চট্টগ্রাম : পাহাড়ধস ও বন্যায় রাঙ্গুনিয়ায় হতাহতদের পরিবারের কান্না থামাতে গিয়ে নিজেই কাঁদলেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও স্থানীয় সাংসদ ড. হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) বিকেলে রাঙ্গুনিয়া পাহাড়ধসে হতাহতদের কান্না থামাতে নিজেই ছুটে যান এই নেতা। নেতাকে কাছে পেয়ে মা-বাবা ও ভাইহারা এক যুবক অঝোরে কেঁদে উঠেন।
এসময় ওই যুবককে বুকে জড়িয়ে শান্তনা দিতে গিয়ে চোখের জল সংবরণ করতে পারেননি; নিজেই কাঁদলেন ড. হাছান মাহমুদ। এই দৃশ্য দেখে কাঁদলেন সাথে থাকা অনেকেই। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া মানবিক দৃশ্যটির অবতারণা হয় হোছনাবাদ এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটায়।
হৃদয়বিদারক এই দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী হাফেজ নামের বয়স্ক এক লোক বলে উঠেন, প্রকৃত নেতা এমনই। মানুষের কান্নায় যে নেতার চোখ দিয়ে অজান্তে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে সেই তিনিই নেতা। তিনি যে (ড. হাছান মাহমুদ) আমাদের সত্যিকার নেতা, রাঙ্গুনিয়াবাসীর প্রকৃত অভিভাবক সেটা আজ আবারও প্রমাণ হলো।
ড. হাছান মাহমুদের চোখে যিনি জল এনেছেন পাহাড়ধস ও পানির স্র্রোতে তলিয়ে গিয়ে তার বাবা-মা ও এক ভাই মারা গেছেন। ৫ সদস্যের পরিবারে এখন অবশিষ্ট আছেন তিনি ও তার এক ছোটবোন।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ড. হাছান মাহমুদ এমপি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর নেমে সোজা রাঙ্গুনিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হন। হোছানাবাদ, ইসলামপুর, রাজানগর, পারুয়া ইউনিয়নের পাহাড়ধস ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক খোঁজ নেন। এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোতে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী প্রাপ্তির বিষয়টি তদারকি করেন। তিনি ধৈর্য্য ও মনোবল না হারিয়ে সবাইকে এই দুর্যোগপরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানান।
ঘটনার পর থেকে রাঙ্গুনিয়া আওয়ামী পরিবারের লোকজন যেভাবে হতাহতদের উদ্ধার থেকে দাফন পর্যন্ত পাশে দাঁড়িয়েছেন, নিজ নিজ উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন তাদের প্রশংসা করে দুর্যোগকবলিত এই লোকগুলো ঘুরে না দাঁড়ানো পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ রাঙ্গুনিয়ার সর্বস্তরের মানুষকে পাশে থাকার অনুরোধ জানান এই নেতা।
এসময় সারাদেশে দুর্যোগকবলিত মানুষের পাশে না দাঁড়ানোয় তিনি বিএনপির তীব্র সমালোচনা করেন। বলেন, যে কোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই পাশে থাকেন, নিজেদের সর্বোচ্চ নিয়ে ছুটে যান। পক্ষান্তরে বিএনপির নেতাকর্মীরা টেলিভিশনের পর্দায় দুর্যোগ নিয়ে রাজনীতি করেন, ছবক দেন। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ভোরে পাহাড়ধস ও বন্যায় রাঙ্গুনিয়ায় নারী-শিশুসহ ২৭ জন মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন শতাধিক। সাথে সাথে নিহত প্রতি পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার ও আহত পরিবারগুলোকে ৫ হাজার টাকা করে ত্রাণসহায়তার ব্যবস্থা করেন ড. হাছান মাহমুদ।
এছাড়া ওদিনই নিজের ফেসবুক ও পত্রিকান্তরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্বান জানান। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার থেকেই আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মী স্ব স্ব অবস্থান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। তারা সরকারি ত্রাণসহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার সরবরাহ, সেহেরির ব্যবস্থাসহ নানাভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।