সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

থামছেই না খোলা ট্রাকে স্ক্র্যাপ পরিবহন, বিপন্ন জীবন

প্রকাশিতঃ ১৬ অক্টোবর ২০২২ | ১২:২৩ অপরাহ্ন


জোবায়েদ ইবনে শাহাদাত : ‘গত ২৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরের কদমতলী থেকে পোস্তারপাড় যাচ্ছিলাম। আমার ঠিক সামনেই ছিল লোহার স্ক্র‍্যাপ বোঝাই একটি খোলা লরি। যানজটের কারণে মোটরবাইক থামিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। যানজট স্বাভাবিক হতেই লরিটা সামনের দিকে টান দিল। হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে লরি থেকে একটি ধারালো লোহার পাত আমার ঠিক বাম পাশে পড়ে। পাতটির সাথে আমার ব্যবধান ছিল আধা ফুটেরও কম, পাতটি শরীরে পড়লে আমার মৃত্যু নিশ্চিত ছিল। ভাগ্যক্রমে অল্পের জন্য বেঁচে গেলাম। কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে?’

এভাবেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে ফেরার কথা জানাচ্ছিলেন আবিদুর রহমান। শুধু আবিদুরই নন, ঢাকা ট্রাংক (ডিটি) রোড সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা, পথচারী ও ছোট যানবাহনের এমন দুর্দশা ও দুর্ভোগ দীর্ঘদিনের। নগরের দেওয়ানহাট, কদমতলী, মাঝিরঘাট, আইস ফ্যাক্টরি রোডের মত গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত সড়কগুলোতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পরিবহন করা হচ্ছে লোহার স্ক্র্যাপ।

বিপজ্জনক স্ক্র্যাপ, লোহা বা ধারালো পণ্য গাড়িতে বহনের সময় তা ঢেকে বা কনটেইনারের ভেতরে আনা–নেয়ার নিয়ম থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তা মানা হচ্ছে না। ট্রাক, ড্রাম ট্রাক, লরিতে খোলা অবস্থায় পরিবহন করা এসব স্ক্র্যাপ রাস্তায় কোথাও ঝাঁকুনির সময় অথবা গাড়ির উপরে থাকা ধারালো ধাতব বস্তু বাতাসের তোড়ে সড়কে ছিটকে পড়ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া গাড়ির ওপর থেকে ধারালো লোহা সড়কে পড়ে অন্য যানবাহনের চাকা ছিদ্র হওয়াসহ নানাভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে।

স্ক্র‍্যাপ পড়া ছাড়াও এসব ট্রাক-লরির বেপরোয়া গতির কারণে প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কগুলো বর্তমানে পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। শুধু তাই নয়, ধারণ ক্ষমতার ২-৩ গুণ বেশি মালামাল পরিবহন করা এসব ট্রাক-লরি সড়কে বেপরোয়া গতিতে চলাচলের সময় বিকট শব্দে কেঁপে উঠে ওই এলাকা। গাড়িগুলোতে প্রয়োজন ছাড়াই ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ হাইড্রোলিক হর্ন। এতে শব্দদূষণ ও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

জানা যায়, রি–রোলিং মিলের প্রধান কাঁচামালের (স্ক্র‍্যাপ লোহা) বড় একটি অংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। কার্গো এবং লাইটার জাহাজে করে আনা এসব স্ক্র্যাপ লোহা চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন ঘাটে আনলোড করে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় রি–রোলিং মিলে। এসব স্ক্র‍্যাপ কনটেইনারের ভেতরে কিংবা ঢাকা অবস্থায় পরিবহনের নিয়ম থাকলেও স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী ও রি–রোলিং মিল কর্তৃপক্ষ নিয়ম না মেনে খোলা ট্রাক–ড্রাম ট্রাক, লরিতে অনিরাপদভাবে মহাসড়কে আনা–নেওয়া করছে।

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবসায়িক স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ড্রাম ট্রাক ও লরির ধারণ ক্ষমতার দুই-তিন গুণ বেশি স্ক্র্যাপ বোঝাই করে জননিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে জিপিএইচ ইস্পাত, বিএসআরএম, কেএসআরএম-এর মতো স্বনামধন্য রি–রোলিং মিল প্রতিষ্ঠান। এতে জনসাধারণের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হলেও এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ মিলছে না।

শুধু তাই নয়, এসব স্ক্র‍্যাপবাহী গাড়ির বেপরোয়া চলাচলে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার কোমলমতি শিশুদের অভিভাবকদের কপালে।

ড্রাম ট্রাক থেকে স্ক্র্যাপ লোহা ছিটকে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এলাকাবাসী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও রি–রোলিং মিল কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

গত ৪ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ মাদারবাড়ি বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদারবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাউথ ইস্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চিটাগাং প্রি-কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ট্রাফিক বিভাগের ডিসিকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেন।

পরবর্তীতে গত ৮ সেপ্টেম্বর নিরাপদ সড়ক ও পরিবেশ সুরক্ষায় স্ক্র‍্যাপবাহী অনিরাপদ ট্রাক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধের দাবিতে পূর্ব মাদারবাড়ী মাঝিরঘাট রোডে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে সদরঘাট থানা নিরাপদ সড়ক ও পরিবেশ সুরক্ষা বাস্তবায়ন কমিটি। মানববন্ধনে ৩০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতাউল্লাহ চৌধুরী, ২৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের, সদরঘাট থানার ওসি খায়রুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ক্রীড়া সংগঠক এবং বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে।

মানববন্ধনের পর স্থানীয় জনগণ বেপরোয়া গতিতে চলাচল ও স্ক্র‍্যাপবাহী যানবাহন থেকে স্ক্র‍্যাপ পড়ে প্রাণহানির অতীত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি রোধে ও জননিরাপত্তা ব্যাহত হওয়ার প্রতিবাদের পাশাপাশি গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেন। শতাধিক মানুষ ওই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রতিবাদের পাশাপাশি দ্রত এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারির দাবি জানায়।

নিরাপদ সড়ক ও পরিবেশ সুরক্ষা বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারহান হামিদ বলেন, ‘আমাদের এই দাবি দীর্ঘদিনের। স্ক্র‍্যাপবাহী যানবাহনের বেপরোয়া গতি ও স্ক্র‍্যাপ পড়ে বিগত সময়ের প্রাণহানি হয়েছে। যে অবস্থা দেখছি ভবিষ্যতে প্রাণহানির সম্ভাবনা আরও বাড়ছে। আমাদের এলাকায় বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকাবাসী এই রাস্তায় যাতায়াত করে। তাদের কথা চিন্তা করে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘ঢাকায় দিনের বেলা ভারী যানবাহন চলাচলই করতে পারে না। কিন্তু চট্টগ্রামে দেদারসে চলছে। ২-৩ বছর আগে দিনের বেলা ট্রাক-লরি চলাচলের নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করা হতো। তাতে একজন এমপির স্বার্থে আঘাত আসে, তার কূটচাল ও ঝামেলার কারণে এসব ট্রাক-লরি অনিয়ন্ত্রিতভাবে দিনের বেলায়ও চলাচল করছে। আর অনিরাপদভাবে যেসব যানবাহন এসব স্ক্র‍্যাপ পরিবহন করছে তার মালিকও একজন এমপি।’

জানা যায়, জিপিএইচ ইস্পাত, বিএসআরএম- এর মতো রি–রোলিং মিল প্রতিষ্ঠানগুলো দুইভাবে স্ক্র‍্যাপ পরিবহন করে থাকে। খুব কম সংখ্যক মালামালই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব যানবাহনে পরিবহন করা হয়। যদিও এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহনে কতটা মালামাল লোড করা হবে, সেগুলো ঢেকে আনা হবে নাকি খোলা আনা হবে তা ঠিক করা হয় প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুযায়ী। এমনকি কোন সড়ক ধরে যানবাহনগুলো চলাচল করবে তাও প্রতিষ্ঠান থেকেই বলে দেওয়া হয় চালকদের।

দীর্ঘদিন ধরে পোর্ট কানেক্টিং (পিসি) রোডের সংস্কার কাজ চলার কারণে সাময়িক সময়ের জন্য ঢাকা ট্রাংক (ডিটি) রোড দিয়ে এ ধরনের ভারী যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে পিসি রোড দৃশ্যমান ও চলাচল যোগ্য হওয়ার পরও ডিটি রোড দিয়েই চলাচল করে এ ধরনের যানবাহনগুলো।

এ বিষয়ে একাধিক ট্রাক ড্রাইভারের সাথে কথা হলে তারা নিজেদের অসহায়ত্ব তুলে ধরেন একুশে পত্রিকার কাছে। জিপিএইচ ইস্পাতের একটি ট্রাকের ড্রাইভার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘কোম্পানির কর্মকর্তারা ট্রাকগুলোতে ধারণ ক্ষমতার বেশি স্ক্র্যাপ লোহা লোড করার জন্য বন্দর ও ঘাট কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই বলে দেন। সেভাবেই গাড়ি লোড করা হয়। ওভারলোড হলে আমাদের গাড়ি চালাতেও সমস্যা হয়, লোড কম দিতে বললে তারা যা-তা বলে। এমনকি স্ক্র‍্যাপ ঢাকার জন্য নেটও আমাদের দেয় না। আমরা চাকরি করি, আমাদের কী করার আছে বলুন?’

তবে, রি–রোলিং মিল প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি স্ক্র‍্যাপ পরিবহন করে অন্যান্য পরিবহন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির ভিত্তিতে। এতে রি–রোলিং মিলগুলোর বেশি লাভ হয়। এক্ষেত্রেও সমস্ত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় রি–রোলিং মিলের সাথে করা চুক্তি অনুযায়ী। চট্টগ্রামে জিপিএইচ ইস্পাত, বিএসআরএম- এর মতো রি–রোলিং মিল প্রতিষ্ঠানের স্ক্র‍্যাপ পরিবহনে একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুণ্ড আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রতিষ্ঠান দিদার আন্ড ব্রাদার্সের (ড্যাব)।

স্ক্র‍্যাপ পরিবহনে অসাবধানতার বিষয়ে জানতে চাইলে দিদার আন্ড ব্রাদার্সের একজন ট্রাক চালক বলেন, ‘রি–রোলিং মিল ড্যাবকে টন প্রতি স্ক্র‍্যাপ ডেলিভারির টাকা দেয়। ড্যাবের গাড়ি ১২ টনের জায়গায় ২০ টন স্ক্র‍্যাপ ডেলিভারি দিলে অতিরিক্ত ৮ টনের টাকা পায়, এতে যাতায়াতের তেল খরচও বেঁচে যায়। তাই ড্যাব ধারণ ক্ষমতার বাইরে মালামাল আনা-নেওয়া করে। আমরা শুধু তাদের চাকরি করি। আর তারা মালামাল ঢাকার জন্য আমাদের কিছু না দিলে আমরা কীভাবে ঢাকবো?’

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর ও ঘাট থেকে রি–রোলিং মিলের স্ক্র‍্যাপ লোড করে নগরের সড়কগুলোতে সবচেয়ে বেশি চলাচল করে ড্যাব চিহ্নিত ট্রাক ও ড্রাম ট্রাক। স্ক্র‍্যাপ ব্যবসায়ীদের মতে, জিপিএইচ, বিএসআরএম-এর মত রি–রোলিং মিল দিদার আন্ড ব্রাদার্সের ট্রাক ও ড্রাম ট্রাককে বেছে নেন কয়েকটি কারণে। দিনের বেলা চলাচল করলেও এই প্রতিষ্ঠানের ট্রাক ও ড্রাম ট্রাককে ট্রাফিক বিভাগের কখনোই ধরে না, ইচ্ছেমতো যেকোনো সড়ক দিয়ে এসব গাড়ি চলাচল করলেও প্রশাসনের বাধার মুখে পড়তে হয় না।

এর প্রধান কারণ প্রতিষ্ঠানটির মালিক একজন সংসদ সদস্য। তাছাড়া সেসব রি–রোলিং মিলের স্ক্র‍্যাপ যারা পরিবহন করে থাকে তারা জিপিএইচ, বিএসআরএম-এর মত ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান। ফলে ১২ টন ধারণ ক্ষমতার গাড়িতে দুই-তিন গুণ বেশি স্ক্র‍্যাপ পরিবহন করে কিংবা সড়কে স্ক্র‍্যাপ পড়ে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হলেও এবিষয়ে তাদের বলার কিংবা অভিযোগ করার সাহস কেউ পায় না। ট্রাফিক বিভাগও অনেকটা একই কারণেই পালন করে নিশ্চুপ ভুমিকা।

যদিও ট্রাফিক বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী, সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শহরে সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যদিও এই নিয়মের তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না। বেপরোয়া ট্রাক-লরির এতো সব অনিয়ম ও জানমালের ক্ষতিসাধন হলেও এবিষয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের। সাধারণ জনগণের মতে গুরুতর দুর্ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত প্রশাসনের ঘুম ভাঙবে না।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনারের (ট্রাফিক) সাথে একাধিকবার বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে বিষয়টি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমানের নজরে এসেছে। একুশে পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই খেয়াল করেছি খুবই অনিরাপদভাবে সড়কে স্ক্র‍্যাপ পরিবহন করা যানবাহন চলাচল করে। বিভাগীয় কমিশনের অধীনে রোড সেইফটি নামে একটি কমিটি আছে। চলতি মাসে এর একটি বৈঠক আছে। আমি বিষয়টি অবশ্যই বৈঠকে তুলবো। এ বিষয়ে একটি সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল বলেন, ‘বন্দরে ঠিকমতো জাহাজ ভিড়ানো যায় না। ফলে বিভিন্ন আউটার-ঘাট থেকে আমাদের স্ক্র‍্যাপগুলো গাড়িতে লোড করতে হয়। ফলে স্ক্র‍্যাপগুলো গাড়িতে সঠিকভাবে সেট করার সুযোগ থাকে না। অনেকটা বাধ্য হয়েই এভাবে স্ক্র‍্যাপগুলো পরিবহন করতে হয়।’

উন্মুক্তভাবে স্ক্র‍্যাপ পরিহনের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘স্ক্র‍্যাপগুলো অবশ্যই ঢেকে আনা প্রয়োজন। ঢেকে আনলে কোটি কোটি টাকার স্ক্র‍্যাপ চুরি হওয়ার ঘটনাও ঘটতো না। কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা এটা করতে পারছি না। স্ক্র‍্যাপগুলো ঠিকভাবে ডাম্পিং করতে পারলে রাস্তায় স্ক্র‍্যাপ পড়ার ঘটনাও ঘটতো না। এক্ষেত্রে আমাদের লোকসান হচ্ছে এবং জননিরাপত্তা হুমকির মুখেও পড়ছে। এ বিষয়ে আমরা কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি, আশা করছি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

বিএসআরএম গ্রুপ অফ কোম্পানির লিড অব ট্রেডিং অফিসার কাজী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘উন্মুক্ত স্ক্র‍্যাপ পরিবহনের যে বিষয়টি আপনি বললেন সেটা ঠিক আছে। বিএসআরএম ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু স্ক্র‍্যাপ পরিবহন করে থাকে। আমি এটা বলছি না যে বিএসআরএম এর গাড়ির স্ক্র‍্যাপ পরিবহনের জন্য কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে আমরা কিন্তু ত্রিপল দিয়ে ঢেকেই স্ক্র‍্যাপ পরিবহন করার চেষ্টা করি।’

ট্রান্সপোর্ট প্রতিষ্ঠান দিদার আন্ড ব্রাদার্সের (ড্যাব) কন্ট্রোল ম্যানেজার রাশেদ রবিন বলেন, ‘জিপিএইচ ইস্পাত, বিএসআরএমসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের চুক্তি রয়েছে। তাদের স্ক্র‍্যাপ আমরা বহন করি। এক্ষেত্রে অনেক গাড়ি ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। যেসব গাড়ি ঢাকা হয় না সেক্ষেত্রে বন্দর কিংবা ম্যানেজমেন্টের গাফিলতি থাকতে পারে। কিন্তু স্ক্র‍্যাপবাহী গাড়ি ত্রিপল দিয়ে ঢাকার নির্দেশনা আমাদের দেওয়া আছে।’

উন্মুক্ত স্ক্র‍্যাপ পরিবহনের দায় গাড়ির চালক ও হেলপারের উপর চাপিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকসময় গাড়ির চালক ও হেলপারের অসাবধানতার কারণে হয়তো উন্মুক্ত ভাবে স্ক্র‍্যাপ পরিবহন করা হয়ে থাকে। এছাড়া বেশি ট্রিপ দেওয়ার জন্যও গাড়ি ওভারলোড করে স্ক্র‍্যাপ পরিবহন করে থাকে। আর স্ক্র‍্যাপ ঢেকে না আনার ফলে বেশিরভাগ সময়ই স্ক্র‍্যাপ চুরি হয়ে যায়। বিষয়টা আমাদের জন্যও সুখকর নয়।’ এবিষয়ে ভবিষ্যতে নজরদারি করার কথাও জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের একটা রুট ম্যাপ দিয়ে দেয়, আমরা সেই অনুযায়ী মালামাল আনা-নেওয়া করি। তবে যেহেতু বিষয়টা আমাকে জানিয়েছেন আমি অবশ্যই আমাদের কর্তৃপক্ষকে জানাবো। এবং স্ক্র‍্যাপবাহী ট্রাক-ড্রাম ট্রাক ত্রিপল দিয়ে ঢেকে মালামাল পরিবহনের বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো। আশা করছি দ্রুত এ বিষয়ে আপনারা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পারবেন।’