চট্টগ্রাম: বিক্রেতা সেজে ল্যাপটপ বিক্রি। দুদিন পর এই ল্যাপটপের আরও দাম চান বিক্রেতা। তবে সাড়া না পেয়ে পুলিশের কাছে সহায়তা চেয়ে বোকামিই করেন এই চোর। আর তাতে শেষ পর্যন্ত ধরাও পড়তে হয়েছে তাকে। ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজার সদরে।
চোর ধরা পড়ার চমৎকার এই ঘটনাটি বুধবার নিজের ফেসবুক ওয়ালে বলেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা।
‘কক্সবাজার যেতে হয়েছিল অফিসিয়াল কাজে। সন্ধ্যায় (১৭ জুলাই) সদর থানায় যাওয়ার পর ওসি স্যারের রুমে চা-চক্র চলছিল। হঠাৎ ডিউটি অফিসার এক ব্যক্তিকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করলেন। অভিযোগ- ভদ্রলোকের টাকা উদ্ধারে পুলিশ সহযোগিতা করছে না।’
এরইমধ্যে ওই অভিযোগকারীর দিকে মনোনিবেশ করেন পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা। দেখেন গায়ে শার্ট, পরনে লুঙ্গী, পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে আছেন। এসময় তিনি দাবি করলেন, পায়ের অসুস্থতার জন্য ঢাকা থেকে কক্সবাজার এসে দোকানদারের কাছে ১৮ হাজার টাকায় একটি ল্যাপটপ বিক্রি করেছেন। দোকানদার ৮ হাজার দিয়েছেন, বাকি ১০ হাজার দিচ্ছেন না।
সন্তোষ চাকমা লিখেছেন, ‘ওসি স্যার বললেন ভদ্রলোক অসুস্থ বিধায় সহযোগীতার জন্য তিনি সারাদিন ধরে তার সাথে একটি মোবাইল টিম দিয়েছিলেন। বিনিময়ে পুলিশকে গালাগালি আর হুমকি।’
দায়িত্বপ্রাপ্ত টহল টিমের কর্মকর্তা ওই দোকানদারকে হাজির হয়ে জানালেন, ল্যাপটপ বিক্রী হয়েছিল শুধু ৮ হাজার টাকায়। বিক্রেতা শুক্রবার সন্ধ্যায় ল্যাপটপ বিক্রী করে টাকা বুঝে নিয়ে চলে যায়। দুই দিন পর দোকানে এসে আরও ১০ হাজার টাকা দাবী করে। তবে ল্যাপটপ বিক্রেতা ভদ্রলোক দাবী করলেন, স্যার আমার ল্যাপটপটা দামি। দাম কোনমতেই ৮ হাজার টাকা নয়।
চোর ধরার প্রাথমিক পর্যায়ের স্মৃতি তুলে ধরে সন্তোষ লিখেছেন, ‘ওসি স্যার আমার পূর্ব পরিচিত বিধায় আমাকে দায়িত্ব দিলেন। ল্যাপটপের বর্তমান কন্ডিশন দেখে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য। ভদ্রলোককে শাসালেন তুমি দক্ষ লোকের হাতে পড়েছ। মালিকানা নিয়ে ভেজাল থাকলে কিন্তু ধরা খাবে। তখন কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে পড়বে।’
‘যথারীতি ল্যাপটপ আমাকে দেওয়া হল। দোকানদারকে প্রশ্ন করলাম সে ল্যাপটপের কোনকিছু পরিবর্তন করেছে কিনা। উত্তরে তিনি পরিবর্তন করেননি বলে জানালেন। ল্যাপটপ চেক করতে গিয়ে দেখি বিভিন্ন ড্রাইভে শুধু খ্রীস্টান ধর্মের বাণী লেখা আছে। আমার পাশে বসা বিজ্ঞ দাদা ভাই ডেস্কটপে রাখা একটি ওয়ার্ড ফাইল চেক করতে বললেন। চেক করতে গিয়ে দেখি এটি ক্লাসের সিডিউল। কোন ক্লাস কোন শিক্ষক নিবে তার তালিকা শিক্ষকের নাম ও মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে।’
এই পর্যায়ে ওই ভদ্রলোক বার বার দাবী করছিল এটি তার ছেলের ল্যাপটপ। ছেলে ঢাকায় ইবনে সিনা হাসপাতালে চাকরী করে। পরিবারের সাথে রাগ করে সে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।
রহস্য ভেদের কথা জানিয়ে সন্তোষ চাকমা লিখেন, ‘পিনপতন নিরবতার মাঝে ল্যাপটপ চেক করে ওসি স্যারকে জানালাম এটি চোরাই ল্যাপটপ। ভদ্রলোক চুরি করে এনে বিক্রী করেছে। এবার ওসি স্যার ভদ্রলোককে ধরে বসলেন।’
ল্যাপটপে থাকা মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করে আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা সন্তোষ চাকমা জানতে পারেন চট্টগ্রাম নগরের একটি গীর্জার অফিস কক্ষ থেকে দুটি ল্যাপটপ, বাইবেল, ল্যাপটপের ব্যাগসহ চুরি হয়েছে। এরইমধ্যে চুরি যাওয়া অন্য ল্যাপটপও কৌশলে উদ্ধার করে পুলিশ।
‘উপস্থিত সবাই খুব মজা পেলেন। চোর ভদ্রলোক এক পর্যায়ে চুুরির কথা স্বীকার করলেন। ওসি স্যারের তাৎক্ষণিক বুদ্বিমত্তায় উপকার চাইতে গিয়ে চোর মহাশয় ধরা পড়লেন।’
পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরের এজি চার্জ গীর্জা থেকে ল্যাপটপ চুরির ঘটনা ঘটে। চন্দনাইশের পূর্ব জোয়ারার বাসিন্দা মুজিবুর রহমান এসব চোরাই ল্যাপটপ কক্সবাজারের বিলকিস মার্কেটে বিক্রি করতে নিয়ে গিয়েছিল। লোভে পড়া এই চোরকে নিয়তি শেষ পর্যন্ত ধরা পড়তে বাধ্য করলো।’
কক্সবাজার সদর থানার ওসি রণজিত বড়ুয়া বলেন, ‘গত সোমবার থানায় এসে পুলিশের সহায়তা চায় চোর মুজিবুর রহমান। সেদিন সন্ধ্যায় ধরা পড়ার পর গতকাল মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।’