একুশে প্রতিবেদক : জাদুবাস্তবতার প্রয়ােগ যাঁর লেখনীতে ফুটে উঠে তাঁর নাম আজাদ তালুকদার। তিনি একুশে পত্রিকার সম্পাদক। তাঁর প্রায় প্রতিটি লেখায় অদ্ভুত সব বর্ণনা পাওয়া যায়। তাঁর লেখায় এমনসব বর্ণনার দেখা পাওয়া যায়, যেগুলাে বাস্তবকে মিশিয়ে দিয়েছে বর্ণালি এক জগতের সঙ্গে, কল্পনা এখানে ডানা মেলে মিশে গেছে মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখের মধ্যে।
তারুণ্যের প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা আজাদ তালুকদারের সাংবাদিকতার দিনগুলাে। নানাধর্মী লেখায় তিনি সিদ্ধহস্ত হলেও নিজেকে সব সময় লেখক নয়, বরং দেখতে চেয়েছেন সাংবাদিক হিসেবে। ২৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি কাজ করে গেছেন সাপ্তাহিক, দৈনিক কিংবা সাময়িকীতে। কাজ করেছেন রেডিও-টেলিভিশন ও আন্তর্জাতিক ফিচার সংস্থায়। এর বাইরে নিজেও সরাসরি যুক্ত ছিলেন পাঠকপ্রিয় একুশে পত্রিকা সম্পাদনায়।
গতকাল বুধবার (২ আগস্ট) ভোররাত ৪টা ১১ মিনিটে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদার। তাঁর অকাল মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্মৃতিচারণ করেছেন সাংবাদিকরা। কয়েকজনের লেখা তুলে ধরা হলো:
সহকর্মীদের পাশাপাশি প্রকৃতিও যেন কাঁদছিল!
এক লহমায় যেন স্মৃতির জানালা খুলে গেল। ফিচার লেখার সামান্য হাতযসের কথা হয়তো পৌঁছে গিয়েছিল আজাদ ভাইয়ের কানে। ওইদিন রাত ১২ টা ৪ মিনিটে ফেসবুক মেসেঞ্জারে হঠাৎ আজাদ ভাইয়ের খুদে বার্তা-‘আমার একুশে পত্রিকার জন্য একটা ফিচার জাতীয় লেখা দিন।’ ভাইয়া লেখার সীমানাও ধরে দিলেন-সম্ভাবনা, সাফল্য কিংবা আবিষ্কার।
সেই থেকে পরিচয়ের বদ্ধ জানালাটা খুলল। পরে শহুরে সাংবাদিকতা শুরু করলে বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট কাভার করতে গিয়ে ভাইয়ার সঙ্গে দেখা হতো নিয়মিত। তাঁর চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করার ধরনটা বেশ ভালো লাগতো। সেটিতে যে মিশে থাকত সাংবাদিকতার শক্তি, অনিয়মকে ছেড়ে না দেবার বার্তা।
২০১৬ সালের কোনো একদিন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে একটি অনুষ্ঠানে অনিয়ম নিয়ে আয়োজকদের এমন ধরা ধরলেন, তাঁদের তো-‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। শেষবার তাঁকে দেখলাম গত ফেব্রুয়ারিতে, দৃষ্টির ত্রিশ বছর ফূর্তি উৎসবে। দৃষ্টির প্রাণপুরুষ বকুল ভাইয়ার আমন্ত্রণে সেদিন আমিও গিয়েছিলাম সেই উৎসবে। ক্যানসারের সঙ্গে লড়তে লড়তে আজাদ ভাইয়ের শরীর তখন একেবারেই ত্রস্ত। কিন্তু মানসিকভাবে তখনো তাঁকে এতটা দৃঢ় দেখাচ্ছিল, মনে মনে আশা করছিলাম ক্যানসারই হার মানবে আজাদ ভাইয়ের কাছে। থেমে থেমে বলা নিজের সম্মোহনী বক্তব্যে সবাইকে মুগ্ধ করে রাখলেন। কায়সার ভাইয়া তাঁকে নিয়ে মজা করে একটা কথা বলতেই হো হো করে হেসে উঠলেন। সেই শেষ! দ্রুতই সবকিছু কীভাবে যেন বদলে গেল।
সেদিন সামনের সারিতে প্রাণবন্ত আর আনন্দ-উল্লাস-উচ্ছলতাকে সঙ্গী করে বসে থাকা মানুষটা আজও ছিলেন প্রথম সারিতে। তবে সাদা কাপাড়ে মোড়ানো, নীরব-নিস্তব্দ-নিথর শরীরে। কীভাবে মানব!
আজাদ ভাই যখন তাঁর প্রিয় শহরের এখানে-ওখানে শেষবারের মতো ঘুরে ফিরে যাচ্ছেন বাবার কাছে, তখন অঝোর ধারায় নামল বৃষ্টি। চট্টগ্রামের প্রিয় সন্তানের জন্য সহকর্মীদের পাশাপাশি প্রকৃতিও যেন কাঁদছিল!
তাসনীম হাসান
স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক বাংলা।
ভালো থাকুন প্রিয় বটবৃক্ষ
আজাদ তালুকদার। এ গুণী ও অসম্ভব মেধাবী মানুষটার সাথে পরিচয় ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে। সময়ের হিসেবে খুব অল্প সময়ের জন্য উনার সহকর্মী ছিলাম। লাভ লেইনের আবেদীন কলোনীতে আজাদ ভাইয়ের ভাড়া বাসাতে ছিল তখন একুশে পত্রিকার অস্থায়ী অফিস। চিলেকোঠার সে বাসার ছোট্ট এক কক্ষে ছিল আমাদের সব কর্মযজ্ঞ। সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত অবধি সংবাদ, সহকর্মী আর একুশে পত্রিকা নিয়েই নিমগ্ন থাকতেন উনি৷ কতবার যে নিজেই রান্না করে আমাদের খাওয়াতেন।
আড্ডাপ্রাণ এ মানুষটি সহকর্মীদের জন্য ছিলেন জানপ্রাণ। অনুজদের জন্য তাঁর ছিল অসম্ভব স্নেহ-ভালোবাসা৷ মানুষের উপকারে নিজের সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু করতেন। বয়সের ব্যবধান ভুলে মিশে যেতেন আন্তরিকতার ঢালি খুলে। গল্পে গল্পে বলতেন উনার ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। সাবেক হলেও সহকর্মীদের সাথে তার ছিল হৃদ্যতার সম্পর্ক। বিপদে-আপদে, সময়ে অসময়ে ফোন করে নিতেন খোঁজখবর। আহা! সেসব এখন কেবলই স্মৃতি।
সবশেষ জানুয়ারিতে আজাদ ভাই ফোন করে কতবার যে অনুরোধ করলেন পারকি বিচে উনার সাথে যেতে। কাজের ফুরসত দেখিয়ে তখন যাইনি। আর এখন তা বারবার মনে পড়ছে। শেষ সময়ে উনি আসলে সতীর্থ আর সহকর্মীদের খুব মিস করতেন। নস্টালজিক হতেন। আর এখন আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে সারা জীবন আমাদের নস্টালজিক করে দিয়ে গেলেন।
ভীষণ মিস করবো ভাইয়া। আপনার মতো বস ও অগ্রজ এ সময়ে বিরল। অসীম সেই শূন্যতা বারবার মনে করিয়ে দিবে আপনাকে। ভালো থাকুন প্রিয় বটবৃক্ষ।
আবদুল্লাহ রাকীব
স্টাফ রিপোর্টার, মাছরাঙা টেলিভিশন।
প্রকৃতিও কাঁদছে আপনার বিদায়ে
যে কয়েকবার আজাদ ভাইয়ের বাসায় গিয়েছি প্রতিবারই তিন থেকে চার ঘন্টার আগে বের হতে পারিনি। কথা আর গানে কেটে গেছে সময়। একবার তো নিজের হাতে রান্না করে দুপুরের খাবারও খাইয়েছেন। সবাইকে আপন করে নেওয়ার অদ্ভুত এক ক্ষমতা ছিল ওনার মধ্যে। গান গাইতে ভালোবাসতেন, মাছ ধরতে ভালোবাসতেন।
গত বছরের শেষ দিকে ভাইয়ার বাসায় গিয়ে প্ল্যান হলো আমরা সবাই সীতাকুণ্ড যাবো মাছ ধরতে। এক সপ্তাহ পরই দুইদিন সময় হাতে রেখেই ফোনে ভাইয়া জানালেন, মাছ ধরতে যাওয়ার সেই পরিকল্পনার কথা। কিন্তু কক্সবাজারে অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকায় ভাইয়ার সাথে সীতাকুণ্ডে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া হলো না আমার। আফসোস হচ্ছে এখন, আর কখনোই মাছ ধরতে যাওয়া হবে না আমাদের।
আজকের সকালটা বিষন্নতায় ভরা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি জানান দিচ্ছে প্রকৃতিও কাঁদছে আপনার বিদায়ে। সবাইকে এভাবে কাঁদিয়ে চলে গেলেন আজাদ ভাই। আর দেখা হলো না আমাদের। নিজেকে অপরাধী লাগছে খুব। ওপারে ভালো থাকবেন।
শিহাব জিসান অনিক
সদস্য, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন।
আমার অস্তিত্বের একটা অংশ আজ বিলীন
আমার অস্তিত্বের একটা অংশ আজ বিলীন হয়ে গেছে। যে মানুষটা আমার যে কোন বিপদে ছায়া হয়ে থাকত, যে কোন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হত সে মানুষটাকে হারিয়ে ফেলেছি আজ।
আমার ভাই, স্বজন আজাদ তালুকদার আর আমাদের মাঝে নেই।
মোস্তফা ইউসুফ
স্টাফ রিপোর্টার, দ্য ডেইলি স্টার।
আপনি কী তারা হয়ে দেখবেন?
আজাদ ভাই, শেষ কথা হয়েছিল এই যুদ্ধ জয় করে ফিরে আসবেন। ‘ইনশাআল্লাহ’ বলেছিলেন। কিন্তু আর ফিরলেন কই? আজাদ ভাই আপনি শিখিয়ে গেছেন জীবন কাটে যুদ্ধ করে। প্রাণের মায়া সাঙ্গ করে। তবুও যেন জীবনের স্বাদ নাহি পাই। বৈশাখের ওই রুদ্র ঝড়ে, আজ বিশাল আকাশটা ভেঙে পড়েছে।
আপনার রেখে যাওয়া এ তরী বাইতে হবে। আপনি কী তারা হয়ে দেখবেন? ওখানে থেকেও ফাঁকি দেবেন না তো!
আল বিদা, ভাই!
মেহেদী হাসান কামরুল
নিউজরুম এডিটর, ডিবিসি টেলিভিশন।
তাঁর এই ঘুম যেন শান্তির ঘুম হয় খোদা
আজাদ তালুকদার ভাইয়ের সঙ্গে চ্যাট হিস্ট্রি পড়ছিলাম। গত বছর চিকিৎসা চলাকালেই একটা বইয়ের নাম চেয়েছিলেন ফেসবুকে। ‘অসুখ-বিসুখে স্বজন’ নামটি প্রস্তাব করেছিলাম। চূড়ান্ত না হলেও পছন্দ করেছিলেন।
প্রচুর নিউজ লিংক আমাদের আদান-প্রদান হয়েছে সেই ২০১৬ সাল থেকে! ২০২০ সালে সব লিংক করোনা থেকে আত্মরক্ষা, করোনা হলে করণীয়! আহারে আজাদ ভাই! মানুষের কল্যাণে কী পেরেশান হয়ে যেতেন!
চট্টগ্রাম প্রতিদিনে থাকতে প্রায় দেখা হতো হয় সিঁড়িতে, নয় অফিসের নীচে। এই…. ফারুক মুনির, চালিয়ে যান। তৌফিক (হোসাইন তৌফিক ইফতিখার) ভাইয়ের দোয়া থাকলে কেউ আটকাতে পারবে না। এ দুটি বাক্য ছিল কমন।
মাঝে মধ্যে আমি তিন তলায় উঠতাম একুশে পত্রিকার অফিসে। আজাদ ভাই দরাজ গলায় ডাকতেন, এই মাসি (অফিস সহকারী), মেহমান আসছেন, গুরুত্বপূর্ণ (উনার ভাষায়) মেহমান। চা-নাস্তা দিন।
প্রথমবার মাইগ্রেশন অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর দেখামাত্রই বুকে জড়িয়ে বললেন-বলছিলাম না? সফলতা আসবেই, লেগে থাকুন। কথাগুলো রয়ে গেলো। একজন আজাদ তালুকদার আমাদের মাঝে এভাবে বেঁচে থাকবেন।
আগের মতো কষ্ট এখন নিজেও সহ্য করতে পারিনা। মাইয়াতের চেহারা অনেক দিন দেখা বন্ধ রাখছি। কিন্তু জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে জানাজা পড়ার পর একজন আজাদ তালুকদারকে না দেখে থাকতে পারিনি। তাঁর এই ঘুম যেন শান্তির ঘুম হয় খোদা।
ফারুক মুনির
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম খবর।
একশ টাকাই পকেটে ছিল আজাদ ভাইয়ের
২০১৫ সাল। আমি তখন বাংলামেইলের চবি প্রতিনিধি। একদিন সকালে আজাদ তালুকদার ভাইয়ের ফোন। তিনি ক্যাম্পাসে যাবেন। তাঁকে সময় দিতে হবে। সকাল ১০টার দিকে তিনি ক্যাম্পাসে আসলেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফ নিলেন। তারপর তিনি দুপুর পর্যন্ত কাজ করলেন।
দুপুরে খাবেন, তাই জিজ্ঞেস করলেন জমির অল্প দামে কোথায় খাওয়া যায়। আমি ওনাকে আর ক্যামেরা জার্নালিস্টকে লেডিস হলের ঝুপড়িতে নিয়ে গেলাম। অর্ডার দিলেন তিনি। দুটি সবজি, একটি মাছ। মাছটি আমাকে দিয়ে তিনি খেলেন সবজি আর ফ্রি ডাল দিয়ে। আমি এত করে অনুরোধ করলাম, মাছ আরেকটি নিতে। কিন্তু ওনার যে পকেটে অত টাকা নেই তখনও বুঝতে পারিনি। নিজে কম খেয়ে আমাদের খাওয়াইছেন।
আমাদের ৯৫ টাকার মতো বিল আসলো। আজাদ ভাই মানিব্যাগের এপাশ-ওপাশ খুঁজলেন। আমি বললাম, ভাই টাকা আমি দিই। তিনি বারণ করলেন, তা হয় না। শেষমেশ মানিব্যাগের এক কোণায় পুরনো একটি একশ টাকার নোট বের করে দিলেন। হেসে আজাদ ভাই বললেন, জমির দেখো এই একশ টাকাই আছে।
জমির উদ্দিন
স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক আজকের পত্রিকা।
তিনি একজন দক্ষ সম্পাদক ছিলেন
আপনার এভাবে চলে যাওয়া নিয়ে আমার কোনো রাগ নাই, আক্ষেপও নাই। আজাদ ভাইয়া তবে আপনি সর্বশেষ বলেছিলেন ইনশাআল্লাহ দেখা হবে। হলো না তো। সর্বশেষ রমজানে আজাদ ভাই মুম্বাই থেকে (কেমোথেরাপি নিচ্ছিলেন) আমাকে মেসেঞ্জারে ফোন করলেন ফোনের ঐ প্রান্ত থেকে বললেন অনন কাল অফিসে (একুশে পত্রিকায়) ইফতারের দাওয়াত, চলে এসো। আর কিছু বলার আগেই আমি হুট করে আজাদ ভাইয়াকে বললাম, ভাই আপনার শরীরের কী অবস্থা?
ভাইয়া শুধু বললেন, দোয়া করো। তখনি যা বোঝার বুঝে নিলাম তবে এতো অল্প সময়ে আপনি এভাবে চলে যাবেন, অবিশ্বাস্য! একুশে পত্রিকায় আমার খুব যাতায়াত ছিল। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও আমি দাওয়াত পেতাম। আজাদ ভাই আমাকে এভাবেই বলতেন, ‘কাল যেন দেখি।’
একুশে পত্রিকা মানে ‘আজাদ তালুকদার’। আর আজাদ তালুকদার মানেই ‘একুশে পত্রিকা’। তিনি এই শহরের একজন দক্ষ সম্পাদক ছিলেন। তিনি এমন একজন সম্পাদক, যিনি করোনার সময় নিজের সহকর্মীর জন্য চাল-ডালটা পর্যন্ত নিজ গাড়িতে করে পৌঁছে দিয়েছিলেন; তিনিই আজাদ তালুকদার, তিনিই একুশে পত্রিকার সম্পাদক।
সর্বশেষ ২০১৯-এ আজাদ ভাইয়া তৎকালীন চট্টগ্রামের এসপি (বর্তমান চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি) নুরে আলম মিনা সাহেবের আমন্ত্রণে মধ্যাহ্নভোজ শেষে বসেছিলেন, তখন ওনার একটা ছবি তুলি। এটাই আমার তোলা আজাদ ভাইয়ার একমাত্র ছবি। নিজের ছোট ভাইয়ের মতো ভালোবাসতেন আজাদ ভাইয়া। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুন। ওপারে ভালো থাকুন।
আজীম অনন
ফটো সাংবাদিক, দৈনিক বণিক বার্তা।
‘কাজ জানা মানুষের এভাবে ঘুরতে হয় নাকি’
প্রিয় আজাদ ভাই আর নেই আমাদের মাঝে, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। একসময় আমি যখন একুশে টেলিভিশন ছেড়ে বেকার ঘুরছিলাম তিনি আমাকে ডেকে এনে ওনার সাথে কাজ করতে বলেছিলেন। অথচ এর আগে ওনার সাথে আমার তেমন পরিচয়ও ছিলো না। বড় ভাইয়ের মতো অনেক উপদেশ দিয়েছিলেন তখন আমাকে।
আজাদ ভাই বলেছিলেন, ‘তোমার মতো কাজ জানা মানুষের এভাবে ঘুরতে হয় নাকি, আসো আমার সাথে কাজ করো, দেখবে ভালো লাগছে। হয়তো টাকা পয়সা বেশি দিতে পারবো না। তবে লেগে থাকলে সুদিন একদিন আসবে।’
আজ খুব মনে পড়ছে আজাদ ভাইয়ের এসব কথা। আমার মনে স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে সব কথা। চলে গেলেন আজাদ ভাই, দিয়ে গেলেন ব্যথা। পরপারে যেন ভালো থাকেন এ কামনা আমাদের।
সঞ্জীব দে বাবু
ক্যামেরাপার্সন, মাছরাঙা টিভি।
আজাদ তালুকদারের নেতৃত্বে একুশে পত্রিকা সাহসী সাংবাদিকতার প্রতিরূপ হয়েছে
আজকে সারা দিন দেশে-বিদেশে অনেক ঘটনা ঘটেছে। বহু জনের সঙ্গে মিশেছি, বহু আলাপ হয়েছে। কিন্তু আমার চোখের সামনে বারবার এই একটি মুখ ভেসে উঠেছে। ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। সেই সাত-সকালে দুঃসংবাদটি জেনেছি। কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না।
সাংবাদিকতায় চেনামুখ, প্রিয় মুখ চট্টগ্রামের আজাদ তালুকদার ভাই। মানুষ মরণশীল। এমনকি আজাদ ভাইয়ের চেয়ে কম বয়সীরাও হুটহাট মরে যায় আজকাল! তবু কেন এই মৃত্যু এতটা আলাদা মনে হচ্ছে জানি না। আসলে অবিচল, পাহাড়সম মানসিকতার কারণে কখনও মনেই হয়নি যে তাঁর শরীরের ভেতরে মরণব্যাধি ক্যান্সার বসত গেড়েছে!
ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তিনি কদিন পরপরই ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই ফেসবুকে আপডেট দিয়েছেন। জীবনযুদ্ধের মাঝেও এই জগৎ-সংসার নিয়ে লেখালেখি চালু রেখেছিলেন। ওসব পড়তাম, আর কেন যেন মনেই হতো না শেষপর্যন্ত ক্যান্সার তাঁর সঙ্গে পেরে উঠবে!
অল্প কিছুদিন আগে উনার একটি বিধ্বস্ত ছবি দেখেছিলাম, তা দেখে বুকটা কেঁপে উঠেছিল, হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম। একজন তরতাজা প্রাণবন্ত মানুষ এমন নিস্তেজ হয়ে যেতে পারেন, সেদিনই মনে হলো। তথ্যমন্ত্রী পাশে দাঁড়িয়ে, বিছানায় তাঁর নিস্ফল তাকিয়ে থাকা, চোখ দুটো ছলছল। তখনই মনে হচ্ছিলো সময় বোধহয় ফুরিয়ে এসেছে। গত রাতেই এসে গেল মহা অনাকাঙ্খিত সেই মুহূর্তটা।
আজাদ তালুকদার ছিলেন অত্যন্ত বন্ধু-বৎসল। আমার কিংবা আমাদের অনেকের মাঝে তিনি বিস্তৃত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় ২০১০ সালের দিকে। রশীদ মামুন ভাইয়ের সৌজন্যে তাদের বন্ধুদের এক আড্ডায় আমিও শামিল ছিলাম। এরপর আর কখনও দেখা হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আলাপ হয়েছে অল্প।
ঢাকার সাংবাদিকতার সঙ্গে চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার মিল-অমিল তথা সামগ্রিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণমূলক একটি লেখা চেয়েছিলেন আমার কাছে। লেখাটির জন্য বেশ কিছুদিন লেগেও ছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত কেন জানি লেখাটা দিতে পারিনি। এখনও চাইলেও আর সম্ভব নয়। বড্ড আফসোস হচ্ছে।
একুশে পত্রিকার মতো একটি স্থানীয় প্রকাশনাকে তিনি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছেন। তাঁর নেতৃত্বে পত্রিকাটি সাহসী সাংবাদিকতার প্রতিরূপ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আজাদ ভাই, এই বিশাল-বিস্তৃত মহাবিশ্ব থেকে আপনি ঝরে পড়েছেন, কিন্তু আপনার ছায়াটা রয়ে যাবে। আপনি বহুকাল বেঁচে থাকবেন সাহসী লেখনি, বোধশক্তি আর অজেয়র বিরুদ্ধে অদম্য লড়াইয়ের উদাহরণ হয়ে।
পরম করুণাময় মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি, আজাদ ভাই ওপারে মহা আনন্দে থাকুন, শান্তিতে থাকুন। তাঁর ছেলের একটি চিঠির কথা জানতে পেরেছি। বাবা বিজয়ীর বেশে ফিরবে বলেই চিঠিতে ছেলের প্রত্যাশা ছিল। প্রত্যেক সন্তানই বাবার বিজয় দেখতে চায়। আজাদ ভাইয়ের ছেলের জন্য খুব খারাপ লাগছে। আমাদের এই শোকপ্রকাশ ক্ষণিকের। পরিবার আর সন্তানের শোক-শূন্যতা সারাজীবনের। যা কখনও শেষ হয় না, শেষ হবার নয়।
জয়নাল আবেদীন
সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক কালের কন্ঠ।
চট্টগ্রাম হারিয়েছে মেধাবী স্মার্ট একজন সাংবাদিককে
আজাদ ভাই আমার সাংবাদিকতার গুরু৷ সম্পর্কটা ১৬ বছরের। কয়েক বছর ধরে তিনি আমাকে বলতেন, ‘তুমি এখন ম্যানেজার হয়ে গেছো৷ আগের সেই রিপোর্টার আলম দিদার নেই৷’ আমি বরাবরই নিজের অক্ষমতার ব্যাখ্যা দিয়ে উনাকে বুঝ দিতাম৷ প্রতি উত্তরে বলতেন, ‘তাহলে এই পেশা ছেড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য কর৷ রাজনৈতিক অবস্থানকে কাজে লাগাও৷ পাশপাশি রাজনীতিতে সময় দাও৷ তুমি সেখানেও ভালো করবে৷’
আপনার সাথে ও তৌফিক ভাইয়ের সাথে পরামর্শ করে সাংবাদিকতা (চাকরি) ছেড়ে দিছি। কিন্তু রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক অবস্থান দেখার আগেইতো আপনি চলে গেলেন।
এ ক’মাস আমার ছেলেকে নিয়ে ইন্ডিয়া-চট্টগ্রামে খুব দৌঁড়ের মধ্যে ছিলাম। দেশে আসার পর নিজেও অসুস্থতাসহ নানা সমস্যার কারণে আপনাকে দেখতে ঢাকাও যেতে পারিনি। আসলে আপনার বিমর্ষ চেহারা দেখার সাহসও হতো না আমার! কারণ আমাদের কত শত স্মৃতি! কত অভিমান রাগ ভালবাসার স্মৃতি।
আরেকটি আক্ষেপ থাকলো মনে, আপনার ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ বইটির আড়ম্বরপূর্ণ প্রকাশনা উৎসব করার কথা বলতেন সব সময়। আরও বলতেন, সেখানে স্পিকার, তথ্যমন্ত্রী সবাই থাকবেন। আরও থাকবেন, যাদের সাফল্যগাঁথা রচিত হয়েছে এই বইয়ে সেসব গুণীজনরাও। আর এই আয়োজনটির মূল ভূমিকা পালন করতে হবে আমাকে। কিন্তু…
পরিশেষে বলব, চট্টগ্রাম হারিয়েছে মেধাবী স্মার্ট একজন সাংবাদিককে। আমি হারিয়েছি অভিভাবকতুল্য একজন বড় ভাইকে…. আল্লাহ আপনাকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুক!
আলম দিদার
সাবেক হেড অব নিউজ, সিভয়েস২৪ডটকম।
বলতেন ‘কী আর হবে। এভাবে লিখে যেতে চাই।’
‘জম্মিলে মরিতে হবে’—চিরন্তন সত্য। আজাদ তালুকদার ভাইও আল্লাহর ডাকে সাড়া দিলেন, আমাদের সবাইকে এভাবে সাড়া দিতে হবে। আজ আজাদ ভাইয়ের জানাজায় দাঁড়িয়ে ভাবতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল এভাবে এক পাশ থেকে নাই হয়ে গেলেন তারুণ্যদীপ্ত মানুষটি।
চেরাগি মোড়ে গেলে আমাদের ঠিকানা ছিল তার প্রকাশনা অফিস বর্ণনা ও একুশে পত্রিকা। চা, পেয়াঁজু, সিংগারায় কত শত আড্ডা।
ভীষণ রাগী ও জেদি মানুষ ছিলেন আজাদ ভাই। সবসময় লিখতেন সাহসিকতার সাথে। কতবার উনাকে সাবধান করেছি, বারবার বলতেন ‘কী আর হবে। এভাবে লিখে যেতে চাই।’ দ্ব্যর্থহীন শব্দটি উনার মুখে লেগে থাকতো সবসময়।
যেকোনো কিছু লেখার পর সেটা পড়ে শুনাতে ভালোবাসতেন। সবসময় শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলার চেষ্টা করতেন।
শুদ্ধচর্চার মানুষটির এমন বিদায়ে চারপাশ যেন কাঁদছে। আল্লাহ আজাদ ভাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।
আজাদ মঈনুদ্দিন
কন্ট্রিবিউটিং রাইটার, সারাবেলা২৪ডটকম।
লড়াই করার মানসিকতা ছিল অন্যরকম
করোনায় আমার বাবা মারা যাওয়ার কারণে, সে সময় অনেকেই আমার সাথে যোগাযোগ করেননি। অথবা হয়েও উঠেনি। কিন্তু যে কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক আমার খবরাখবর নিয়েছেন তাদের মধ্যে আজাদ ভাই অন্যতম। বাবার অনুষ্ঠানে তিনি ভাবিকে নিয়ে রাউজান গিয়েছিলেন। আমাদের পুকুর পাড়ে বসে গানের আড্ডারও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তা আর হয়ে উঠল না।
ক্যান্সার ধরা পড়ার কিছুদিন আগে মনে হয় আজাদ ভাইয়ের বাসায় আমি, ফয়সাল ভাইসহ আরও অনেকেই একটি গানের আড্ডায় অংশ নিয়েছিলাম। বারান্দায় লাগানো সবজি বাগান নিয়ে অনেক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন।
ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করার এক পর্যায়ে শেষবার জামালখানে বুথের সামনে দেখা হয়েছিল। বলেছিলেন বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছার কথা। আজাদ ভাইয়ের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার মানসিকতা ছিল অন্যরকম। বলেছিলেন, একটি বইয়ের কাজ করবেন। কীভাবে ভারতে গিয়ে কম খরচে চিকিৎসা করা সম্ভব। কোথায় গেলে সঠিক সেবা পাওয়া সম্ভব। প্রথমদিকে, ভুল চিকিৎসার কথাও বারবার বলেছিলেন। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করার কথাও ছিল আজাদ ভাইয়ের।
একুশে পত্রিকার সম্পাদক ও একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক সহকর্মী আজাদ ভাই আর পৃথিবীতে নেই। চলে গেছেন। যেতে হবে সবাইকেই। তবে, অনেকের ফেসবুকে সমবেদনা দেখে আজাদ ভাইয়ের একটি হতাশার কথা মনে পড়ল, আমি ও সেই কারনেই স্মৃতিচারণ করলাম। ‘প্রেসক্লাবের সদস্যপদটা আমার আর পাওয়া হল না।’
পার্থ প্রতীম বিশ্বাস
সিনিয়র রিপোর্টার, সময় টেলিভিশন।
বর্ণিল স্মৃতি এসে ভিড় করছে মনের গহীনে
২০১১-১২ সালের কথা। তখন আমি দৈনিক আজাদীতে কাজ করি। একদিন আজাদ তালুকদার ভাই বললেন, ‘মুজাম্মেল, সাপ্তাহিক ২০০০ এ কাজ করবে।’ আমি বললাম, ‘আপনি সুযোগ করে দিলে করব।’
এরপর তিনি পত্রিকাটির সম্পাদক এবং একজন সিনিয়র সহ সম্পাদকের সঙ্গে আমাকে যোগাযোগ করাই দিলেন। সেই থেকে প্রায় তিন বছর লিখেছি সাপ্তাহিক ২০০০ পত্রিকায়। লেখার ভালো সম্মানিও পেতাম।
আজাদ ভাইয়ের সঙ্গে এমন বর্ণিল স্মৃতি এসে ভিড় করছে মনের গহীনে। তিনি আজ স্রষ্টার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন। হে মহান রব তাআলা, তুমি তো রহমতের সাগর। সে সাগরের রহমত দিয়ে তাঁকে আবৃত করে দিও। পরপারে আজাদ ভাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।
রেজা মুজ্জাম্মেল
স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন।
‘সবুর, অভাই, আমি খুব ক্ষুদ্র মানুষ’
আজাদী থেকে ২য় দফায় আমার চাকরি যায় ২০২০ সালের ২২ আগস্ট। দেশের প্রথম করোনা শনাক্ত হয়েছিল ওই বছরের ৮ মার্চ। চাকরি যাওয়ার কালটা ছিল করোনার একেবারে ভরদুপুর। ২২ আগস্ট রাতে চাকরিহীন ঘুম বেশ ভালোই হয়েছিল। ২৫ থেকে ৪০ বছর অবদি যদি মানুষের ভরা যৌবন ধরি তাহলে সেই জীবন-যৌবনের স্বর্ণ সময়গুলো ওই পত্রিকায় কেটেছিল ক্লান্তিহীন ও চিন্তামগ্নতায়।
যাক, চাকরি যাওয়াতে অনেকদিন পর খানিকটা স্বস্তি পাওয়া গেল। কিন্তু জীবন চলার দুশ্চিন্তা তো সেই স্বস্তিকে উবে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। ২৩ আগস্ট ঘুম থেকে উঠলাম। উঠেই প্রথম কল পেলাম বন্ধুবর আজাদ তালুকদারের। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে খুব গুছিয়ে সহজাতভাবে বললেন ঠিক এভাবে, ‘সবুর, অভাই, আমি খুব ক্ষুদ্র মানুষ। আমার ছোট্ট একটা পত্রিকা (একুশে পত্রিকা) আছে। আমার দরজা আপনার জন্য সব সময় খোলা থাকলো’। কথাগুলো শুনে আমার মনের গভীরতা ও দৈর্ঘ্য দুটোই অস্বাভাবিক বেড়েছিল সেদিন।
আসলে এসময়টাতে আপন কারও ফোন পেলে মনটা আকাশের মতো চওড়া হয়ে যায়। এরপর আমি একুশে পত্রিকায় তিনদিন নিউজ পাঠিয়েছিলাম। ছাপানো হয়েছিল বেশ গুরুত্ব দিয়ে। এটা ছাড়াও আজাদ তালুকদারের সাথে অনেক স্মৃতি। এখন তো আর কোনো দরজা খোলা নেই। একমাত্র তাঁকে স্মরণ ও দোয়ার দরজা ছাড়া। আজাদ ভাই, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন।
সবুর শুভ
ব্যুরো প্রধান, দৈনিক আজকের পত্রিকা।
এত স্মৃতি লিখে শেষ করা যাবে না
‘সবুজ, দেখুন, আমি এখন আল্লাহকে বলছি, আমার এসব গাড়ি, বাড়ি, ধন-সম্পদ সবকিছুর বিনিময়ে আমাকে সুস্থ জীবন দাও’। বুঝলেন সবুজ, প্রয়োজনে আমি ধনিয়া পাতা বিক্রি করে চলবো৷ সুস্থতা বড় নেয়ামত! গত ১২ জুলাই রাতে আমি ও মহসীন কাজী দেখতে গিয়েছিলাম আজাদ তালুকদারকে। আমাদের বসতে দিয়ে তিনি এশার নামাজ আদায় করে শুরুতেই আমাকে বললেন এই কথাটাই!
নানা কথার ফাঁকে তাঁর একমাত্র সন্তানের পাঠানো চিঠি আমাদের পড়ে শোনালেন। পরদিন ভোরে আজাদ ভাই চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া চলে যাবেন। তাই ছেলের চিঠি। আজাদ ভাই পড়ছেন, ‘…বাবা, তুমি সাহস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছো। তুমি হতাশ হইও না। এইবারও তুমি ইন্ডিয়া থেকে জয়ী হয়ে ফিরে আসবে…’
এসব শুনছি আর আমার ভেতরে যেন কান্না হচ্ছে… নাহ, আজাদ ভাই তাঁর ছেলের আশাবাদের মতো ফিরেছেন। কিন্তু জয়ী হয়ে ফিরতে পারেননি। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আজাদ ভাইকে নিয়ে এত এত স্মৃতি লিখে শেষ করা যাবে না। কতদিন কত পথ আমরা এক সাথে হেঁটেছি.. বলতে হয়, আজাদ ভাইই প্রায়ই আমাদের সবাইকে এক করে বেড়ানো বা আড্ডা দেওয়ার উদ্যোগ নিতেন। খাবার আয়োজন বা গানের আসরে তিনি থাকতেন সামনে…
আমি, রশীদ মামুন, কামাল পারভেজ, নাসির উদ্দিন হায়দার, হামিদ উল্লাহ, আজাদ মঈনুদ্দিন, শাহনেওয়াজ রিটন, আশরাফ রুবেল, শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, শামসুল ইসলাম, আরিচ আহমেদ শাহ, মোস্তফা ইমরান সোহেল, রেজা মুজ্জাম্মেল, সুরেশ কুমার দাশ, শান্তনু চৌধুরীসহ আরও অনেকেই আমরা একসাথে এত সময় কাটিয়েছি, সব এখন স্মৃতি।
আমরা এই ফেসবুকে একদিন এসব স্মৃতি লিখতে চাই সবাই… আজাদ ভাই নেই, কেমন জানি অবিশ্বাস্য! আজাদ ভাই, যাবতীয় ভুলের জন্য ক্ষমা করে দিবেন। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় উনার লেখা বই হাতে দিলে আমি ছবি উঠানোর আবদার করি। তিনি বললেন, সবুজ, আমার এই রুগ্ন শরীর আমি মানুষকে দেখাতে চাই না… আজাদ ভাই, আপনার রুগ্ন শরীরের নিথর দেহ কীভাবে দেখব?
আলমগীর সবুজ
ব্যুরো প্রধান, দেশ টিভি।
বড় শূন্যতা তৈরি হলো চট্টগ্রামে
ওপারে চলে গেলেন প্রিয়জন
একুশে পত্রিকার সম্পাদক প্রিয়জন আজাদ তালুকদার আর নেই। ক্যান্সারের কাছে হেরে আজ ভোরে চলে গেলেন তিনি ওপারে। ইন্নালিল্লাহে….রাজেউন। দারুণ মেধাবী এই সাংবাদিকের মৃত্যুতে বড় এক শূন্যতা তৈরি হলো চট্টগ্রামে। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি মনে প্রাণে।
স্রষ্টার কাছে ভালো থাকুক তিনি। থাকুক শান্তিতে…
সারোয়ার সুমন
আঞ্চলিক সম্পাদক, দৈনিক সমকাল।