সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

আইআইইউসিতে অপকর্ম ঢাকতে ট্রাস্টি চেয়ারম্যান নদভীর নোংরা খেলা

প্রকাশিতঃ ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন


চট্টগ্রাম : আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি)-এ নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের ঘটনায় প্রতিবেদন প্রকাশ করায় একুশে পত্রিকার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ও কুৎসা রটনা করে সংবাদ প্রকাশ করেছে চট্টগ্রামে অপসাংবাদিকতার জন্য কুখ্যাত একটি ওয়েবসাইট।

দৈনিক পত্রিকা হিসেবে বের করার অনুমোদন নিয়েও ছাপা পত্রিকা বের না করায় কয়েক মাস আগে কথিত পত্রিকাটির ঘোষণাপত্র বাতিলের জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কাছে সুপারিশ করেছিল চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এখনো ঘোষণাপত্র বাতিল হয়নি।

এই সুযোগে কথিত দৈনিক পত্রিকাটির ওয়েবসাইটে অপসাংবাদিকতা চলে আসছে; এ নিয়ে অবশ্য অসংখ্য মামলাও করেছেন ভুক্তভোগীরা।

গত ৪ সেপ্টেম্বর সরকার নিবন্ধিত অনলাইন সংবাদমাধ্যম একুশে পত্রিকায় ‘আইআইইউসিতে ‘নদভী-নিয়মে’ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের হিড়িক!’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এতে পরীক্ষায় অসদুপায়ের দায়ে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা ছাড়াই আইআইইউসিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া ও ‘সাতকানিয়া-লোহাগাড়া কোটায়’ দুই শতাধিক নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। প্রতিবেদনটিতে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য ছিল, যারা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতার বিবরণ দিয়ে নানা অভিযোগ করেছিলেন।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর নানা মহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থাও অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে নামছে।

এই প্রতিবেদনের বিষয়ে দ্বিমত থাকলে একুশে পত্রিকার অফিসে ‘প্রতিবাদলিপি’ পাঠিয়ে অভিযোগের বিষয়ে আরও বিস্তারিত বক্তব্য প্রদানের সুযোগ আইআইইউসির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর ছিল; কিন্তু সেটি না করে ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে অপসাংবাদিকতার জনক হিসেবে ব্যাপক পরিচিত একটি ওয়েবসাইটে বিবৃতির নামে মিথ্যা, বানোয়াট, মানহানিকর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করানো হয়েছে।

আইআইইউসির একাধিক শিক্ষক একুশে পত্রিকাকে অভিযোগ করে জানিয়েছেন, বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর ইশারায় প্রতিষ্ঠানটির বেতনভুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তারা বিবৃতির নামে একুশে পত্রিকার বিরুদ্ধে অপবাদ ও কুৎসা রটানোতে বাধ্য হয়েছেন।

এ বিষয়ে একুশে পত্রিকার একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আইআইইউসির বেতনভুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিবৃতির নামে মিথ্যা অভিযোগ করে একুশে পত্রিকার সম্পাদকের চরিত্রহনন করা হয়েছে। এমনকি দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ এস আলম, কেএসআরএমের নাম ব্যবহার করে পর্যন্ত মিথ্যাচার, প্রতারণা করা হয়েছে। যা আমাদের হতবাক করেছে।’

‘কথিত বিবৃতিতে দাবি করা হয়, আইআইইউসি প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন ব্যক্তিকে অনৈতিকভাবে চাকরি দিতে তদবির করেছিলেন সম্পাদক। অথচ অভিযোগটি অসত্য। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর সুপারিশ করা একটি সিভি এমপি নদভীর অনুরোধে তার হাতে পৌঁছে দিতে তার রূপালী আবাসিকের বাসায় গিয়েছিলেন একুশে পত্রিকা সম্পাদক।’

কথিত বিবৃতির নামে মিথ্যাচার করে আরও বলা হয়েছে, “একুশে পত্রিকা সম্পাদক তার নিজের শারীরিক অসুস্থতার জন্য একাধিকবার সাহায্য চাওয়ার পর আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী প্রতিষ্ঠিত আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তাকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন।”; এই অভিযোগটিও সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা চ্যালেঞ্জ করছি এবং এটা তাদেরকে প্রমাণ করতে হবে।

একুশে পত্রিকা সম্পাদককে নিয়ে মিথ্যাচারের বিষয়ে প্রমাণ চাইলে কথিত বিবৃতিদাতা ও আইআইইউসির উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, ‘আমি শুধু নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলেছি। বৈধভাবে নিয়োগ হয়েছে, এটা বলেছি শুধু। বিবৃতিতে অন্যান্য যে বিষয়গুলো এসেছে, সেগুলো আমার বক্তব্য নয়।’

এদিকে আমরা দেখে আসছি, নিজের দুর্নীতি আড়াল করার জন্য সবসময় অন্যকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির’ ট্যাগ লাগিয়ে দিচ্ছেন আইআইইউসির হর্তাকর্তারা। অথচ প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর বিরুদ্ধেই আছে আওয়ামী খোলসে জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের বিস্তর অভিযোগ। যেন ভূতের মুখে রাম নাম!

সম্প্রতি জামায়াতের করায়ত্ব থেকে উদ্ধার করা আইআইইউসির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ নদভী ও ট্রাস্টি সদস্যের পদ নদভীর স্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য ও একাধিকবার জামায়াতের এমপি প্রার্থী প্রয়াত মুমিনুল হক চৌধুরীর মেয়েকে দেওয়াটাকেও ভালো মনে করছে না সচেতন মহল। তারা বলছেন, আইআইইউসির মূল দায়িত্বে মানুষের পরিবর্তন হয়েছে বটে, আদর্শিক চেতনার পরিবর্তন হয়নি। কারণ যতই বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা বলে মুখে ফেনা তুলুক; নদভী দম্পতির অন্তরে এখনো পেয়ারা পাকিস্তান, জামায়াতপ্রীতি।

অভিজ্ঞ মহল বলছেন, পরিতাপের বিষয় হচ্ছে তারাই এখন বড় সনদদাতা। তারাই জামায়াতকে আওয়ামী লীগ বানাচ্ছে, আওয়ামী লীগকে জামায়াত বানাচ্ছে। দেশের বৃহত্তম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে নদভী দম্পতি নিজেদের পারিবারিক সম্পত্তি মনে করছেন। তাদের ইশারা ছাড়া সেখানে কিছুই হতে পারছে না। ভিসি-প্রোভিসিরা যেন নিধিরাম সর্দার। আইআইইউসি প্রসঙ্গে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন প্রভাবশালী নেতা ট্রাস্টি চেয়ারম্যান এমপি নদভীকে ইঙ্গিত করে একুশে পত্রিকাকে বলেছিলেন, ‘হি ইজ ইন অ্যা বিগ প্রবলেম’।

এমপি নদভী ১৯৯৫ সাল থেকে সেই সময় জামায়াতের দুর্গ হিসেবে পরিচিত আইআইইউসিতে অধ্যাপনা করে আসছেন। অধ্যাপনা শুরুর সময় থেকে তিনি আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত হন। নদভীর জামায়াত-কানেকশন নিয়ে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর তৃণমূলের সাথে সম্পর্ক নেই নদভীর, দলীয় প্রার্থী চান সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আ.লীগ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিভয়েস।

ওই প্রতিবেদনে নদভীকে নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর গোলাম আজমের একটি প্রশংসাপত্রের ছবি প্রকাশ করে উল্লেখ করা হয়, “সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের কাছে ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের একটি স্যুভেনিয়র হাতে এসেছে, যেখানে নদভীর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের আমীর কাজী হোসাইন আহমদ, পাকিস্তানের জামায়াত নেতা আবদুল গাফফার, জামায়াত ইসলামীর সাবেক আমীর মতিউর রহমানসহ জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের একান্ত সাক্ষাতের ছবি রয়েছে।

সেখানে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর গোলাম আজমের একটি প্রশংসাপত্রও পাওয়া যায়। যেখানে গোলাম আজম নদভীকে একজন বিজ্ঞ, জ্ঞানী ও উদীয়মান যুবক হিসেবে উল্লেখ করেন। সেখানে বলা হয়, ‘শেখ আবু রেজা নদভী। তিনি আমার পরিচিত। আমি জানি, তিনি একজন জ্ঞানী, বিজ্ঞ ও উদীয়মান যুবক। বিশ্বে বিশুদ্ধ আক্বিদায় বিশ্বাসী আলেম সমাজের মধ্যে তাঁর যথেষ্ট পরিচয় রয়েছে। আমি তার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি, মহান আল্লাহ যেন তাকে আরো বেশি ইসলামের খেদমত করার সামর্থ্য দেন এবং তার ইহ ও পরকালীন কল্যাণ কামনা করছি- প্রফেসর গোলাম আজম, আমীর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ।

জানা যায়, এ স্যুভেনিয়রের ছবি-ডকুমেন্টগুলো আগের। যখন নদভী ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত হন। এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নদভী মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফান্ড সংগ্রহ করেনে। মূলত জামায়াতে ইসলামীর পরিচয়ে তিনি এ দাতব্যমূলক এনজিওর সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছিলেন।”

নদভীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ নিয়ে নয়ছয়, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে এলাকার কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করা, স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিপরীতে অবস্থান নেয়া, গাড়িতে ঢিল মারায় এক মানসিক প্রতিবন্ধী মহিলাকে দেহরক্ষী দিয়ে মারধরসহ নানা অভিযোগের বিবরণ উঠে আসে সিভয়েসের “তর্কে বিতর্কে এমপি নদভী!” শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদনেও।

এছাড়া ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ‘আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন নদভী’ শিরোনামে প্রথম আলোর একটি বিশেষ প্রতিবেদনে নদভীর জামায়াত কানেকশানের নানা তথ্য তুলে ধরা হয়।

বিদেশে অবস্থানের কারণে এসব অভিযোগের বিষয়ে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।