পরিচয়পর্বে আজাদ ভাই তাঁর নামের প্রথমাংশ বলার পর সিনিয়র সাংবাদিক আগ বাড়িয়ে বললেন, আপনি আজাদ মঈনুদ্দীন? সেটা ২০০৪ বা ২০০৫ সালের দিকের কথা।

আক্ষেপ করে আজাদ তালুকদার ভাই নিজেই আমাকে বলেছিলেন ‘দেখছেন কারবার, আপনাকে চিনে, আমাকে চিনে না’। পরে আজাদ ভাই তাঁর কাজে, কর্মে, মননে নিজেকে এত উচ্চতায় নিয়ে গেলেন আমার মত যারা ছিলাম সবাই ভেসে যাওয়ার মত অবস্থা।

২. সাংবাদিকতার শুরুর সময়ে আমরা কয়েকজন ছিলাম একই পথের পথিক। রশীদ মামুন ভাই, আজাদ তালুকদার ভাই, আলমগীর সবুজ ভাই, হামিদ উল্লাহ ভাই, জিয়াউল হক কাকা আমরা যেন একই পরিবারের সদস্য। রাত দিন ভুলে কত জায়গায় ঘুরেছি। ভ্রমণে আজাদ ভাইয়ের অফুরান প্রাণশক্তির কাছে আমরা বারবার হার মানতাম।

৩. প্রজন্মের আয়না নামে চট্টগ্রামের তরুণ সাংবাদিকদের নিয়ে আজাদ ভাই একটা সংখ্যা করেছিলেন প্রায় ১৫ বছর আগে। সেখানে আমাকেও স্থান দিয়েছিলেন। বইয়ে স্থান পাওয়া প্রায় সবাই এখন চট্টগ্রামের সাংবাদিকতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তখন থেকেই তাঁর এমনই জহুরি চোখ!

৪. আজাদ ভাইয়ের একুশে পত্রিকা ঢাকার বাইরে নিবন্ধন পাওয়া অনলাইন পত্রিকাগুলোর মধ্যে অন্যতম। অনেক খরচের মধ্যেও বড় কোনো ইনভেস্টর ছাড়াই তিনি পত্রিকাটি টেনে নিয়ে গেছেন। তাঁকে নিয়ে অনেক কথা বলা যায়। তাঁর সবচেয়ে বড়গুণ লেগে থেকে কাজ আদায় করার ক্ষমতা। তার ‘দ্ব্যর্থহীন’ শব্দটি এখনো কানে বাজে।

জগতে আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না। যে খোদা তাকে পরম মমতায় দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন সেই খোদাই ক্যান্সারের মত জটিল রোগ দিয়েছেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাকে বেশি ভালবাসেন। তাঁর চেয়ে আপন আর কেউ হতে পারে না। এসব রোগ ব্যাধি তার পরীক্ষা । শেষ পর্যন্ত বান্দার জন্য যেটা মঙ্গল তিনি সেটাই করেন।

‘আজাদ ভাই ফিরে আসুন’ বললেই তিনি ফিরতে পারবেন না। ‘জন্মিলে মরিতে হবে’ কথাটি চিরন্তন সত্য। আজাদ তালুকদার ভাইও আল্লাহর ডাকে সাড়া দিলেন, আমাদের সবাইকে এভাবে সাড়া দিতে হবে।

২ আগস্ট আজাদ ভাইয়ের জানাজায় দাঁড়িয়ে ভাবতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল, এভাবে এক পাশ থেকে নাই হয়ে গেলেন তারুণ্যদীপ্ত মানুষটি। চেরাগি মোড়ে গেলে আমাদের ঠিকানা ছিল তাঁর প্রকাশনা অফিস বর্ণনা ও একুশে পত্রিকা। চা, পেঁয়াজু, সিংগারায় কত শত আড্ডা।

ভীষণ রাগী ও জেদি মানুষ ছিলেন আজাদ ভাই। সবসময় লিখতেন সাহসিকতার সাথে। কতবার উনাকে সাবধান করেছি, বারবার বলতেন ‘কী আর হবে, এভাবে লিখে যেতে চাই।’ দ্ব্যর্থহীন শব্দটি উনার মুখে লেগে থাকতো সবসময়। যেকোনো কিছু লেখার পর সেটা পড়ে শুনাতে ভালোবাসতেন। সবসময় শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলার চেষ্টা করতেন। শুদ্ধ চর্চার মানুষটির এমন বিদায়ে চারপাশ যেন কাঁদছে। আল্লাহ আজাদ ভাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।

লেখক : বিজনেস ইনচার্জ, আনোয়ারা শাখা, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক।