চট্টগ্রাম: প্রধান বিচারপতিকে বেতন-ভাতা ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। উত্তর জেলা ছাত্রলীগ ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে হাছান মাহমুদ বলেন, আপনি সংসদকে অপরিপক্ব বলেছেন। এ সংসদই তো আপনার বেতন-ভাতা মঞ্জুর করেছেন। আপনি রায়ের পর্যবেক্ষণে যেহেতু এ কথা বলেছেন, আমি অনুরোধ করবো আপনি সমস্ত বেতন-ভাতা ফেরত দিন। আপনি অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হওয়ার বিচারপতির শপথ ভঙ্গ করেছেন। বাংলাদেশের সংবিধানে লেখা আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আপনি আপনার রায়ে বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। আপনি সংবিধান লংঘন করেছেন। সুতরাং আপনি পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আপনি আদালতে মামলা চলাকালীন নিজের মুখে স্বীকার করেছেন একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তার জন্য রাজাকার আলবদরদের সহায়ক শক্তি হিসেবে গ্রামে গ্রামে যে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেই শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। এটি আপনি আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। অর্থাৎ আমাদের দেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য অকাতরে যখন প্রাণ দিচ্ছিলেন তখন আপনি পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে শান্তি বাহিনীর সদস্য ছিলেন। আপনি এ পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। নিজেই মুখ ফস্কে বলে ফেলেছেন।
আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হাছান মাহমুদ বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হলে আপনার মতো মৌলভীবাজার কোর্টের আইনজীবী কোনো দিন হাইকোর্টের বিচারপতি হতে পারতেন না। সংখ্যালঘু ও উপজাতীয় সম্প্রদায়ের বিবেচনায় আপনাকে হাইকোর্টের বিচারপতি করা হয়েছিল। অনগ্রসর সম্প্রদায় থেকে যে বিচারপতি হতে পারে সে উদাহরণ সৃষ্টি করার জন্য। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী বলেই আপনি প্রধান বিচারপতি হয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আপনি প্রধান বিচারপতির পদকে কলঙ্কিত করেছেন। আপনি প্রধান বিচারপতির পদকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলেই প্রধান বিচারপতি আদালতে বসে পাকিস্তানের উদাহরণ দেন। এটি পাকিস্তান নয়, পাকিস্তানকে তাড়িয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ জানে কেউ যদি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সেটি কীভাবে মোকাবেলা করতে হয়। আপনি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আপনার রায়ের পর্যবেক্ষণে। রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রতীক। কেউ রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে যদি প্রশ্ন তোলে, রাষ্ট্রপতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয় সেটি দেশদ্রোহিতা কিনা চিন্তার বিষয় রয়েছে। আইনজ্ঞরা সে ব্যাপারে ভালো মতামত দিতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, আপনি বলেছেন বিচার বিভাগ অনেক ধৈর্য ধরেছে। আমরা আওয়ামী লীগও অনেক ধৈর্য ধরেছি। দেশের মানুষ অনেক ধৈর্য ধরেছে। আমি অতীতের উদাহরণ বলতে চাই না। বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি মারা হয়েছে। এখনো সেই ঘটনা ঘটেনি। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক তা চাই না। আরেকজন প্রধান বিচারপতি এজলাসে বসতে পারেননি। বিদায় নিতে হয়েছে। আমরা চাই না দেশে সেই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক। আপনি দয়া করে পদত্যাগ করুন। দেশের জনগণ অনেক ধৈর্য ধরেছে। দেশের জনগণ অনির্দিষ্টকালের জন্য ধৈর্য ধরবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে উদ্দেশ্য করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আপনার প্রতি আমি সম্মান রাখতে চাই। আপনি বিচারপতি খায়রুল হক সম্পর্কে যে কটূক্তি করেছেন, যে অশালীন ভাষায় কথা বলেছেন আমি সেটি পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। আপনি তাকে যা বলেছেন আপনি হচ্ছেন তা। আপনি বেহায়া এবং নির্লজ্জ। সুতরাং কথা বেশি বাড়াবেন না।
হাছান মাহমুদ বলেন, দেশবিরোধী নানামুখী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ ষড়যন্ত্র শুধু বিএনপি করছে তা নয়। বিএনপির নেতারা দেশের কোনো উন্নয়ন দেখতে পায় না। বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে। বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে বসে আইএস সহ বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ করছেন। বাংলাদেশে তার সভাসদ মিথ্যার বেসাতি করছে। তাদের কোনো রাজনীতি নেই। বিএনপি কিছুদিন রাজনীতি করেছে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির ঘাড়ের ওপর চেপে, তাদের ইস্যু নিয়ে তারা রাজনীতি করার চেষ্টা করেছে। এরপর ফরহাদ মজহারের কোলে বসে রাজনীতি করার চেষ্টা করেছে। ফরহাদ মজহারকে নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করেছে। আর এখন প্রধান বিচারপতি সিনহা বাবুর ঘাড়ে বসে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে।
বিএনপির উদ্দেশে হাছান মাহমুদ বলেন, রায় নিয়ে লাফালাফি করবেন না। এই সিনহা বাবুর রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা আছে, জিয়াউর রহমান সামরিক শাসন জারি করে দেশে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তার আইনগুলো অবৈধ। বর্তমান প্রধান বিচারপতির রায়ের পর্যবেক্ষণে এ কথাগুলো বলা আছে। বিচারপতি খায়রুল হকের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে যে রায় সে রায়ে সামরিক শাসন জারি করে জিয়াউর রহমানের কর্মকান্ডকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ জিয়াউর রহমান সামরিক শাসন জারি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আজকে যে বিএনপি গঠন করেছেন এটিও অবৈধ। কেউ যদি নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বলে, তাহলে নির্বাচন কমিশন কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আপিলের প্রেক্ষিতে আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও করতে পারে। সুতরাং লাফালাফি করবেন না।